You are currently viewing শিরক্‌ বা অংশীদারীত্ব বিষয়ক কিছু অজানা তথ্য

শিরক্‌ বা অংশীদারীত্ব বিষয়ক কিছু অজানা তথ্য

  • Post author:
  • Post last modified:April 30, 2022

সলামের মাযহাবের গোড়াতেই গলদ রয়ে গেছে। কিন্তু কে বলবে সে কথা? সত্য বলাটাই তো ‍দুস্কর এ জগতে। তাই তো মিথ্যা আর অতিরন্জ্ঞনের এত দৌড়-ঝাঁপ চারিদিকে। কালেমার প্রথম লাইনটিতে “লা ইলা হা ইল্লাললাহু” মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকারোক্তি নির্দ্ধিধায় গ্রহণযোগ্য। কিন্তু দ্বিতীয় লাইনটিতে (মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌) যা সংযোজন করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। অর্থাৎ “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌” শব্দটি কালেমা বহিভূর্ত। অথচ তা আল্লাহর নামের সাথে সংযোজিত করা হয়েছে অবৈধভাবে। এর কোনো অস্তিত্ব নেই কোরআনে কিংবা হাদীসে। এর সংযোজনটি যেভাবেই হয়ে থাকুক না কেন এটা কোরআনের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ কোরআনে এ কথা কোথাও উল্লেখ নেই। বরং যা আছে তা হলো এইঃ

لَقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ ۖ وَقَالَ ٱلْمَسِيحُ يَـٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُۥ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّـٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ (٧٢)

সূরা মায়িদাহ্‌ ৫: ৭২ আয়াত

বাংলা অনুবাদঃ “যে কেউ আল্লাহর অংশী করবে নিশ্চয় আল্লাহ তার জন্য বেহেশত্‌ নিষিদ্ধ করবেন।”

“শিরক্‌” মানে অংশীদারীত্ব। অর্থাৎ আল্লাহর নামের সাথে কোন নাম বা ব্যক্তির তুলনা করা বা সমকক্ষ করার। এটি এক সাংঘাতিক অপরাধের সামিল। সুতরাং তাঁর নামের সাথে অন্য আর কাউকে সংযোজিত করা উচিত নয় কারন এর শাস্তি হবে অপরিসীম। কিন্তু আমরা কি করছি? মুহাম্মদকে তার রসূল বানিয়ে তাঁর পাশে ঝুলিয়ে রাখছি কি জানি কোন্‌ সওয়াবের আশায়। সেইসাথে তাকে পূজা করে চলেছি অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে। কোরআনের কোথাও তার নামের হসিদ নাই আল্লাহর নামের পাশাপাশি অবস্থানের। তবে এ কাজটির উৎপত্তি কোথায়? কে করেছে এ উদ্ভাবনী আবিষ্কার? আল্লাহ তো করেন নাই। করেছে মুহাম্মদের সুযোগ্য চামচারা। জানা যায় মুহাম্মদের তিরোধানের একশত বছর পর পারস্যের ইমাম খোরাসানী নামক এক ব্যক্তি আনন্দে বিগলিত হয়ে তার নামের সাথে সংযোজন করেন এই পদবীটি। সেই থেকে শুরু হয় এর প্রচারাভিযান।

এর আগেও তারা অর্থাৎ মুহাম্মদের অনুগতরা চেষ্টা করেছিলো তাকে রাসুলুল্লাহ্‌ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। তার এক দৃষ্টান্ত দেখা যায় হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তিকালে। আধুনিক প্রকাশনী ঢাকা থেকে প্রকাশিত সহীহ্‌ বুখারীর ৩য় খন্ডের ২৩ ও ২৪ পৃষ্ঠায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে বলা হয়েছে সন্ধিচুক্তির মুসাবিদা লিখেন হযরত আলী (রাঃ)। তিনি লিখেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। এই লেখায় মুশরিকরা আপত্তি তুলে বলে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লেখো না। কেননা যদি তুমি রাসূল হতে (অর্থাৎ আমরা যদি রাসূল মেনে নিতাম), তাহলে আমরা তোমার সঙ্গে লড়াই করতাম না। তুমি বরং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। তিনি আলী (রাঃ) কে বলেন, শব্দটি মুছে ফেলো। আলী (রা) বলেন, আমার পক্ষে এটা মোছা সম্ভব নয়। অতএব রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজ হাতে তা মুছে ফেলেন এবং তাদের সঙ্গে এই শর্তে সন্ধি করেন।

মুহাম্মদ স্বয়ং যখন নিজের নামের সাথে দেওয়া পদবীটি মুছে ফেলতে পারেন তাহলে কোন্‌ আহম্মক তা আবার লেজুড় হিসেবে সংযোজন করতে উৎসাহী হয়ে উঠলো? ২৪ পৃষ্ঠায় দেখা যায় মুহাম্মদ (সাঃ) চুক্তি পত্রটি হাতে নিলেন এবং লিখলেন, এই চুক্তিতে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্‌ সম্মত হয়েছেন।

আল্লাহ স্পষ্টতঃ ঘোষণা করেন যে, “তিনি তাঁর অংশী করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। দেখুন তবে কোরআনের আয়াতটি।”

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَـٰلًۢا بَعِيدًا (١١٦)

সূরা আন্‌-নিসা ৪: ১১৬ আয়াত।।

বাংলা অনুবাদঃ “আল্লাহ তাঁর অংশী করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এছাড়া সব পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, এবং কেউ আল্লাহর অংশী করলে সে ভীষণ পথভ্রষ্ট হয়।”

ডঃ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (সহযোগী) অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় , কুষ্টিয়া) তার “হাদীসের নামে জালিয়াতিঃ) বইটিতে বলেছেন- প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ কথাটি কোরআন বা হাদীসের কথা মনে করলে ভুল হবে (৩৫৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল কথাটির পরিবর্তে বলা হয়েছে মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল (৩৫৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য বইটিতে আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে)। ডঃ জাহাঙ্গীর মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন, মাদ্রাসা থেকে নয়।

এরপরেও কি আমরা যুক্তি অন্নেষণ করে যাবো? ব্যাপারটি নিতান্তই আপনার। আপনি ইচ্ছা থাকলে গেয়ে যান মুহাম্মদী গজল আর আস্ফালন করুন জিকিরে জিকিরে। নতুবা এসব উদ্‌ভ্রান্ততা থেকে সময় থাকতে সরে পড়ুন। আর খুঁজে ফিরুন আল্লাহর রূহানী পথ।

Leave a Reply