You are currently viewing আল্লাহর বিভাজন: আল্লাহ্ কয়ভাগে বিভক্ত? (২য় অংশ)

আল্লাহর বিভাজন: আল্লাহ্ কয়ভাগে বিভক্ত? (২য় অংশ)

  • Post author:
  • Post last modified:May 22, 2021

কটু ভেবে দেখুনতো, কতগুলো পথ ও মতাদর্শে বিভক্ত করা হয়েছে আল্লাহ্কে। আর তা হয়েছে আল্লাহর খাস বান্দাদের দ্বারা। কিন্তু আমাদের বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, আমরা আল্লাহর চেয়ে তাঁর বান্দাদের উদ্ভাবন পন্থায় বিভক্ত হয়েছি মহান আল্লাহ্ তায়ালার সুনির্দিষ্ট পথ থেকে। সবাই যদি যার যার মতাদর্শে আল্লাহর পথদর্শন করাতে চান আমাদেরকে, তাহলে অন্যদের কি হবে? তারাও তো দাবি করে চলেছেন সঠিক জীবন বিধানের অনুসারী হবার।

সম্প্রতি, এইসব ইসলামী দলগুলি আর তাদের পীর-ফকিরদের হানাহানিতে অনেক মাহফিল পরিণত হয়েছে হাতাহাতি যুদ্ধের প্রাঙ্গণে আবার কখনো বা বাঁদরের মতো ঝাঁপাঝাঁপি আর উন্মুক্ত উল্লাসের আস্তানায়। চরমোনাই পীর, আটরশী পীর ও অন্যান্য ছোট-বড় পীরের মাহফিলের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন আর ভেবে দেখুনতো এটাই কি হতে পারে পবিত্র সৃষ্টিকর্তার কর্মের প্রকাশ, নাকি অন্যকিছু?

তাদের মাহফিলে বক্তাদের বাচনভঙ্গি, নিকৃষ্ট ভাষায় একে অন্যকে গালাগালি আর সস্তা কথার ফুলঝুড়ি ছাড়া আর কি আছে? দু’চারটি আরবি উচ্চারণের বয়ান (যা প্রায়শঃ অপ্রাসঙ্গিক) আর চিৎকার করে বলা- বলেন সুবাহানল্লাহ্! আরো জোরে কন, না কইলে মুখ বাঁকা হইয়া যাইবো ইত্যাদি। এতে না আছে কোন তথ্যমূলক ব্যাখ্যা না আছে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। এভাবেই চলছে আল্লাহকে বেচাকেনার হাট। আর সাধারণ ধর্মভীরু বান্দারা কোন কিছু বিবেচনা না করেই হজম করে চলেছেন এইসব ইসলামী দিক্ষা।

মজার ব্যাপার হলো এইসব ইসলামী পথ প্রদর্শকেরা একে অন্যের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারেন না। পারেন শুধু স্বীয় মতামতের গলাবাজি করতে। তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে বুঝবে আল্লাহ্ আসলে কোন দলের অন্তভুক্ত? অন্য অর্থে, কোন্ দলটি আল্লাহর প্রদর্শিত পথে রয়েছে? সবাই তো দাবি করেন তারাই প্রকৃত ইসলামী পথের পথিক।

তাই বলেছিলাম আল্লাহ্ কয়ভাগে বিভক্ত? কোনটি আল্লাহর প্রকৃত পথ?

ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই আল্লাহ্ আমাদের “আশরাফুল মখলুকাত” বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন আর দিয়েছেন মানবীয় জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেচনা। তিনি মানুষকে ইসলামী পথের পথিক হিসেবে পাঠান নাই। এ জগতে ইসলামী পান্ডিত্যের সমুদয় টাইটেল বুকে বেঁধে নিয়ে চললেও তাতে আল্লাহর প্রকৃত প্রতিফলন হয় না। কেননা আল্লাহর প্রকাশ তাঁর সৃষ্টির মাঝেই। যুগ যুগ ধরে তাঁর কালাম মানুষকে বিপথ থেকে সরিয়ে রেখেছে। আর তাঁর নবীদের শিক্ষা ও পথ প্রদর্শনা মানুষকে গড়ে তুলেছে এক উন্নত মানবিকতায়। তারা কেউ বিভিন্ন মতাদর্শের পাল্লায় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগীতায় খাটো করে দেখেন নি অন্যকে, বরং হেদায়েত করেছেন মানুষকে মহান আল্লাহ্ তায়ালার সান্নিধ্য লাভে ছুটে আসার জন্য।

