You are currently viewing বণী ইস্রাইল পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত জাতি

বণী ইস্রাইল পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত জাতি

  • Post author:
  • Post last modified:May 15, 2021

ণী ইস্রাইল বা ইস্রাইল জাতি কোরআন শরীফে একটি বিশাল অবস্থানে রয়েছে। এই জাতির বিষয়ে আল্লাহ্‌ তায়ালার বাণী অত্যান্ত পরিষ্কার। অথচ অনেক ওয়াজী মুসুল্লী এইসব আয়াতসমূহ বিকৃত করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে। তাদের বিবেক বর্জিত অজ্ঞানতা হেতু তারা কথিত জাল হাদীসের উপর নির্ভর করে অবাস্তব ফতোয়া জারি করে সত্যকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন। ফিত্‌না নির্ভর এইসব হুজুরেরা কোরআনকে একপাশে সরিয়ে রেখে গলাবাজি করে চলেছেন ওয়াজ মাহফিলে। এতে তাদের পরিচিতি বৃদ্ধি পেয়েছে সে কথা ঠিক কিন্তু কোরআনের বাণীকে উপেক্ষা করা বা অবজ্ঞার কারণে কখনো তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় নাই কিংবা পেতে হয় নাই শাস্তির দন্ডাদেশ। মানুষের কোমল, শান্ত মনকে তারা বিভ্রান্ত করেছেন অজস্র কথায় আর আত্নতৃপ্তি বোধ করেছেন অবিরাম।  এদের নিপুন গজলের সুর আর পরনিন্দায় ভরপুর সবকটি মাহ্‌ফিল। তারই স্রোতে ভেসে চলেছে আমাদের সাধারণ অভাগা ইসলাম অনুসারীরা।

আল্লাহর প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যূত হয়ে তাই মানুষ আজ ধর্মের অনুসারী হয়েছে, ধর্মগুরুদের অভিনব কারসাজিতে। আল্লাহর অনুসরণকারী হতে পারে নাই।

আমরা প্রায়শঃই গর্ব করে বলি যে, আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি এবং ইসলাম জগতের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। কিন্তু কোন্‌ তাত্তিক ভিত্তিতে তা বলি তা কেউ জানে না। আমাদের পরিচ্ছন্ন অবয়ব আর সুন্দর মৌন আবরণ দিয়ে নির্লজ্জ, নোংড়া অন্তরকে ঢেকে রেখে মুখে “আল্‌-হামদুলিল্লাহ্‌” উচ্চারণে ধার্মিকতার প্রস্রবন ধারায় কখনো গা ভাসিয়েছি আমরা সবাই। ক্ষণিকের জন্যে হলেও কেউ থমকে গিয়ে প্রশ্ন তোলে নাই কোরআনের অবিশ্বাস্য আয়াতগুলির ব্যাপারে যা অনিবর্চণীয় এক সত্যের দিক্‌ নির্দেশনা দিয়ে চলেছে। নিজ স্বার্থসিদ্ধির অভিলাষে আমরা শুধু কৃত্রিম ধার্মিকতায় পথ চলেছি অন্ধের মতো।

আসুন দেখা যাক বণী ইস্রাইলের ব্যাপারে কোরআন শরীফে কি বলে। এখানে বলা হয়েছে- “হে বণী ইস্রাইল! তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং আমিই তোমাদের উচ্চ মর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।” (সূরা বাকারা ২: ৪৭ আয়াত)।

47 يَـٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّى فَضَّلْتُكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ

পবিত্র কোরআনের বাণী যখন সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং “বণী ইস্রাইলকে” অনুগ্রহ প্রদান করেছেন এবং তাদের উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন সমগ্র বিশ্বের উপর তখন কিভাবে আমরা তার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে তাদের অভিসম্পাত করি অনবরত আমাদের ওয়াজ মাহ্‌ফিলে কিংবা খুত্‌বায়? এটা কি সাংঘাতিক এক সাংঘর্ষিক বিষয় নয়? আমরা কি আল্লাহ তায়ালার চেয়েও বেশী জ্ঞানবান? যদি আমাদের এই আয়াতের বিপক্ষে কথা বলতে হয় তাহলে কি তা আল্লাহর অমর্যাদা করার সামিল নয়?

