You are currently viewing ইসলামে মাযহাবের সংযোজন ও এর কীর্তিকলাপ

ইসলামে মাযহাবের সংযোজন ও এর কীর্তিকলাপ

  • Post author:
  • Post last modified:September 25, 2022

কোরআনের আবির্ভাব, শিক্ষা ও এর বিকৃতির পাশাপাশি আরও একটি বিষয় গুরূত্বপূর্ণ ইসলাম অনুসারীদের জন্য তা হলো ইসলামী মাযহাব। ইসলামী মাযহাব ইসলামের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আর তা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।

যদিও মাযহাবের ব্যাপারে অনেকের মতপার্থক্য রয়েছে, তবুও তা লঙ্ঘন করার উপায় নেই। কোরআন ও হাদীসের কোথাও মাযহাব পালনের কথা উল্লেখ নাই। অথচ তা পালনের জন্য বেশ বাধ্যবাধকতা রয়েছে আমাদের গুণধর ইসলাম বিশারদদের মতে। এ বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা প্রয়োজন।

ইসলামে মাযহাব ও ইমামদের আধিপত্যঃ ইসলামে ‘মাযহাব’ অর্থ চলার পথ। কিন্তু অনেকের মতে মাযহাব অর্থ মত ও পথ উভয়ই। অর্থাৎ ইসলামী বিশ্বে যত মত ও পথ রয়েছে সবই মাযহাব। ইসলাম বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইমাম আবু হানিফার মত ও পথ হানাফী মাযহাব। ইমাম মালেকের মত ও পথ মালেকী মাযহাব। ইমাম শায়েফীর মত ও পথ শাফেয়ী মাযহাব। আর ইমাম আহসাদ বিন হান্বলের মত ও পথ হাম্বেলী মাযহাব। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাযহাব কোন্‌টি সে কথা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেন না। প্রশ্ন হলো কে কোন্‌ মাযহাব অনুসরণ করবে বা করা উচিৎ, ব্যাপারটি আজো অমিমাংশিত।

মাযহাবের উৎপত্তি ও বিস্তৃতিঃ মাযহাবের উৎপত্তি কখন কোথায় শুরু হয়েছে সে কথা কেউ বলতে পারেন না। যদিও কথিত আছে যে, এর আসল উৎপত্তি নবম-দশম শতাব্দীতে হলেও এর বিস্তৃতি ঘটে বারো শতাব্দীতে। তবে এ কথা সত্য যে, উল্লেখিত ইমামদের নামে প্রচলিত মাযহাবের অস্তিত্ব তাদের জীবদ্দশায় ছিল না। বস্তুতঃ ইমামদের ভক্তরাই তা চালু করেছেন। আর এইসব মাযহাব অনুসারীদের মধ্যে প্রচুর মত পার্থক্য রয়েছে।

ইমামদের জন্ম বৃত্তান্তঃ হযরত ইমাম আবু হানিফার জন্ম ৮০ হিজরীতে এবং মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে। হযরত ইমাম মালেকের জন্ম ৯০ হিজরীতে এবং মৃত্যু ১৭৯ হিজরীতে। হযরত ইমাম শাফেয়ীর জন্ম ১৫০ হিজরীতে এবং মৃত্যু ২০৪ হিজরীতে। হযরত ইমাম আহমাদ বিন হান্বলের জন্ম ১৬৪ হিজরীতে ও মৃত্যু ২৪১ হিজরীতে।

যেদিন ইমাম আবু হানিফার মৃত্যু হয়েছে সেদিনই ইমাম শাফেয়ীর জন্ম হয়েছে। ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর দুইশত পঞ্চাশ বছর পরে তার মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। প্রশ্ন হলো এইসব মাযহাব কি মুসলমানদের জন্য ফরজ? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কোরআন সুন্নার কি হবে? যদি নাই হয়ে থাকে তাহলে তা অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই কি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছি না?