চাবকিয়ে, পিটিয়ে, কতল করে তারা শিক্ষা দেন নাই ইসলামী পথ অনুসরণ করার হাকিকত। ইসলাম নয়, তাঁরা মানবজাতিকে ডেকেছেন আল্লাহর সীমাহীন মহব্বতের ছায়ায়। ব্যক্তি আল্লাহ্ তায়ালাকে তাঁরা সম্মান দিয়েছেন নিজেদের জীবনের প্রচ্ছন্ন প্রকাশে, দলাদলিতে নয়। অথচ আজকে আমরা কি দেখছি?

যেমন ফল দিয়ে গাছের পরিচয় মেলে তেমনি তাদের (মৌ-লোভীদের) ওয়াজের বাচনভঙ্গিতে মেলে চরিত্রের পরিচয়, এখানে আধ্যাতিকতার কোন প্রকাশ নাই। আছে শুধু গলাবাজি আর ফালতু চিৎকার।

এবার একটু ভেবে দেখুনতো উল্লেখিত কোন্ দলটির সাথে আপনি সংযুক্ত? কিংবা আপনি কি আদৌ চেয়েছেন এসবের দলভুক্ত হতে? বাস্তবে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েছেন এসব অপকৌশলের মায়াজালে, দলাদলিতে।

মানুষের প্রাজ্ঞল আবেগকে কিভাবে অবরূদ্ধ করা হয় তথাকথিত মৌ-লোভীদের অকাল পান্ডিত্যের অবাস্তব ধর্ম বিধানে তার প্রমাণ এই অগনন ইসলামী শ্রেণীবিভেদে। আমরা যখন নামাযে দাঁড়াই কিম্বা এবাদত করি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তখন তো তা করিনা কোনো ধর্মের দলবদ্ধ হবার প্রত্যাশায়।

তাই বলেছিলাম আল্লাহ্কে কয়ভাগে বিভক্ত করেছি আমরা। কোন্ দলে তাঁর অবস্থান? কে দিতে পারে তার সমাধান?

ধর্মনীতি আর রাজনীতি এ’দুটো জিনিষ ক্রমশঃ বিছিন্ন করে চলেছে মানুষকে একে অন্যের কাছ থেকে। এ দু’য়ের মাঝে অত্যান্ত রেষারেষী বিদ্যমান। অথচ এ দু’টি জিনিষের অজস্র ছড়াছড়ি আমাদের মার্কেটে। এটিকেই পুঁজি করে বাহারী টুপি, পাঞ্জাবী, হিজাব আর বোরকা বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে।

এমনকি ছোট্ট শিশুকেও পড়তে হয় বোরকা, হিযাব। এতে করে যদি আমরা মনে করে থাকি যে আল্লাহ্ আনন্দে করতালি দিবেন তাহলে তা ভুল হবে। কারণ, আমাদের আবরণ দিয়ে আমরা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারি না। তা পারি শুধু আচরণ দিয়ে। আর আচরণ হলো আমাদের অন্তরের প্রকৃত ব্যক্তিটির অনবদ্য প্রকাশ। আমরা তাঁর জন্যে কি করলাম সেটা বড় নয়, কি হলাম সেটাই বড় কথা।

যার আত্মনিয়ন্ত্রন নাই জীবনের আচরণে, সে কিভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে আল্লাহকে। আল্লাহ্ তো সৃষ্টিকারী, সমস্ত সৃষ্টিই তাঁর মহব্বতের ফসল। অন্যদিকে শয়তান হলো ধ্বংসকারী, হত্যাকারী, সমস্ত মন্দতার শিরমণি। তারই তাড়নায় মানুষ আজো হত্যাকান্ড সহ অমাণবিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছে। কারো ভেবে দেখার সময় নাই কাকে সন্তুষ্ট করে চলেছি আমরা এহেন কার্যক্রমে।

আমাদের শরীরের আবরণকে দীর্ঘায়িত করে আর হিযাব, বোরকা দিয়ে আল্লাহকে কখনো সন্তুষ্ট করা যায় না। কারণ, আল্লাহ্ মানুষ নন তাই সহসাই চমকিত বা উল্লাসিত হন না এসব বাহ্যিক আবরণে। তাঁর দৃষ্টি আমাদের অন্তরের নীবিড়ে, চরিত্র নামক বৈশিষ্টের দিকে। সুন্দর আবরণ দিয়ে আমাদের কালিমাযুক্ত অন্তর তাঁর কাছ থেকে আড়াল করা যায় না। বরং ভুল স্বীকার করে বা তওবা করে আসা যায় তাঁর কাছে।  তিনি বাহ্যিক আবরণের পুরষ্কার দেন না, পুরষ্কৃত করেন অন্তরের আচরণের।