মনগড়া ফতোয়ার বিশ্লেষণে অনেকেই সত্যকে হত্যা করেছেন ইতিমধ্যে। তবুও নিজের জ্ঞানের মহিমা বর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সত্যকে হজম করে নিজের ভ্রমটুকু শুধরে নেওয়া তাদের জন্য আষাঢ়ের গল্প সমতুল্য। এভাবেই সত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলেছে মিথ্যার অভিনব পৃষ্ঠপোষণ। এবার আরেকটি আয়াত দেখা যাক। এখানে বলা হয়েছে “হে বণী ইস্রাইল! তোমরা স্মরণ করো আমার সে নি’আমাতের কথা, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। বিশ্ববাসীর উপর আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি”। (সূরা ২: ১২২ আয়াত)।

122 يَـٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّى فَضَّلْتُكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ

আল্লাহ তায়ালা যদি স্বয়ং বলতে পারেন যে বণী ইস্রাইল বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্বলাভকারী জাতি, তাহলে আমরা তাদের কথায় কথায় গালাগালি করি কোন্‌ সাহসে? এহেন সত্য বাক্য উচ্চারণের সৎ সাহস বা সাহসিকতা কার আছে? কথায় কথায় আমরা যাদের কাফের ও ইহুদী-নাসারা, খ্রীষ্টান বলে গালাগালি করি আল্লাহ্‌ তাদেরকেই দিয়েছেন সর্বচ্চ নি’আমাত আর বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব। এটাই অবধারিত সত্য। এই সত্যটি গলাধঃকরণ করতে কন্ঠনালীতে কাঁটার উন্মেষ ঘটে।

ইস্রাইল জাতি মূলত: হযরত ইব্রাহীমের বংশধর। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে আল্লাহ অশেষ নি’আমাতের অধিকারী করেছিলেন তাঁর বিশ্বাস (ঈমান) ও বিশ্বস্ততার কারণে।

আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বিশ্ববাসীর কাছে নি’আমাতের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত করেছেন। তাঁর মধ্য দিয়েই বিশ্ববাসী আর্শীবাদপুষ্ট হয়েছে। সেই জন্যে আমরা যখন ঈস্রায়েল জাতি বা ইহুদী জাতিকে নির্দ্ধিধায় গালাগালি করি তা ইব্রাহীম (আঃ) এর উপরে বর্তায়।

বণী ইস্রাইল জাতির ব্যাপারে কোরআনে আরো বলা হয়েছে- নিঃসন্দেহে যারা বিশ্বাস করে এবং যারা ইয়াহুদী আর খ্রীষ্টান ও সাবেঈন- তাদের মধ্যে থেকে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। (বাকারাহ্‌ ২: ৬২ আয়াত)।

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلنَّصَـٰرَىٰ وَٱلصَّـٰبِـِٔينَ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًا فَلَهُمْ  أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ 62

আল্লাহর কি আশ্চর্য এক অঙ্গিকার এই বণী ঈস্রায়েল জাতির জন্যে যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। আর আমাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের বিচার আর ফুলসিরাতের পুল পার হওয়ার কঠিন পরীক্ষা?

আমি কোনদিন ‍শুনি নাই উল্লেখিত এইসব আয়াতসমূহ কোনো আলেম-ওলামা বা মৌ-লোভী হুজুরদের মুখে তাদের ধর্মের বয়ানে। বরং শুনেছি অজস্র মন্দ ভাষ্য বণী ঈস্রায়েল জাতির বিষয়ে। কোরআন যদি আল্লাহ তায়ালার কালাম হয়ে থাকে তাহলে সেখানে সাংঘার্ষিক কথা থাকতে পারে না। আল্লাহ কখনো কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন না, বরং আল্লাহর কতিপয় বান্দারা তাদের মর্জিমাফিক আল্লাহর কালামকে নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করে চলেছে আর সেই সাথে মানুষের শান্ত-কোমল অন্তরকে বিষিয়ে তুলেছে অসত্য আর কাল্পনিক তথ্যের বিকৃত ভান্ডারে।

