You are currently viewing আল্লাহ্‌র নামে ভন্ডামী করা আমাদের সতত স্বভাব

আল্লাহ্‌র নামে ভন্ডামী করা আমাদের সতত স্বভাব

  • Post author:
  • Post last modified:January 23, 2024

আমরা কেউ আসলে আল্লাহ্র কথা শুনি বা মানি না, যদিও কথায় কথায় আলহামদুল্লিয়াহ  বলতে কারো জুরি নেই। স্বভাববশতই আমরা তা প্রতিনিয়ত উচ্চারণ করি। কারো সাথে সৌজন্য বিনিময়কালে যেমন বলি “আলহামদুলিল্লাহ্” তেমনি কারো বিষয়ে প্রশংসা বাক্যে বলি “মাশা-আল্লাহ্” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার রহমতের গুনগান সেখানে প্রকাশ পায়।

বস্তুত: আমরা যতই আলহামদুলিল্লাহ্ বা মাশা-আল্লাহ্ বলতে অভাস্ত হই না কেন আমাদের ঈমানের দুর্বলতায় আমরা ক্রমশই আল্লাহ্ তায়ালার কাছ থেকে দূরে সরে থাকি। আর তা হয় আমাদের সতত স্বভাবের কারণেই।

এর একটি জলন্ত উদাহরণ দেওয়া যাক যেন তাতে আমাদের চৈতন্যের উদয় ঘটে, যেমন সুরা আল-ইমরানের তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে কোরআনের পূর্ববর্তী কিতাবের কথা, অথচ আমরা কি কখনো সেই আয়াতটি পড়ে দেখেছি? নিশ্চয়ই পড়েছি কিন্তু তার নির্দেশনা মানি নাই কিংবা ভিন্ন ব্যাখ্যা করে তা অনুশীলন থেকে বঞ্চিত রেখেছি নিজেদের।

যদি তা অনুশীলন করতাম তাহলে কি একটু চিন্তা করে দেখতাম না কি বলা হয়েছে সেখানে? কেনো বলা হয়েছে সে কথা? আমরা তো সবাই মুখে মুখে উচ্চারণ করি চারটি আসমানী কিতাবের কথা, অথচ কেউ কখনো পড়ে দেখার আগ্রহ দূরে থাকুক, সে বিষয়ে কখনো প্রশ্নই করিনা কাউকে, কিন্তু কেনো?

তাওরাত ও ইঞ্জিল তো আল্লাহ্র আসমানী কিতাব যা আমাদের দেওয়া হয়েছে জীবনের চলার পথের  দিক নির্দেশনা হিসেবে, আর নবীজিকে বলা হয়েছে তার সত্যায়নকারী। সেইসাথে তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। সুরা আল-ইমরান এর ৩-৪ আয়াত দ্রষ্টব্য। অথচ আমরা তা থেকে বিরত রয়েছি কেনো?

মানুষ তার নিজস্ব জ্ঞানের প্লাবনে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছে আল্লাহ্‌র কালামের কার্যকারিতাকে। আর সমস্ত অবাধ্যতার হাকিকতে বলে চলেছে আলহামদুল্লিয়াহ ।

আলহামদুল্লিয়াহ, মাশা- আল্লাহ্ কথাগুলো শুনতে ভালো লাগলেও আমাদের উচ্চারণে আর অবাধ্যতার প্রতাপে সেইসব সুমধুর শব্দগুলো আল্লাহ্‌র কাছে ব্যাঙ্গাত্বক  ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

আল্লাহ্‌র কালামের ন্যূনতম অবাধ্যতাই আল্লাহ্‌র বিপরীতে অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করে। আমরা কি সেকথা কখনো ভেবে দেখেছি নাকি শুধু মুখের সুবচন উচ্চারণে নিজের ধর্মীয় দাম্ভিকতাকে প্রকাশ করে চলেছি? একটু ভেবে দেখুন তো?

কোরআন শরীফের ২য় সুরা বাকারার প্রথমেই রয়েছে সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ দিক নির্দেশনা। সেখানে বলা  হয়েছে— “যা লিকাল কিতাবু লা রাইবা ফি।” অর্থাৎ ঐ সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নাই, এতে  রয়েছে পরহেযগারদের জন্য পথের দিশা। (ঐ কিতাব বলতে এখানে আহলে কিতাব বা পূর্ববর্তী  কিতাবকে বলা হয়েছে)। অর্থাৎ তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জিলের কথাই বলা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু অনুবাদক “যা” শব্দটিতে “হা—যা” শব্দের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। তারা বলেছেন এই সেই কিতাব, যা কোরআনকে বোঝায়, কিন্তু তাদের জানা উচিত “যা” মানে ঐ, আর “হা—যা” মানে এই। এই দুটি শব্দের মাঝে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে, রয়েছে বিশাল তারতম্য।

এখানে পরহেযগার বলতে বলা হয়েছে তাদের যারা আল্লাহ্র কালামে বিশ্বাস করে বা তাতে ঈমান এনেছে। অদৃশ্য বিষয়ে তারা আল্লাহ্র কালামনুযায়ী বিশ্বাস করে। কিন্তু আমরা মনে করি পরহেযগার মানে লম্বা দাড়ি-টুপি পরিহিত কোন ব্যক্তি যে নামায দোয়া পড়ে, আর ঝার-ফুক করে বেড়ায়।

বাহ্যিক আবরণের কোন সৌম্যতাই আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণ-যোগ্যতা পায় না। কেননা, মানুষের অন্তরে তাঁর দৃষ্টি, কি ঘটে চলেছে সেখানে সর্বদা তা তাঁর দৃষ্টির অগোচরে নেই। তাই তাঁর লক্ষ্য আমাদের সৌন্দর্যবর্ধিত কোন আবরণে নয়, বরং অন্তরের স্পন্দনে।

এসব কারণেই বলা যেতে পারে আমরা যদি তাঁর কালাম না পড়ে শুধুমাত্র কথায় কথায় আলহামদুলিল্লাহ্ উচ্চারণ করে বেড়াই তবে তা হবে এক নিশ্চিত ভন্ডামী আর নাফরমানী করা তার সাথে।

Leave a Reply