স্বভাবতই প্রশ্ন হতে পারে ইসলাম তাহলে কোন্‌ পথে চলেছে? কোন্‌ মাযহাব অনুসরণকারীরা প্রকৃত মুসলমান? আর কোন্‌ মাযহাবের অনুসরণকারীরা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন?

এইসব মাযহাবের উৎপত্তি ও বিস্মিৃতি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলিতে প্রচলিত থাকলেও সুদূর প্রাচ্যের দেশসমূহে রয়েছে অন্য আরেক ধরণের মাযহাব ও তার অনুসারী।

ইসলামী মাযহাব অনুসারীদের মত পার্থক্য

হযরত ইমাম আবু হানিফার শতকরা প্রায় ষাট ভাগ ফতোয়ার বিরোধী ছিলেন তার প্রিয় ছাত্রবর্গ ইমাম ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম জুফার। তবুও কি তা পরিহার করা সম্ভব হয়েছে? নিচের নমুনাগুলি একটু লক্ষ্য করুনঃ

১) যে কোন ভাষায় নামাযের সূরা পড়লে ইমাম আবু হানিফার মতে উত্তম যদিও সে ব্যক্তি আরবী ভাষা জানে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে তা না জায়েয। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ১০২ পৃষ্ঠা)।

২) নামাযে রুকু থেকে উঠে রাব্বানা লাকাল হাম্‌দ বলা ইমাম আবু হানিফার মতে নাজায়েয কিন্তু ইমাম ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে জায়েয। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ১০৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৩) কুয়ার ভিতর ইঁদুর পরে মরে গেলে ঐ কুয়ার পানি দ্বারা অযু করে নামায পড়লে ইমাম আবু হানিফার মতে নামায হবে কিন্তু শাগরেদদ্বয়ের মতে নামায হবে না। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ৪৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৪) রোগ মুক্তির জন্য হারাম জানোয়ারের প্রস্রাব পান করা ইমাম আবু হানিফার মতে হারাম কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে হালাল। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ৪২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৫) নবিজের মদের দ্বারা অযু করা ইমাম আবু হানিফার মতে জায়েয কিন্তু ইমাম মুহাম্মদের মতে নাজায়েয। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৪৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৬) ঠান্ডার ভয় হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়া ইমাম আবু হানিফার মতে জায়েয, কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে নাজায়েয। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৪৯ পৃষ্ঠার দ্রষ্টব্য)।

৭) আল্লাহ তা’আলা কোরআনে যে সকল মেয়েদের বিবাহ করা হারাম করেছেন সে সকল মেয়েদেরকে কেউ বিবাহ করলে ও যৌন ক্ষুধা মিটালে ইমাম আবু হানিফার মতে কোন হদ (শাস্তির) প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে হদ (শাস্তি) দিতে হবে। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ৫১৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৮) কোন ব্যক্তি যদি কোন স্ত্রীর মল দ্বারে যৌন ক্ষুধা মিটায় তবে ইমাম আবু হানিফার মতে কোন কাফ্‌ফারা (শাস্তি) প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইমাম মুহাম্মদের মতে কাফ্‌ফারা (শাস্তি) দিতে হবে। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ৫১৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৯) ইমাম সাহেব যদি কোরআন হাতে নিয়ে নামাযের কেরাত পড়ে তবে ইমাম আবু হানিফার মতে নামায নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে নামায নষ্ট হবে না। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ১৩৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১০) যদি নফল নামায আট রাকায়াত এক সালামে পড়ে তবে ইমাম আবু হানিফার মতে জায়েয হবে কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে চার রাকায়াতের বেশী পড়লে জায়েয হবে না। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ডের ১৪৭ পৃষ্ঠা)।