সেজন্যে আমাদের সবার ‍উচিত নিজের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সত্যকে গ্রহণ করা, সেই সাথে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত অসত্যের নেকড়া দিয়ে ঘেরা বিবিধ কুসংস্কারের বিভৎস শিক্ষা। আল্লাহর কালামের কোন পরিবর্তন হয়না। পরিবর্তিত যেটুকু হয় তা হয় শুধুমাত্র ধর্মীয় ভন্ডামির নিষ্পেষিত হস্তের করতলে, কতিপয় অদক্ষ ধর্ম ব্যবসায়ীদের মনস্তাত্তিক বিক্ষিপ্ত চিন্তা- ভাবনার কারণে।  

আমাদের ইসলামী চিন্তাবিদগণ অন্য পথে চলতে অভ্যস্ত ও বিভিন্ন জটিলতায় সত্য বিকৃত করায় পারদর্শী। নতুবা কেনো তারা কোনদিন মুখ ‍খুলে উচ্চারণ করেন নাই যে কথাগুলি মানুষের চৈতন্যের অর্গল খুলে দিতে পারে নির্দ্দিধায়! তারা কোনদিন উচ্চারণ করেনা এই আয়াতসমূহ যা আমি নিয়ে আসছি আপনাদের নিজস্ব বিবেচনার অঙ্গনে। দেখুন তবে সূরা আল-ইমরান এর ৩৩, ৩৪ আয়াতে কি বলা হয়েছে?

এখানে বলা হয়েছে— 

    33 ۞ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰٓ ءَادَمَ وَنُوحًا وَءَالَ إِبْرَٰهِيمَ وَءَالَ عِمْرَٰنَ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ 
34 ذُرِّيَّةًۢ بَعْضُهَا مِنۢ بَعْضٍ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

বাংলা অনুবাদঃ “নিশ্চয় আল্লাহ নির্বাচন করেছেন আদমকে, নূহকে, ইব্রাহীমের বংশধরকে এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ববাসীর জন্য। তারা একে অন্যের সন্তান। আল্লাহ সবকিছুই জানেন”।  উল্লেখিত আয়াতে কি প্রতীয়মান হয় না আল্লাহ কোন্‌ বংশধরকে বা কোন্‌ সম্প্রদায়কে নির্বাচন করেছেন বিশ্ববাসীর জন্য? যদি তা পরিষ্কার হয়ে থাকে আমাদের বোধগম্যের পরিধিতে, তাহলে কথায় কথায় আমরা ইহুদী-নাসারাদের গাল-মন্দ করি কেনো? কিংবা আল্লাহর বাণীর বিপরীতে কুরাইশ বংশের প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধার অর্ঘ্য সাজাই কেন? এটা কি শিরক্‌ বা বি’দাত নয়? শিরক্‌ হোক বা না হোক, আমি জানি পুরোনো বদ্ধমূল ধারণা বিদীর্ণ করে সত্যকে গ্রহণ করাটা ইসলামী শিক্ষকদের নীতি বিবর্জিত। তারা পান ‍পাতা চিবিয়ে আঙ্গুলের মাথায় চুন নিয়ে ঘোরাঘুরি করবেন মদীনার আশে-পাশে তবুও নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে সত্য বাক্য উচ্চারণ করবেন না কোনদিন।

আমরা যদি ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাবো হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশ বিস্তার ঘটে ইসহাক (আঃ) এর মধ্য দিয়ে। ইসহাক (আঃ) এর পুত্র ইয়াকুব (আঃ) এবং ইয়াকুব (আঃ) এর পুত্রগণ (১২ টি গোষ্ঠি) ইস্রাইল নামে পরিচিত। তাদের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা একের পর এক কঠিন অভিশাপের দন্ডে মিসরীয়দের অভিশপ্ত করেছেন। তাদের কারণেই হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলে বাইশ লক্ষ ইয়াহুদী জাতিকে উদ্ধার করে নতুন এক দেশের উদ্দেশ্যে মরুভূমিতে চল্লিশ বছর পথ চলে ছিলেন।

