আপনি নিশ্চয় বহুবার তেলাওয়াত করেছেন সূরা ইয়া-সীন অত্যান্ত সুমধুর উচ্চারণে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন এর অর্থসমূহ? কিংবা কখনো কি জানতে চেয়েছেন এই সূরার তাৎপর্যটুকু? নিশ্চয় না। তা শুধু পাঠ করেছেন নির্বিঘ্নে। কারণ আমাদের ধারণা এগুলো পাঠ করে যাওয়াই এক বিরাট ফজিলত। কিন্তু যদি একটু সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন এর অর্থটুকু, তাহলে হয়তো অনেক প্রশ্নের উদয় হবে আপনার মনের পাতায় পাতায়।
বিজ্ঞানের অভিমতে আমরা জানি যে সূর্য তার নিজ অক্ষাংশে স্থির থাকে আর পৃথিবী তাকে প্রদক্ষিণ করে ধীরে ধীরে। কিন্তু কোরআনে পাওয়া যায় এর বিপরীত চিত্র। দেখুন তবে কি বলা হয়েছে কোরআনের আয়াতে।
وَٱلشَّمْسُ تَجْرِى لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ (٣٨)
সূরা ইয়া-সীন ৩৬: ৩৮ আয়াত
বাংলা অনুবাদঃ “আর সূর্য নিজ কক্ষপথে চলতে থাকে। এটা মহা প্রতাপশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ,” আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এভাবে- আবূ যার (রাফিঃ) রিওয়াত করেন যে, (একদা) আমি সূর্যাস্তের সময় নবী এর সাথে মাসজিদে ছিলাম। তিনি বললেনঃ আবু যার, তুমি কি জানো, সূর্য কোথায় অস্ত যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ সূর্য গিয়ে আরশের নীচে সিজদায় পড়ে। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “সূর্য তার কক্ষপথে বিচরণ করে। এটা মহাপরাক্রমশালী সুবিজ্ঞ সত্তার নির্ধারিত (নিয়ম)।” সহীহ্ আল-বুখারী, ৪র্থ খন্ড, আধুনিক প্রকাশনী, ৫২৫ পৃষ্ঠা, ৪৪৩৮ নং হাদিস)।
এবার আপনিই বিবেচনা করুন সূর্য কোথায় কোন্ আরশের নীচে সিজদায় পড়ে থাকে? এহেন অভিনব ভূলটি কি আল্লাহ করতে পারেন? নিশ্চয় না। তবে কোন্ অথর্ব বৈজ্ঞানিক করলো এই ভুলটি? সূর্য কি চন্দ্রের পেছনে ছুটে চলেছে যে তাকে ধরে ফেলবে একদিন? কোন্ সে ব্যক্তি যে পর্যবেক্ষক করেছে সূর্য ও চন্দ্রের নিজস্ব কক্ষপথের চলাচল? আল্লাহ কি জানেন না যে, এইসব কিছু হয়ে থাকে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করার কারণে? পৃথিবী সূর্যের মধ্যাকর্ষণ শক্তিতে ঝুলে রয়েছে আর আমরা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তিতে ঝুলে রয়েছি। কিন্তু কোরআনের কোথাও বলা হয় নাই যে, পৃথিবী তার নিজস্ব কক্ষপথে সূর্যের চারিদেকে বিচরণ করছে। এই সাধারণ তথ্যটি কি কোরআন লেখকের অজ্ঞাত?
এবারে ৩৯ ও ৪০ আয়াতটিও সংযোজন করতে চাই যা সত্যি অভিনব।
وَٱلْقَمَرَ قَدَّرْنَـٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلْعُرْجُونِ ٱلْقَدِيمِ (٣٩) لَا ٱلشَّمْسُ يَنۢبَغِى لَهَآ أَن تُدْرِكَ ٱلْقَمَرَ وَلَا ٱلَّيْلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ (٤٠)
বাংলা অনুবাদঃ ৩৯ আমি চন্দ্রের জন্য নির্দ্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মত হয়ে যায়। ৪০ সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাত্রিও দিনের পূর্বে আসতে পারে না, প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে।
এটা কি প্রাচীন বিশ্বাসের প্রতিফলন নয়? এটা কি নয় কোন পৌরাণিক কাহিনীর মতবাদ? আজকের যুগে এসব কথা যে কেউ উড়িয়ে দেবে হাস্যচ্ছলে অনায়াসে। তাহলে কিভাবে তা হতে পারে কোরআন, হাদীসের কথা?
দেখুন, ভাবুন আর বের হয়ে আসুন পৌরাণিক কাহিনীসমূহ থেকে।