মুখে মুখে সুবাহানল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহর বুলি উচ্চারণে তাঁর কিছু আসে যায় না। যদি না থাকে আমাদের জীবনে তাঁর প্রতি আনুগত্য আর বিশ্বাস।

উদাহরণস্বরূপ এভাবে বলা যেতে পারে ধরা যাক আপনি কোন বন্ধু বা প্রতিবেশীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন কিংবা মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে কাউকে বিপদে ফেলে কিছু ফায়দা লুটে নিলেন। হয়তো বা কাউকে মিথ্যার আশ্রয়ে ঠকিয়ে সাময়িক তৃপ্তিবোধ করলেন কিংবা ধার করা অর্থ ফেরত দিলেন না। কিংবা কারো জীবন বিপন্ন করে লাভবান হলেন বৈভব প্রাচুর্যের। অতঃপর একদিন ভোল পাল্টিয়ে (আবরণ বদলিয়ে) আবির্ভূত হলেন এক নতুন অবয়বে। ইতিমধ্যে দাড়িতে পূর্ণ হয়েছে আপনার মুখমন্ডল আর চাঁদি ঢাকা পড়েছে এক সৌন্দর্যপূর্ণ টুপিতে এবং লম্বা কোর্তায় ঢাকা পড়েছে পদযুগল।

আপনার হয়তো মনে হতে পারে আপনার সব অপরাধ ঢাকা পড়ে গেছে নতুন এই আচ্ছাদনে। কিন্তু না, ভুক্তভোগী ব্যক্তিটি ভুলে যায় নাই আপনার প্রকৃত পরিচয়। তার অন্তরের গাত্রদাহ স্থিমিত হয় নাই আপনার নতুন আবরণে। কারণ সে স্পষ্টই জানে আপনি কে। বাহ্যিক আবরণে আপনি কখনো ঢেকে রাখতে পারবেন না আপরাধকে। বরং যদি অনুতপ্ত হয়ে আন্তরিকতার সাথে ভুক্তভোগী (যার বিরূদ্ধে অপরাধ করেছেন)-টির কাছে ফিরে এসে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চান তাহলে সে হয়তো আপনার অনুতপ্ত হওয়ার কারণে আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।

এভাবেই ফিরে আসতে হয় আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে অবনত মস্তকে আর অন্তরের নম্রতায়। শুধুমাত্র ভোল পাল্টিয়ে সেজ্দায় মাথা ঠুকাঠুকি করে নয়।

আল্লাহ্ পাক্ আমাদের অন্তরের সমস্ত কিছু তন্ন-তন্ন করে খোঁজেন আর নির্দ্ধারণ করেন বিচারের সুব্যবস্থা। তাই তাঁকে ঠকানো যায় না মসজিদের মেঝেতে মাথা ঠুকে। কিংবা হিযাব, বোরখার পাতলা আবরণে মাথা ঢেকে।

মহান আল্লাহ্ তায়ালাকে আমরা যেভাবেই দেখি না কেন বা যতভাবেই বিভক্ত করে থাকি না কেন তিনি তাঁর স্বীয় আসনে স্থির, অবিচল। কারণ, সমস্ত কতৃর্ত্ব তাঁর হস্তের করতলে। বিচারের ভার তাঁরই হাতে রক্ষিত। তাঁর দৃষ্টি মানুষের মৌন-সুন্দর অবয়বে নয় বরং তাঁর প্রতি তাদের অনুগত্য আর বাধ্যতার প্রতি, সেই সাথে আমাদের অন্তনির্হিত “চরিত্র” নামক সুকমল বৈশষ্ট্যের প্রতি।

তাঁকে আমরা ধর্মের দলাদলি দিয়ে কোনদিন করায়ত্ত করতে পারবো না। পারবো না কোন পীর-ফকিরের অনুসারী হয়েও। অতএব, আসুন ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ফিরে আসি তাঁর চরণতলে, কিতাবের দিক নির্দেশনায়।

This Post Has One Comment

Leave a Reply