You are currently viewing আরবীতত্ত্ব ও আমাদের অসহায়ত্ব

আরবীতত্ত্ব ও আমাদের অসহায়ত্ব

  • Post author:
  • Post last modified:May 22, 2021

রবী ভাষা যেহেতু আামাদের মাতৃভাষা নয়, সেহেতু না জেনে অনেক কথাই আমরা যখন সে ভাষায় আওড়াই, তার মানে আমাদের অনেকেরই জানা নাই। তাই যত্রতত্র আরবী উচ্চারনে যে প্রচুর সাওয়াব হাসিল করা যায় তা সত্য নয়। আমাদের প্রতিটি উচ্চারিত বাক্যের একটি অর্থ রয়েছে সেইসাথে রয়েছে এর ব্যবহারের পরিণতি।

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, এ ব্যাপারে। নামাযে দাঁড়িয়ে আমরা যেসব ছোট ছোট সূরা উচ্চারনে নিয়মিত নামায পড়ি, তার অর্থ ও প্রেক্ষাপট যদি সবার জানা থাকতো তাহলে এর ব্যবহারে আমরা সতর্ক হয়ে পরতাম। তা জানি না বলে যেখানে সেখানে এর ব্যবহারে আত্নতৃপ্তি লাভ করি শুধুমাত্র।

আসুন, আজকে সূরা লাহাব নিয়ে আলোচনা করা যাক। আমরা যখন নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা লাহাব পড়ি ও তড়িৎ গতিতে তা সেরে ফেলি তখন কি জানতে পারি তার অর্থ আর তাৎপর্যটুকু? কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ তায়ালার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর এবাদতের সময় অন্যকে অভিশাপের উক্তি আউড়াই। কিন্তু সূরা লাহাবের অর্থ হলো-

تَبَّتْ يَدَآ أَبِى لَهَبٍ وَتَبَّ (١) مَآ أَغْنَىٰ عَنْهُ مَالُهُۥ وَمَا كَسَبَ (٢) سَيَصْلَىٰ نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ (٣) وَٱمْرَأَتُهُۥ حَمَّالَةَ ٱلْحَطَبِ (٤) فِى جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍۭ (٥) 

বাংলা অর্থঃ “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ যা সে উপার্জন করেছে, তা তার কোন কাজে আসেনি। অচিরেই সে লেলিহান অগ্নিতে প্রবেশ করবে এবং তার স্ত্রীও, যে লাকড়ী বহন করে, জাহান্নামে পৌঁছার পর তার গলদেশে থাকবে খেজুর গাছের আঁশের পাকানো রশি” (সূরা লাহাব বা আল-মাসাদ, ১১১: ১-৫ আয়াত)।

আল্লাহ্‌ পাক কি আমাদের ডেকেছেন এবাদতে দাঁড়িয়ে মানুষকে অভিশপ্ততা ঘোষণা করার জন্যে? এই সূরাটি কি গালাগালির নামান্তর নয়? বিষয়টি একটু ভেবে দেখতে পারি আমরা।

নামাযের ফজিলত যদি হয়ে থাকে খোদার গৌরব প্রশংসা করা, তাহলে এটা নিশ্চয় এবাদতের নমুনা হতে পারে না। বরং স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির আত্ননিবেদনই হতে পারে প্রকৃত এবাদত।

উল্লেখ্য যে, এই সূরা লাহাব নাজিল হওয়ার পরেই আবু লাহাবের ছেলেরা মুহাম্মদ (সাঃ) এর দুই মেয়েকে তালাক দিয়ে ঘর ছাড়া করেছে। পরে হযরত ওসমান তাদের একজনকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন। এখানে বলে রাখা ভাল যে, এই মেয়েরা হযরতের প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজার কন্যা তার পূর্বের স্বামীর ওরসজাত। বৈবাহিত সূত্রে তারা হযরতের মেয়ে হয়েছেন।

প্রশ্ন হলো- নবীজির  মেয়েদের এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কে? নবীজি কি জানতেন না তার এই উদভ্রান্ত বক্তব্যের জন্যে মেয়ে দু’টিকে তালাক পেতে হবে? যদি নাই জানতেন তাহলে এইসব আজগুবি কর্মকান্ড ঘটানোর আগে কেন ভেবে দেখেন নাই এর পরিণতি কি হতে পারে? এটি তার নিবুর্দ্ধিতা ও অদূরদর্শীতার ফল বহন করে। এখানে নিশ্চয় কেউ বলতে পারেন না যে, আল্লাহর অঙ্গুলি নির্দেশেই হয়েছে এতকিছু। আসলে- এটি আল্লাহর নয়, বান্দাদের কাজের পরিণাম।

এভাবে অনেকগুলি আয়াতের উল্লেখ করা যেতে পারে যা আল্লাহ্‌ পাকের প্রশংসা তো দূরের কথা তার অগৌরব করা ছাড়া আর কিছুই হয় না। আরবী অর্থ না বোঝার কারণে অহরহ আমরা তা পড়ে যাই নামাযে বা অন্য কোন এবাদতের ভঙ্গিমায়।

আমরা যদি এসবের মানে জানতাম তাহলে হয়তো সতর্ক হওয়া যেত। আমরা যখন কোরআন খতম পড়ি বা পড়াই এক অশেষ নেয়ামত হাসিলের জন্যে, তখন কি বুঝতে পারি কি পড়ছি আমরা মনোযোগ সহকারে? সূরা কুরাইশ, সূরা কাউসারের মতো অনেক সূরা আছে এমন উল্লেখযোগ্য।

বলছিলাম আরবীতত্ত্ব ও আমাদের অসহায়ত্ত্বের কথা। আমরা মানে না বুঝে অনেক কথাই উচ্চারণ করি আরবীতে যা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌতিক। শুধু আরবী উচ্চারণ করলেই আল্লাহর সান্নিধ্য আদায় করা যায় না। তাকে বুঝতে হলে জানতে হবে তাঁর কালামের তাৎপর্য। একটু সময় নিয়ে খুঁজে দেখুন সূরা লাহাবের অর্থসমূহ আর চিন্তা করে দেখুন তা দিয়ে আপনি মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার এবাদত করা যুক্তিসঙ্গত কি না!

আরও জানুন: আয়েশা (রাঃ) ও সাফওয়ান (রাঃ) বিষয়ক অপবাদ

Leave a Reply