১১) যদি কোন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আরম্ভ করে যদি কোন কার‌ণ ছাড়াই বসে নামায আদায় করে তবে ইমাম আবু হানিফার মতে নামায হয়ে যাবে কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে নামায হবে না। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ১৫০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১২) ইমাম আবু হানিফার মতে নামাযে সিজদার সময় নাক অথবা কপাল যে কোন একটি মাটিতে ঠেকালেই নামায জায়েয হবে। কিন্তু মুহাম্মদের মতে জায়েয হবে না। কপাল ‍নাক ‍দুটোই ঠেকাতে হবে। (হিদায়ার ১২৯৯ হিজরীর মোস্তাফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৯০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৩) শরাব পানকারীর মুখের দুগর্ন্ধ বিদূরিত হওয়ার পর সে যদি স্বীকার করে যে আমি শরাব পান করেছি, তাহলে ইমাম আবু হানিফার মতে তার প্রতি হদ (শাস্তি) জারী করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু ইমাম মুহাম্মদের মতে তা ওয়াজিব হবে। (হিদায়ার ১২৯৯ হিজরীর মোস্তাফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৫০৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৪) মদখোরের, মুখের দুগর্ন্ধ দূরীভুত হওয়ার পর সাক্ষীরা যদি বলে যে, হ্যাঁ সে মদ খেয়েছে, তাহলে ইমাম আবু হানিফার  মতে তার পর হদ (শাস্তি) জারী করা ওয়াজিব হবে না। কিন্তু মুহাম্মদের মতে হদ ওয়াজিব হবে। (হিদায়ার ১২৯৯ হিজরীর মোস্তাফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৫০৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৫) ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘোড়ার মাংসকে হালাল বলেছেন, কিন্তু ইমাম আবু হানিফা মকরূহ মনে করেন। ইমাম মুহাম্মদ বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফার এই কথাটা জানিনা কারণ বহু হাদীসে উল্লেখ আছে যে ঘোড়ার মাংস হালাল। (কিতাবুল আসার; ইমাম মোহাম্মদ দ্রষ্টব্য)।

১৬) এক চতুর্থাংশ রান (জানু) খুলে নামায পড়া ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদের মতে জায়েয, কিন্তু আবু ইউসুফের মতে নাজায়েয। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৭) তাকবীরে তাহরীমায় আল্লাহ আকবার না বলে সুবহানাল্লাহ্‌ আর্‌ রহমান বলে নামায আরম্ভ করা ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদের মতে জায়েয কিন্তু আবু ‍ইউসুফের মতে নাজায়েয। (হিদায়ার ১০৪১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ড ১০১ দ্রষ্টব্য)।

১৮) নামাযের ভিতর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, বললে ইমাম আবু হানিফা ও মুহাম্মদের মতে নামায নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু আবু ইউসুফের মতে নামায নষ্ট হয় না। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ড ১৩৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৯) বিধর্মী ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য যদি তায়ান্মুম করে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদের মতে জায়েয। কিন্তু আবু ইউসুফের মতে নাজায়েয। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ড ৫২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

২০) ফজরের দুই রাকআত সুন্নত যদি বাদ পড়ে যায় তবে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফের মতে সেই সুন্নাত পড়তে হবে না। কিন্তু ইমাম মুহাম্মদের মতে সেই সুন্নাত নামায বেলা দুপুরের পূর্বে পড়তে হবে। (হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ড, ২১৯ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

এ রকম অনেক পরস্পর বিরোধী ফতোয়া বিদ্যমান ইসলামের মাযহাব অনুসারীদের। এই ছোট্ট পরিসবে সবগুলি ফতোয়া দেওয়া সম্ভব নয়। তবে একটু অনুসন্ধান করলেই যে কেউ তা উর্দঘাটন করতে পারবেন অনায়াসে।

উল্লেখিত মাযহাব ছাড়াও কিন্তু জঘন্য ফতোয়া চালু রয়েছে মাযহাব অনুসারীদের মাঝে। এসবের কিছু নমুনা নীচে দেওয়া হলো।

