You are currently viewing বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও কোরআনের তথ্য- ১

বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও কোরআনের তথ্য- ১

  • Post author:
  • Post last modified:November 27, 2022

কোরআনের সংখ্যাবিষয়ক অনেক বৈপরীত্য রয়েছে যা সহজেই চোখে পড়ার মতো। আল্লাহ্‌ কি সংখ্যাবিষয়ক এত সাধারণ ভুল করতে পারেন? নিশ্চয় না। তবে কার কারসাজি এগুলো সেটাই প্রশ্ন। নিচের আয়াতগুলি একটু পড়ে দেখুন তাতে বৈপরীত্য চোখে পড়ে কিনা?

إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ(54)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা আ’রাফ) ৭: ৫৪ আয়াতঃ “নিশ্চয়, তোমাদের রব আল্লাহ যিনি আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি সমাসীন হন আরশে। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা ঢাকেন যাতে ওদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে; আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি; যা তারই আজ্ঞাহীন; তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখ; সৃষ্টি করা এবং নির্দেশ দান তাঁরই কাজ।” এবার দেখা যাক অন্যান্য আয়াতগুলি।

إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ ۖ يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَ ۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ إِذْنِهِۦ ۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ (03)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা ইউনূস) ১০: ৩ আয়াতঃ “তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাহীন হন। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রিত করেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশকারী কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব, সুতরাং, তাঁর উপাসনা কর। তবুও কি তোমরা বুঝবে না?”

وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُۥ عَلَى ٱلْمَآءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۗ وَلَئِن قُلْتَ إِنَّكُم مَّبْعُوثُونَ مِنۢ بَعْدِ ٱلْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِنْ هَـٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ (07)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা হূদ) ১১: ৭ আয়াতঃ “তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন যখন তাঁর আরশ পানির উপর ছিল তোমাদের মধ্যে কে আচরণে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য। মৃত্যুর পর তোমরা পুনরুথিত হবে তুমি এ বললেই অবিশ্বাসীরা নিশ্চয় বলবে, এতো (কোরআন) স্পষ্টতঃ অলীক কল্পনা।”

উপরেল্লিখিত আয়াতগুলিতে স্পষ্টতঃ বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা ছয়দিনে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন। অথচ কোরআনের অন্য কয়েকটি আয়াতে এর বৈপরীত্য প্রকাশ পায় ঠিক এভাবে। এখানে বলা হয়েছে তা সৃষ্টি হয়েছে দু’দিনে।

۞ قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَرْضَ فِى يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُۥٓ أَندَادًا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ (09)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা হা-মীম) ৪১: ৯ আয়াতঃ “বল, তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবেই যিনি দু’দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও? তিনি তো বিশ্বজগতের রব।”

وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِىَ مِن فَوْقِهَا وَبَـٰرَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَآ أَقْوَٰتَهَا فِىٓ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَآءً لِّلسَّآئِلِينَ (10)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা হা-মীম) ৪১: ১০ আয়াতঃ “তিনি ভূ-পৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং পৃথিবীতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চারদিনের মধ্যে এতে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের, সমভাবে সকল প্রার্থীর জন্য।”

فَقَضَىٰهُنَّ سَبْعَ سَمَـٰوَاتٍ فِى يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِى كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَـٰبِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ (12)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা হা-মীম) ৪১: ১২ আয়াতঃ “পরে তিনি দু’দিনে সপ্তাকাশ তৈরী করলেন এবং প্রত্যেক আকাশের নিকট তার কর্তব্য ব্যক্ত করলেন এবং তিনি নিম্নের আকাশকে সুশোভিত করলেন প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলেন সুরক্ষিত। ইহা পরাক্রান্ত বিজ্ঞানীর বিন্যস্ত।”

এখানে কি আমরা দুই দিন, চারদিন ও ছয়দিনের তিনটি সংখ্যা দেখতে পাই না? আল্লাহর কথার কি এতো তারতম্য হতে পারে? ধরা যাক তিনি ২ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, +৪ দিনে খাদ্যের ব্যবস্থা করলেন ও +২ দিনে সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন। তাহলে কি দাঁড়ালো? ২+৪+২= ৮ দিন। নয় কি? আল্লাহর আয়াতে এতো অসামনজ্ঞস্যতা হয় কিভাবে? কার যাদুকারী অংকের ফলাফল এটা?

