You are currently viewing হিল্লা বিয়ের হল্লা চুক্তি

হিল্লা বিয়ের হল্লা চুক্তি

  • Post author:
  • Post last modified:April 24, 2022

হিল্লা বিয়ের হল্লা চুক্তি-র কথা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। স্পষ্ট করে কেউ হয়তো বলেন না কখনো এ কথা। কিন্তু এটাই কোরআনের একটি বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কোরআনের পাতায়। বিশ্বাস হচ্ছে না? দেখুন তবে সূরা বাক্বারাহ্‌ এর ২৩০ নং আয়াতে।

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُۥ مِنۢ بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُۥ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَآ أَن يَتَرَاجَعَآ إِن ظَنَّآ أَن يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (٢٣٠)

বাংলা অনুবাদঃ “তারপর যদি স্বামী স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়, তবে সে তার জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। তারপর দ্বিতীয় স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় এবং তারা উভয়ে যদি মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে, তাহলে তাদের পুনরায় বিয়ে করাতে কারো কোন গুনাহ নেই।” এই হল আল্লাহর নির্দ্ধিষ্ট সীমারেখা। জ্ঞানীদের জন্য তিনি এসব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।

আমরা জানি যে, আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে এই হিল্লা বিয়ে বেশ ভালোভাবেই প্রচলিত ছিল একসময়। যদিও সরকার রাষ্ট্রীয় আইন করে বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তবুও অনেকেই অত্যান্ত অন্ধ প্রবৃত্তির জঘন্য মানসিকতার লোকেরা এখনো এই পুরোনো পদ্ধতি চালু রেখেছে। উল্লেখিত আয়াতেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তিনবার তালাক দেয় অর্থাৎ, মুখে উচ্চারণ করে থাকে তালাক শব্দটি, তৎক্ষণাৎ তার স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। বস্তুতঃ এখানে নারীরাই ভুক্তভোগী। কারণ শুধুমাত্র মুখের কথায় তাদের তালাক হয়ে যায়।

কখনো অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাগের বশবর্ত্তী হয়ে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকের কথা বলে ফেলে। পরে সন্বিত ফিরে পেয়ে হাপিত্যেস করে। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে সারা। এখন চাইলেও আর তার স্ত্রী তার কাছে হালাল বলে গণ্য হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য আর কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়, হয়তো তা সাময়িক বা অল্প সময়ের জন্য। মুখের কথায় যার বৈবাহিক বন্ধন ছিন্ন হয় কোরআনের কেরামতিতে, তার চেয়ে দূর্ভাগা আর কে হতে পারে। একেই বলে কোরআনের বাণী।

এমনি এক ঘটনার অবতাড়না হয়েছিলো আমাদের এক গ্রামে। অতঃপর সেই স্ত্রী বেচারীকে এক বৃদ্ধের সাথে বিবাহ দেওয়া হলো ধর্ম মতে। সবাই ভেবেছিল কিছুদিন সেই বৃদ্ধকে খেদমত করে খুশী করলেই সে তাকে যথারীতিতে তালাক দিয়ে মুক্ত করে দেবে। কিন্তু সে এক বদমাইস কিসিমের হাওয়ায় সেই মহিলাটিকে তালাক দিলো না। বরং তার দেহের সর্বত্র হাত বুলালো স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায়। এদিকে মহিলার স্বামী বেচারা কেঁদে-কেটে হয়রান। তবুও তার স্ত্রীকে আর ফিরে পায় না। অবশেষে গ্রামের অন্যান্যদের হস্তক্ষেপে তাকে তালাক দিতে বাধ্য হলো বৃদ্ধ ব্যক্তিটি।

ইতিমধ্যে যা হবার তাতো হয়েই গেছে। বৃদ্ধটি তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় লুন্ঠন করে নিয়েছে মেয়েটির স্বন্ভ্রম। আমি জানিনা অবশেষে তার পূর্বের স্বামী তাকে গ্রহণ করে নিয়েছিলো কি না। তবে ধর্মের এই বিকৃত চেহারা দেখে আমার মন-মানসিকতা বিষিয়ে উঠেছে, রাগে, বিতৃষ্ণায়। এটা যদি হয় কোরআনের বাণী আর ধর্মের কলকব্জা, তাহলে সেই ধর্ম থেকে সত্তর বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। সৌভাগ্যের কথা এই যে, এন.জি.ও দের কঠোর প্রচেষ্টায় অবশেষে সরকারী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে এসব কর্মকান্ড। তবুও কি মানবে আল্লাহর এই গুণধর বান্দারা! তারা চিৎকার করেছে এর বিরুদ্ধে কিন্তু কাজ হয় নাই তাতে। এতেই কি তার অবাসান হয়েছে বলে মনে হয়? না, অবশ্যই তা বজায় রয়েছে আড়ালে-আবডালে।

কিন্তু এ কেমন বিচার। কেনো নারীদের অসহায়ত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে ধর্ম বেসাতীরা? তাছাড়া, এ কেমন ধর্ম যা মানুষকে বাধ্য করে স্বম্ভ্রম বিসর্জনে? এতো এক পরিস্কার ব্যভিচার। এই যদি হয়ে থাকে কোরআনের শিক্ষা কিংবা অপশিক্ষা, তাহলে কাকে আমরা দোষারোপ করতে পারি? আমাদের অন্ধত্বকে নাকি ধর্মীয় অন্ধত্বের নীতিমালাকে? একেই বলে হিল্লা বিয়ের হল্লা চুক্তি!

Leave a Reply