মাযহাবীদের জঘন্যতম ফতোয়ার দৃষ্টান্ত

রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র করে সামান্য অংশ প্রবেশ করলেও উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়- তাতে বীর্যপাত হোক বা না হোক (সহীহ তিরমিযী)। অথচ সহীহ্‌ হাদীসের বিপরীতমুখী জঘন্যতম ফতোয়া এখনও মাযহাবীগণ চালু রেখেছেন তারই চিত্র পরিলক্ষীত হয় তাদের তরীকায়। পাঠকের জ্ঞাতার্থে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

১) ইমাম আবু হানিফার তরীকা অনুযায়ী চতুস্পদ জন্তু, মৃতদেহ অথবা নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র হয়ে কিছু অংশ প্রবেশ করলেও অযু নষ্ট হবে না। শুধু পুং লিঙ্গ ধৌত করতে হবে। (দুররে মুখতার অযুর অধ্যায়)।

২) যদি কোন লোক মৃত স্ত্রী লোকের অযথা চতুস্পদ জন্তুর স্ত্রী অংঙ্গে বা অন্য কোন দ্বারে রোযার অবস্থায় বলাৎকার করে তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। (শারহে বিকায়া, লক্ষৌ-এর ইউসুফী ছাপার ১ম খন্ড , জেলদের ২৩৮ পৃষ্ঠা)।

৩) আল্লাহ তা’য়ালা কোরআনে যে সকল মেয়েদেরকে বিবাহ করা হারাম করেছেন, যথা-মাতা, ভগ্নি, নিজের কন্যা, খালা, ফুফু ইত্যাদি স্ত্রী লোককে যদি কোন ব্যক্তি বিবাহ করে ও তার সঙ্গে সঙ্গম করে তাহলে ইমাম আবু হানিফার মতে তার উপর কোন হদ (শাস্তি) নাই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ৫১৬ পৃষ্ঠা, আলমহিরী মিসরী ছাপপ ২য় খন্ড ১৬৫ পৃষ্ঠা, বাবুল ওয়াতী ৪৯৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৪) বাদশাহ্‌ যদি জিনা করে তার কোন হদ (শাস্তি) নাই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ১ম খন্ড ৫২০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৫) বাদশাহ্‌ যদি কারো সাথে জোর পূর্বক জিনা (যৌন সঙ্গম) করে তবে আবু হানিফার মতে সেই ব্যক্তির উপর কোন হদের (শাস্তির) প্রয়োজন নাই। কিন্তু বাদশাহ ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি যদি জোর পূর্বক কারো সাথে জিনা করে তবে আবু হানিফার মতে সেই ব্যক্তির উপর হদ জারী করতে হবে। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ড ৫১৯ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৬) কোন ব্যক্তি যদি কোন মহিলার সাথে জিনা করতে থাকে এবং ঐ জিনার অবস্থায় যদি অন্য কেহ দেখে ফেলে আর জিনাকারী ব্যক্তি যদি মিথ্যা করে বলে এই মেয়েটি আমার স্ত্রী তাহলে উভয় জিনাকারীর উপরই হদের (শাস্তির) প্রয়োজন নেই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ১ম খন্ড ৫১৯ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৭) রমযান মাসে রোযার অবস্থায় যদি কেউ কোন মৃত দেহের সঙ্গে বা চতুস্পদ জন্তুর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করে এবং বীর্যপাত হয় তবুও কোন কাফ্‌ফারা (শাস্তি) ওয়াজির হবে না। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ১ম খন্ড ২১৯ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৮) রমযান মাসে রোযার অবস্থায় যদি কেউ মল দ্বারে সঙ্গম করে তবে ইমাম আবু হানিফার মতে কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না। (হিদায়া ১৪০১ হিজরী আশরাফী হিন্দ, ১ম খন্ড ২১৯ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৯) যদি কেউ ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে কুকুর যবেহ করে তার মাংস বাজারে বিক্রয় করে তবে অবশ্যই তা জায়েজ হবে। (শরহে বেকায়া ১ম খন্ড)।

