You are currently viewing আকাশ নাকি পৃথিবীর ছাদ বা আচ্ছাদন

আকাশ নাকি পৃথিবীর ছাদ বা আচ্ছাদন

  • Post author:
  • Post last modified:April 12, 2022

কারো যদি চিন্তাশক্তি চ্যাপ্টা হয়ে যায় মস্তিষ্কের অনুর্বরতায়, তাহলে সে নিজস্ব ভাবনায় সমগ্র পৃথিবীকে দেখে এক চ্যাপ্টা অবয়বে। আমারতো মনে হয় না এ যুগে কোন পাগলকেও পাওয়া যাবে যে দেখে আকাশকে পৃথিবীর ছাদ হিসেবে। অথচ আমাদের ইসলামী পন্ডিতেরা দেখেন আকাশকে পৃথিবীর ছাদ হিসেবে। আর বয়ান করেন কোরআন নাকি বিজ্ঞানকেও হার মানায়।

আসুন তবে জেনে নেয়া যাক এ ব্যাপারে বিস্তারিত। কোরআনের ২১ নম্বর সূরা (আম্বিয়া)’র ৩২,৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে এভাবেঃ

وَجَعَلْنَا ٱلسَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ ءَايَـٰتِهَا مُعْرِضُونَ (٣٢) وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ (٣٣)

বাংলা অনুবাদঃ “আর সৃষ্টি করেছি যাতে পৃথিবী ওদের নিয়ে না হেলে এবং আমি ওতে প্রশস্ত পথ করে দিয়েছি এবং আমি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু ওরা আকাশস্থিত তাঁর নির্দেশনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”

এর পরের আয়াতটিও লক্ষ্যণীয়। সেখানে বলা হয়েছে ঠিক এভাবে-

وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ ٱلْخُلْدَ ۖ أَفَإِي۟ن مِّتَّ فَهُمُ ٱلْخَـٰلِدُونَ (٣٤)

বাংলা অনুবাদঃ “তিনি আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভবিহীন নির্মাণ করেছেন তোমরা এ দেখেছ; তিনিই পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যাতে এ তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে….”

লক্ষ্যণীয় যে তিনি পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যাতে তা আমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে…..। অর্থাৎ এটি পরিষ্কার যে, তিনি পর্বতমালা স্থাপন করেছেন খুঁটি হিসেবে যাতে বিশাল দিগন্তমালা ঢলে না পড়ে। এটা কি পাগলের প্রলাপ নয়? এটাই কি কোরআনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব? ঘাবড়াবেন না, আরো রয়েছে এ বিষয়ে।

এবার দেখা যাক (সূরা বাক্বারাহ্‌) ২: ২২ নং আয়াতটি।

ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلْأَرْضَ فِرَٰشًا وَٱلسَّمَآءَ بِنَآءً وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَأَخْرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۖ فَلَا تَجْعَلُوا۟ لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ (٢٢)

বাংলা অনুবাদঃ “যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ স্বরূপ করেছেন এবং আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন ও তদ্দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনে-শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না।”

আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে দেয় যে, পৃথিবীর চারিদিকে কোন সীমারেখা নেই, আছে শুধু অসীম (space) জায়গা। যদি আমরা লক্ষকোটি আলোক দূরত্বেও যাই তবুও এর কোন সীমারেখা বা প্রাচীর পাওয়া যাবে না। তাহলে প্রশ্ন হলো যদি আমাদের মাথার ওপরে আকাশের কোন সীমারেখা না থাকে বা ছাদ না থাকে তাহলে এরজন্যে কেনো স্তম্ভ বা পিলারের প্রয়োজন হবে? তাছাড়া পর্বতমালা কিভাবে আকাশকে ধরে রাখবে ঢলে পড়া থেকে, সেটাও ভেবে দেখবার বিষয়, নয় কি? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছেও এটা হাস্যকর হবে এই অগ্রগামী আজকের বিশ্বে।

আল্লাহ কিভাবে তা কোরআনের আয়াতে সংযোজন করতে পারেন? এখানেই কি প্রমাণিত হয় না যে আল্লাহর বুদ্ধিমান বান্দারা তাঁকে সাহায্য করতে চেয়েছেন নিজেদের স্থূল মস্তিষ্কের বিভ্রান্তিময় তথ্য দিয়ে? যেহেতু আল্লাহ ভুল করতে পারেন না সেহেতু বুঝে নিতে হবে যে, এটি তাঁর বান্দাদের অপকর্মের ফসল। তারাই সংযোজন করেছেন কোরআনের এই অবাস্তব আয়াতসমূহ।

এছাড়া রয়েছে আরো কিছু উদ্ভট তথ্য কোরআনের পাতায় যা আলোচনা সাপেক্ষ। এখানে বলা হয়েছে আকাশ পৃথিবীর ছাদ তবে তা একদিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। নীচের আয়াতগুলি একটু লক্ষ্য করে দেখুন ।

وَفُتِحَتِ ٱلسَّمَآءُ فَكَانَتْ أَبْوَٰبًا (١٩) وَسُيِّرَتِ ٱلْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا (٢٠)

সূরা (নাবা) ৭৮: ১৯, ২০ আয়াত।

বাংলা অনুবাদঃ “এবং আকাশকে উম্মুক্ত করা হবে। ফলে তা বহু দরজা বিশিষ্ট হবে, এবং পাহাড়সমূহকে চালিত করা হবে; ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা।”

إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتْ (١) وَإِذَا ٱلْكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتْ (٢) وَإِذَا ٱلْبِحَارُ فُجِّرَتْ (٣)

সূরা (ইনফিত্বার) ৮২: ১,২,৩

বাংলা অনুবাদঃ “আকাশ যখন বিদীর্ণ হবে; যখন নক্ষত্রমন্ডলী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে, এবং যখন সাগরসমূহকে উত্তাল করে তোলা হবে….”

وَإِذَا ٱلنُّجُومُ ٱنكَدَرَتْ (٢)

সূরা তাক্বওয়ীর ৮১: ২ আয়াত

বাংলা অনুবাদঃ “নক্ষত্ররাজি যখন খসে খসে পড়বে,….”

কোরআনের তাফসীর অনুযায়ী আমাদের মাথার উপরে সুন্দর এই নীল আকাশ একদিন ভেঙ্গে টুক্‌রা টুক্‌রা হয়ে যাবে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে অন্য কথা। বিজ্ঞান বলে যে, আকাশের ছাদ বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই পৃথিবীতে। বরং আমাদের চারিদিকে সীমাহীন দূরত্বের জায়গা (space) রয়েছে। আকাশ যদি ছাদ হতো তাহলে তা বিদীর্ণ করে নভোযানকে চাঁদে পাড়ি জমাতে হতো।

বিজ্ঞান বলে আকাশের আচ্ছাদন বলেও কিছু নেই। তাহলে আসমানের দরজা খুলে যাবে কিভাবে? এটা টুক্‌রো টুক্‌রো হয়েও বা পড়বে কিভাবে? এসব আষাঢ়ে গল্পে কি আর আধুনিক বিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে চিড়ে ভিজবে? নিজেই একটু বিবেচনা করে দেখুন তো!

Leave a Reply