You are currently viewing কা’বামুখি এবাদত কি মূর্তিপূজার সামিল নয়?

কা’বামুখি এবাদত কি মূর্তিপূজার সামিল নয়?

  • Post author:
  • Post last modified:January 30, 2022

হান আল্লাহর তায়ালার বিপরীতে কোন কিছুর (ব্যক্তি বা বস্তু) অবস্থানকে সম্মানিত করা মূর্তি পূজার সামিল। স্রষ্টার বিপরীতে কিংবা তার সমকক্ষ কোন কিছুকে মূল্যায়ন করাটাই মূর্তিপূজা।  কোন কোন ধর্মে মনুষ্য-তুল্য বিভিন্ন অবয়বকে সম্মানিত করা হয় পূজার মধ্য দিয়ে। কোন ব্যক্তিকে অতীব সম্মান দেখানো মানে পূজা করা এবং তার সম্মুখে অবনত হওয়া কিংবা সম্মানের সাথে সমর্পিত হওয়াটাই পূজা।

ইসলামের পণ্ডিতেরা দৃশ্যত: মূর্তি পূজারীদের প্রত্যক্ষভাবে কটাক্ষ করে থাকেন। এমনকি বিরূপ মন্তব্যেও তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখেন। কিন্তু নিজের অজান্তেই তারাও যে মূর্তি পূজা করেন কিঞ্চিৎ ভিন্ন প্রক্রিয়ায় তা তারা বোঝেন না মোটেও।

কা’বামুখি হয়ে এবাদতটিও মূর্তি পূজার সামিল। কারণ, যারা এ কাজটি করেন তারা অদৃশ্য স্রষ্টার উদ্দেশ্যে পশ্চিমমুখী হন। তাদের বিশ্বাস আল্লাহর অবস্থানটি সেখানে। কোন্‌ দলিলের ভিত্তিতে আমরা বিশ্বাস করবো যে আল্লাহর ঠিকানা পশ্চিমে?

এ কথা কারো অজানা নয় যে, আল্লাহ সর্বত্র বিদ্যমান এবং তাঁর অনুসন্ধানে আমাদের পশ্চিমমুখী হতে হবে না। বরং অন্তরের সমস্ত ভালবাসা আর আন্তরিকতায় আমরা তাঁকে অনুসন্ধান করতে পারি প্রতিদিন। কিন্তু যদি আমাদের বিশ্বাস স্থির হয়ে থাকে মক্কার সেই কালো চাদরে ঘেরা প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভ সম ঘরটির দিকে, তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে বেইমানী করা।

আমাদের বোঝা উচিৎ সেই প্রস্তর নির্মিত বিশেষ ঘরটিতে আল্লাহ কোনদিন প্রবেশ করেন নাই, করবেনও না। আল্লাহর অবাধ্যকারী যারা তারাই শুধু সেটিকে অন্তরের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে আল্লাহ তায়ালার বিপরীতে। যারা কা’বা-র পূজারী তারা আল্লাহর পূজারী নয়। ইসলামের প্রতি আনুগত্যে অনেকে ছোটেন হজ্বরে আসওয়াদ (কালো পাথর) নামক আল্লাহর হাতে চুম্বনের উদ্দেশ্যে। এটাই প্রত্যক্ষ নাফরমানী আল্লাহর সাথে।

কা’বা গৃহে আল্লাহর সেই কালো হাতে চুম্বনের মধ্যে দিয়ে যদি মনে করা হয় পাপ মার্জনা হতে পারে তাহলে কালীমূর্তির চরণে আছড়ে পড়া লোকদের পাপসমূহ মোচন হবে না কেন? এটা তে একই মুদ্রার দু’পিঠ। কিন্তু সেই পশ্চিমমুখী কালো পাথরের পূজারীরা যখন হাস্য কৌতুক করেন হিন্দুদের মূর্তিপূজার প্রতি, তখন কি তাদের মনে হয় না তারাও একই কাজ করে চলেছেন একটু ভিন্নতায়। আমরা যখন মক্কা যাঁতাকলে “আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” স্লোগানে চোখের জলে বুক ভাসাই তখন কি আল্লাহ হাত বাড়িয়ে অপেক্ষায় থাকেন আপনার ৭ চক্করের অনুশীলন নজরদারী করার? মোটেও না।

তাই বলছিলাম কা’বাপূজা ও কালীপূজা, কিংবা কালো পাথর পূজা বা দুর্গাপূজা দু’টোই মূর্তিপূজা।

একদিন এক ব্যক্তি বহুপথ পাড়ি দিয়ে মাঝরাতে এক মসজিদে এসে আশ্রয় নিলেন। পথ পরিক্রমায় ক্লান্তিতে আর অবসন্নতায় কখন যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মসজিদের বারান্দায়, তা তার খেয়াল নেই। অতি প্রত্যুষে ফজরের নামাজে আসা ব্যক্তিরা যখন দেখলো সেই অপরিচিত আগন্তুক পশ্চিমদিকে পা দিয়ে ঘুমাচ্ছে, তখন তাকে ডেকে তুলে লম্বা এক ধমকের বয়ান দেওয়া হলো। তার অপরাধ সে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমাচ্ছিলো, যেটা কা’বামুখী। তখন বেচারা আগন্তুক তাদের বললো- ঠিক আছে, দয়া করে তাহলে আপনারা আমার পা’দুটি ঘুরিয়ে দেন যেদিকে আল্লাহ বিরাজ করেন না।

আমার জানা নেই গল্পটির পরবর্তী অংশটুকু। তবে এটা থেকে শিক্ষা পেয়েছি যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। আমাদের পদ যুগল দিয়ে আমরা তাঁর অসম্মান করতে পারি না। করি আমাদের অন্তরের অবস্থান দিয়ে। বস্তুত: আমাদের অন্তরই সমস্ত মন্দতার উৎস। সেখান থেকেই উৎসরণ হয় সমস্ত লোভ-লালসা আর মিথ্যার কারসাজি যা আল্লাহর মহত্ত্বকে অসম্মান করে, অমর্যাদা করে। মুখে মুখে আল্লাহু আল্লাহু করলেই আল্লাহ কর্ণপাত করেন না আমাদের সোরগোলে। যদি নিভৃতে, শ্রদ্ধায় যখন আমরা তাঁর বাধ্যতায় ফিরে আসি, তখন তিনি সারা দেন আমাদের আহবানে।

আল্লাহর অন্বেষণে আমাদের মক্কা যাবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন অন্তরে তাঁকে অনুসন্ধান করার। আসুন, সে কাজটি করি কৃতজ্ঞতায় আর শ্রদ্ধায়।

Leave a Reply