১০) যদি কোন ইয়াহুদী মুসলমানকে কতল করে অথবা রাসূল (সাঃ) কে গালি দেয় অথবা মুসলমান মেয়ের সাথে জিনা করে তবুও তার জানমালের নিরাপত্তা নষ্ট হয় না এবং কতল, গালি ও জিনার প্রতিশোধ গ্রহণ করা চলবে না। (হিদায়া কিতাবুস সায়েব)।

১১) স্ত্রী নিদ্রিত ও পাগলিনী অবস্থায় তার স্বামী (রোযার অবস্থায়) যৌন মিলন করলে কাফ্‌ফারা লাগবে না। আর ইমাম আবু হানিফার ছাত্র যোফার বলেছেনঃ দুজনারই রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতওয়ায়ে কাফী খাঁ নত্তল কেশরী ছাপা ১ম খন্ড ১১০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১২) গম, যব, মধু জোয়ার হতে যে মদ প্রস্তুত করা হয় তা ইমাম আবু হানিফার মতে পান করা হালাল এবং এই সকল মদপানকারী লোকের নেশা হলেও ‘হদ’ (শাস্তি) দেওয়া হবে না। (হিদায়ার মোস্তাফায়ী ছাপা ২য় খন্ড ৪৮১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৩) আঙ্গুলি ও স্ত্রীলোকের স্তন মল-মূত্র দ্বারা নাপাক হয়ে গেলে, তিনবার জিব দিয়ে চেটে দিলেই পাক হয়ে যাবে। (দুরকে মোখতায়ের ৩৬ পৃষ্ঠায় বাবুল আনজাসে দেখুন)।

১৪) কেউ যদি পিতার কৃতদাসীর সাথে সহবাস (যৌন মিলন) করে তবে কোন শাস্তি নাই। (হিদায়া ১৪৯১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ১ম খন্ড ৫১৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৫) কোন স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে এবং মারা যাওয়ার দুই বৎসর পর সেই স্ত্রীর সন্তান হলে, তবে সেই সন্তান তার মৃত স্বামীরই হবে। (হিদায়া ১৪৯১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ১ম খন্ড ৪৩১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৬) কোন স্ত্রীলোক যদি কারো সাথে জিনা করে গর্ভবতী হয় এবং সেই জিনাকারিণী গর্ভবতী স্ত্রীকে কেউ যদি বিবাহ করে তবে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদের মতে জায়েয হবে। (হিদায়া ১৪৯১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ১ম খন্ড ৩১২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৭) স্বামী প্রবাসে রয়েছে, সুদীর্ঘকাল অতীত হয়েছে বহু বছর ধরে স্বামী ফিরেনি এ দিকে স্ত্রীর পুত্র সন্তান হয়েছে তাহলেও এই ছেলে জারজ হবে না সেই স্বামীরই ওরসজাত হবে। (বেহেস্তি জেওর ৪র্থ খন্ড ৪৪ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৮) পিতার পক্ষে পুত্রের দাসীর সঙ্গে যৌন মিলন করা সর্ববস্থায় হালাল। আরো যুক্তি দর্শানো হয়েছে যে, দাসী হচ্ছে পুত্রের সম্পদ আর পুত্রের সম্পদে পিতা পুত্র উভয় ব্যক্তিরই হক আছে। ফলে একই নারী দ্বারা উভয় নরের যৌন ক্ষুধা মিটানো হালাল। (নুরুল আনওয়ার ৩০৪ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১৯) নিজ স্ত্রী ভুলে অন্য কোন স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করে বসলে সেজন্য মোহরানা আদায় করতে হবে। এই সহবাস কোন দূষণীয় ব্যাপারে বলে গণ্য হবে না। এতে কেউই দায়ী হবে না। যদি এর ফলে সন্তান জন্মে তবে তার জন্ম অবৈধ হবে না। সে যথারীতি বৈধ সন্তান বলে গণ্য হবে এবং উক্ত ভুলে সহবাসকারী তার পিতা এবং গর্ভধারিণী তার মাতা হবে। ভুলবশে ঐরূপ সহবাস হয়ে গেলে স্ত্রীকে তিন মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সে স্ত্রী নিজ স্বামীর সাথে মিলিত হতে পারবে না। ২৬০ পৃষ্ঠা ৮ দ্রঃ নুরাণী নামায শিক্ষা- মৌঃ নূর মোহাম্মদ, দি তাজ পাবলিশিং হাউস, ৭ বি প্যারিদাস রোড ঢাকা-১ থেকে প্রকাশিত তারিখ ৩১ শে জুলাই ১৯৭৮ ইং)।