তাদেরেই জন্যে আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে মান্না নামাক এক অজানা খাদ্য এই প্রিয় জাতিকে দিয়েছিলেন। এদেরই জন্যে মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছ থেকে দশটি শরিয়তের বিধান এনেছিলেন। সেখানে ছিল না কোনো কুরাইশ বংশের কিঞ্চিৎ চিহ্ন। তাদেরই কারণে আল্লাহ তায়ালা সমুদ্র দু’ভাগ করে পথ করে দিয়েছিলেন পারাপারের জন্য যখন মিশরীয়রা তাদের পিছু ছুটেছিল আক্রমনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু আল্লাহর অসীম রহমতে তারা সে পথ অতিক্রম করে আসলেও মিশরীয়রা ডুবে গিয়েছিল সাগরের অন্তিম জলাধারে। এভাবেই মাবুদ আল্লাহ তাঁর আশ্চর্য কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে রক্ষা করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধরদেরকে যদিও তারা বারে বারে অবাধ্য হয়েছিল এই পথ পরিক্রমায়।

আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে তাদের বহুবার শাস্তি পেতে হয়েছিল। অথচ আল্লাহ তায়ালার রহমতের প্রাচুর্য তাদের রক্ষা করেছে শত বিপদেও। এগারো দিনের পথচলার দুরত্ব শুধুমাত্র তাদের অবিশ্বাস ও অবিশ্বস্ততার কারণে বিলন্বিত হয়েছে চল্লিশটি বছরে। তথাপি আল্লাহ তাদের ভুলে যান নাই কিংবা পরিত্যাগ করেন নাই। কারণ, এটাই ছিল ইব্রাহীমের কাছে তাঁর নিজ প্রতিজ্ঞা।

যখন আমরা ইমরানের বংশের দিকে তাকাই দেখতে পাই আল্লাহ তায়ালার অসীম নিয়ামতের নমূনা। সূরা আল-ইমরান এর ৪২ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন—“আর মনে কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে বেছে নিয়েছেন, পবিত্র করেছেন এবং তোমাকে বিশ্বনারী সমাজের উর্দ্ধে নির্বাচন করেছেন।” উল্লেখ্য যে, মারইয়াম ইমরানের তথা ইব্রাহীমের বংশ থেকে আগত। কোরআনের কোনো পাতায় লেখা হয় নাই আমিনা বা ফাতিমার কথা। সে কথা শুধুমাত্র লেখা হয়েছে জাল হাদীস আর ফিক্‌রার পাতায় পাতায় যা খোদার বিরুদ্ধাচরণ।

মারইয়াম এবং হযরত ঈসা (আঃ) এর ব্যাপারে কোরআনের শানে-নযূল ও হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে এইভাবে—আবু হোরায়রাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী বলেছেনঃ এমন কোন নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করে না যাকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শয়তান স্পর্শ করে না। শয়তানের স্পর্শের কারণে নবজাতক শিশু চীৎকার করে কেঁদে ওঠে। তবে মারইয়াম ও তাঁর সন্তান ঈসা (আঃ) কে শয়তান স্পর্শ করতে পারেনি। এ হাদীস বর্ণনা করার পর আবু হোরায়রাহ (রাঃ) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে হাদীসের সমর্থনে কুরআনের আয়াত “ওয়া ইন্নী উঈযুহা বিকা ওয়াযুররিয়্যাতাহা মিনাশ্‌ শাইত্বোয়ানির রাজীম”- আর আমি তাকে (মারইয়াম) ও তার সন্তানকে বিতাড়িত শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম”—পাঠ করো। (সহীহ আল-বুখারী, সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, ৪র্থ খন্ড, ৬২৬ পৃষ্ঠা, ৪১৯১ নং হাদীস) দ্রষ্টব্য।

কোরআন শরীফের অনেক পাতায় ইব্রাহীম (আঃ) এর ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। সূরা আন্‌-নাহল এর ১২০-১২২ আয়াতে বলা হয়েছে “নিশ্চয় ইব্রাহীম (আঃ) ছিলেন এক উম্মাত, আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশারিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে নির্বাচিত করেছিলেন এবং পরিচালিত করেছিলেন সরল সঠিক পথে। আর আমি তাকে পৃথিবীতে মঙ্গল দান করেছিলাম এবং পরকালেও তিনি হবেন সৎলোকদের অন্যতম।”

আর হযরত ঈসা (আঃ) এর ব্যাপারে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে বহু জায়গায়। সূরা আল-ইমরানের পঁয়তাল্লিশ আয়াতে বলা হয়েছে ঠিক এভাবে।

إِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ يَـٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ ٱسْمُهُ ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ وَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ 45