পরসঙ্গত, এরকম আরেকটি ব্যাপার দেখা যেতে পারে। একই ধরনের ভ্রান্তি এখানেও পরিলক্ষিত হয়।

يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِىٓ أَوْلَـٰدِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ ٱلْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَآءً فَوْقَ ٱثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَٰحِدَةً فَلَهَا ٱلنِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَٰحِدٍ مِّنْهُمَا ٱلسُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُۥ وَلَدٌ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُۥ وَلَدٌ وَوَرِثَهُۥٓ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ ٱلثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُۥٓ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُ ۚ مِنۢ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِى بِهَآ أَوْ دَيْنٍ ۗ ءَابَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِّنَ ٱللَّهِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا (11) ۞ وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَٰجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ ٱلرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِنۢ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَآ أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ ٱلرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ ٱلثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّنۢ بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَآ أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَـٰلَةً أَوِ ٱمْرَأَةٌ وَلَهُۥٓ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَٰحِدٍ مِّنْهُمَا ٱلسُّدُسُ ۚ فَإِن كَانُوٓا۟ أَكْثَرَ مِن ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَآءُ فِى ٱلثُّلُثِ ۚ مِنۢ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَآ أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَآرٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ (12)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা আন্‌ নিসা) ৪: ১১, ১২ এবং ৪: ১৭৬ আয়াতে উত্তরাধীকারী আইনের কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতগুলিতে যে কেউ দেখতে পারে যা বিভিন্নভাবে বিভিন্নজনকে বিতরন করা হয়েছে তার সমষ্টি মূল সম্পত্তির অধিক হয়। যা অংক কষলে দেখা যায় ১.১২৫ এবং ১.২৫ কিন্তু কিভাবে? অংকের এত বিশাল ভুল কিভাবে হতে পারে? নিজেই অংকটি করে দেখেন, সত্যি কিনা?

এবার দেখা যাক তৃতীয় বৈপরীত্যটি।

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِٱلْعَذَابِ وَلَن يُخْلِفَ ٱللَّهُ وَعْدَهُۥ ۚ وَإِنَّ يَوْمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ (47)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা হাজ্জ্ব) ২২: ৪৭ আয়াতঃ “তারা শাস্তি ত্বরান্নিত করতে বলে অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিজ্ঞা কখনও ভঙ্গ করেন না, তোমার রবের একদিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।”

تَعْرُجُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ إِلَيْهِ فِى يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُۥ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ (04)

বাংলা অনুবাদঃ (সূরা মা’আ-রিজ) ৭০: ৪ আয়াতঃ “ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্দ্ধগামী হয় এমন একদিনে, যেদিনটি পরিমাণে পৃথিবীর পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।”

উপরের সূরাগুলি লক্ষ্য করলে বলা মুশকিল কোন্‌টি ঠিক। আল্লাহর দিনগুলি কি ১০০০ বছর নাকি ৫০,০০০ বছর? কোন্‌টি সঠিক? বলতে গেলে বিশাল এক সংখ্যার তারতম্য দেখা যায় এখানে। আল্লাহর দিনগুলি কি পৃথিবীর ১,০০০ বছরের সমান নাকি ৫০,০০০ বছরের সমান? কে দেবে তার উত্তর?

আমরা যখন কোরআনের বর্ণনা করি তখন কি অনুধাবন করতে পারি কি এক বিড়াম্বনা সৃষ্টি করে চলেছি নিজেরাই? এটাই যদি হয়ে থাকে আল্লাহর কালাম, তাহলে এটি শুধরাবার সময় হয়েছে এখনই। নতুবা বিভ্রান্তির মায়াজালে জড়াচ্ছি আমরা সবাই। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, আল্লাহ কখনো কোনো ভুল করতে পারেন না। ভুল করি আমরা যারা তাঁর নামে তাঁকেই বেচা-কেনা করি। আর অযথা চিৎকার করি ওয়াজ-নসিয়তে।

Leave a Reply