২০) যদি কোন ব্যক্তি পয়সার বিনিময়ে কোন নারীর সাথে জিনা করে, তবে আবু হানিফার বিধান মতে কোনই হদ (শাস্তি) নেই। (অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে যত বেশ্যাখানা রয়েছে সবই বৈধ্য। (জাখীরাতুল উকবা ও শারহে বিকায়ার হাশিয়া চাল্লিতে আছে। বিস্তারিত দেখুন “আসায়ে মুহাম্মাদী)।”

২১) নিশ্চয় হিদায়া কিতাবাখানা নির্ভূল ও পবিত্র কুরআনের মত। নিশ্চয় এটা তার পূর্ববর্তী রচিত শরীয়তের সকল গ্রন্থরাজিকে রহিত (বাতিল) করে ফেলেছে। (হিদায়া মোকাদ্দামা- আখেরাইন ৩য় পৃঃ হিদায়া ৩য় খন্ড, ২য় ভলিউম, পৃষ্ঠা ৪ আরবী মাদ্রাসার ফাজেল ক্লাসের পাঠ্য হিদায়া ভূমিকা পৃষ্ঠা ৬, আরাফাত পাবলিকেশন্স দ্রষ্টব্য)।

২২) কোরআন ও সহীহ্‌ হাদীসের স্পষ্ট বিরোধী মাসআলাহ্‌- চার মাযহাব চার ফরয। হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ও হান্বলী এই চার মাযহাব। (দেখুন বেহেস্তি জেওর স্ত্রী শিক্ষা ১০৪ পৃঃ ৪ দ্রঃ- আলহাজ্জ মৌলভী আব্দুর রহীম কোরআন মঞ্জিল লাইব্রেরী- বরিশাল)।

প্রচলিত এইসব মাযহাব সৃষ্টিকারী ও অনুসরণকারীরা যে কোন্‌ জগতের মানুষ তা তাদের উল্লেখিত মাযহাবগুলিতে পরিচয় মিলে। প্রকাশ্যে বা সংগোপনে মাযহাব অনুসারীদের তা অনুশীলন করতে দেখা যায় আমাদের দেশের আনাচে কানাচে। তাদেরই উসিলায় “হালালা” বা হিল্লা বিয়ে দেওয়ার প্রচলন আজো রয়ে গেছে এদেশের গ্রামে-গন্জে। ফলশ্রুতিতে অনেক সংসার ভেঙেছে, ভেঙেছে অসহায় দম্পতির বিবাহ বন্ধন আর ভালবাসার জরা-জীর্ণ ভিত্তি। সম্প্রতি আমাদের দেশীয় আইনে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে ঠিকই তবুও সর্বত্র এর প্রসার হয়নি তেমন।

আমার বিশ্বাস আর প্রত্যাশা যেন সাধারণ মানুষ তার নিজস্ব জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তায় আল্লাহর কালামের বিধান অনুধাবন করতে সক্ষম হবে আর সেইসাথে ধর্মান্ধতা বিদীর্ণ করে বেরিয়ে আসবে সত্যের মনোরম আলোয় ও মহান করুণাময়ের চরণতলে।

আসুন, আমরা নিজেরাই বিবেচনা করি আমাদের কি ইসলামী মাযহাব অনুসরণ করা উচিত নাকি আল্লাহর কালাম। আমাদের বিবেকের চৈতন্যে ভর করে এর উত্তর খুঁজে দেখি নিজেরাই। সেই সাথে বের হয়ে আসি ইসলামের জঘন্য শৃঙ্খল থেকে।

Leave a Reply