বাংলা অনুবাদঃ “হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাকে একটি কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, তার নাম মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়াম, সে সম্মানিত ইহকাল ও পরকালে এবং সে আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে একজন”।

আমরা যদি একটু ভালোভাবে লক্ষ্যকরি বাক্যটির বর্ণনা, তাহলে কয়েকটি বিষয় অন্ততপক্ষে পরিষ্কার হবে আমাদের উপলদ্ধির পরিসরে। প্রথমত: বলা হয়েছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য মারইয়াম এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাঁর কালিমার সংবাদ দিচ্ছেন মানবজাতিকে এবং এ সুসংবাদটি নিয়ে এসেছেন জিব্রাইল ফেরেশ্‌তা স্বয়ং। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সুসংবাদটি হলো ঈসা ইবনু মারইয়াম। অর্থাৎ, মারইয়াম পুত্র ঈসা আল্‌ মসীহ্‌। তাঁর ব্যাপারে এটিও বলা হয়েছে যে, তিনি ইহকাল ও পরকালে এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম একজন।

এই আয়াতটি পড়ার পরও যদি আমাদের চৈতন্যের দ্বার উন্মুক্ত না হয়, তাহলে কোন্‌ মায়াবী মন্ত্রে উন্মোচিত হবে তাদের অন্ধত্বের অর্গল তা আমার বোধগম্য নয়।

আল্লাহর কালাম প্রত্যাখান করে নিজের মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে কেউ যদি গড়ে তুলতে চান আরব্য উপাখ্যানতুল্য গল্পের সমাহার, তাহলে তাতে তাদের চিন্তাশক্তির বিকলাঙ্গ- তারই পরিচয় পরিপুষ্ট হয়, অন্য কিছু নয়।

এবার দেখা যাক আরেকটি উল্লেখযোগ্য আয়াত। এটি নেওয়া হয়েছে সূরা মারইয়াম থেকে। এখানে আমরা দেখতে পাই যখন (জিব্রাইল) ফেরেশ্‌তা এসে মারইয়ামকে বললেনঃ

قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَـٰمًا زَكِيًّا 19 

আমি তো আপনার প্রতিপালকের প্রেরিত দূত, আপনাকে এক পবিত্র সন্তান দান করার জন্য উপস্থিত হয়েছি (সূরা মারইয়াম ১৯: ১৯ আয়াত)।

এবার যদি আমরা আয়াতটি পর্যলোচনা করে দেখি তাহলে দেখতে পাবো- জিব্রাইল ফেরেশ্‌তা আল্লাহর কাছ থেকে মারইয়াম এর কাছে এসে বললেনঃ যে, তার জন্য এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য উপস্থিত হয়েছেন। একটু ভেবে দেখুনতো কে বলছে কথাগুলি? কে পাঠিয়েছে তাকে? কি সে বারতা? এক পবিত্র পুত্র যাকে আরবীতে বলা হয় গুলামান জাকিয়া, এবং সে পুত্র হবে আল্লাহর কাছ থেকে আসা মানবজাতির জন্য একটি নিদর্শন ও রহমতরূপে। এহেন বাক্য কোথাও কোনো কিতাবে কি সংযোজিত হয়েছে এই বিশ্বভ্রমান্ডের ইতিহাসে? নাই, কোথাও নাই। কিন্তু তাতে কি যায় আসে? কথায় বলে না, “আমরা পিঠে বেঁধেছি কুলো আর কানে দিয়েছি তুলো”।

তাই কিছু যায় আসে না আমাদের আল্লাহর কালামের নিগুড়তত্ত্বে। কারণ, আমাদের রয়েছে স্বরচিত কোরআনী তাফসীর আর ব্যাজ্ঞাত্বক ওয়াজী ভাষ্যের কন্ঠস্বর। যা বিদ্রুপ আর সমালোচনায় সত্যকে আড়াল করার জন্যে যথেষ্ট সহায়ক। আরবী শব্দ ‘গুলামান জাকিয়া’-র আভিধানিক অর্থ হলো- পবিত্র পুত্র, নিখুঁত পুত্র, পাপহীন পুত্র যার ইংরেজী অর্থ দাঁড়ায় Holy Son, Pure Son, Sinless Son ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা আর কাউকে কোনদিন এতো বেশী মর্যাদা দান করেন নাই কিংবা কারো জন্মের বারতা তাঁর ফেরেশ্‌তাকে দিয়ে পাঠান নাই মানবজাতির কাছে।

ইব্রাহীম (আঃ) থেকে শুরু করে সকল নবীরা এসেছেন বণী ইস্রাইল থেকে। এমনকি ঈসা আল মাসীহও বনী ইস্রাইল থেকে আসা ইব্রাহীম তথা দায়ুদের বংশধর। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় “বণী ইস্রাইল” পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চ সম্মানিত জাতি। অতএব, তাদের প্রতি অভিসম্পাত বা গালাগালি করা আল্লাহ তায়ালাকেই গালমন্দ করার সামীল।

বণী ইস্রাইল বহির্ভূত নবীত্বের দাবীদার শুধুমাত্র একজন যিনি আববের কুরাইশ বংশভুক্ত এবং তার নাম মুহাম্মদ ইব্‌নে আবদুল্লাহ্‌। যদিও তিনি কখনো দাবী করেন নাই নবুয়তের, তবে তার প্রতি আস্থাবান ও অনুগত আরবীয়রা তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীত্বের মর্যাদায়। আর সেই সাথে শিরক্‌ (অত্যান্ত কঠিন গোনাহ্‌) করে চলেছেন জীবনের পদে পদে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেকে ‍শুধুমাত্র সতর্ককারী বা প্রেরিত বলে আত্নপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভক্তরা তাকে বসিয়েছেন নবীত্বের সিংহাসনে এমনকি কেউ কেউ তাকে অভিহিত করেছেন “মাহবুব-ই-খোদা” হিসেবে।

ব্যাপারটি আল্লাহ তায়ালার কালামের সম্পূর্ণ বিপরীত ও সাংঘর্ষিক। বিষয়টি প্রাঞ্জল হবে যদি আমরা নীচের আয়াতটির ‍দিকে তাকাই।

قُلْ مَا كُنتُ بِدْعًا مِّنَ ٱلرُّسُلِ وَمَآ أَدْرِى مَا يُفْعَلُ بِى وَلَا بِكُمْ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ وَمَآ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌ  مُّبِينٌ 9

বাংলা অনুবাদঃ বলুন: আমি তো কোন রাসুল নই। আর আমি জানিনা, আমার ও তোমাদের সাথে কি আচরণ করা হবে। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি তা কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি তো একজন স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। (সূরা আহ্‌কাফ, ৯ নং আয়াত) দ্রষ্টব্য।

এছাড়া, আরো একটি আয়াতে রয়েছে তার মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন বর্ণনা। বলা হয়েছে—

11 وَأَنَّا مِنَّا ٱلصَّـٰلِحُونَ وَمِنَّا دُونَ ذَٰلِكَ ۖ كُنَّا طَرَآئِقَ قِدَدًا
12 وَأَنَّا ظَنَنَّآ أَن لَّن نُّعْجِزَ ٱللَّهَ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَن نُّعْجِزَهُۥ هَرَبًا

বাংলা অনুবাদঃ বলুন: আমি তোমাদের কোন ক্ষতিসাধনেরও ক্ষমতা রাখি না এবং কোন হিত সাধনেরও না। বলুনঃ আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাকে কেউই রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতিরেকে আমি কোন আশ্রয়ও পাব না। (সূরা আল-জিন্ন ৭২: ২১,২২ আয়াত) দ্রষ্টব্য।

প্রিয় পাঠক, দয়া করে একটি ভাল বাংলা তাফসীর সংগ্রহ করুন ও নিজে তা পড়ে ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করুন উল্লেখিত পুস্তকগুলির তাৎপর্য। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় আপনার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করবেন আর তাঁকে একান্তভাবে জানার অভিপ্রায়টি পূর্ণ করবেন। কারণ, যে মনে-প্রাণে আল্লাহকে অন্নেষণ করে, সে খুঁজে পায় তাঁর মহব্বতের স্পর্শ। সেই সাথে প্রসারিত হয় তার অন্তরের অনাবিল আনন্দ।

আরও পড়ুন: আল্লাহর বিভাজন: আল্লাহ কয়ভাগে বিভক্ত?

 

This Post Has 4 Comments

Leave a Reply