You are currently viewing কোরআন আবির্ভাবের ইতিহাস (সপ্তম খণ্ড)

কোরআন আবির্ভাবের ইতিহাস (সপ্তম খণ্ড)

  • Post author:
  • Post last modified:September 2, 2021

কোরআনের সাংঘর্ষিক রূপ ও বৈপরিত্যের চিত্রঃ

কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আয়াতের সাংঘর্ষিক রূপ ও বৈপরিত্যের প্রকাশ লক্ষ্যনীয়। অবস্থাদৃষ্টে প্রশ্ন হওয়া স্বাভাবিক- তবে কি আল্লাহও ভুল করতে পারেন? নাউজুবিল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌ তায়ালার যে ভুল হতে পারে তা অগ্রহণযোগ্য। তবে আল্লাহর বান্দাদের দ্বারা তা অতি সহজ কাজ। এর প্রমাণ আমরা ইতিপূর্বের আলাচনায় যথেষ্ঠ পরিমাণে দেখেছি। অতএব, প্রিয় পাঠকৃন্দ, আপনারা পরবর্তী আলোচনার বিষয়বস্তুসমূহ নিজ বিচার-বুদ্ধিতে বিবেচনা করে নেবেন। আমি শুধু বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে যাচ্ছি বিশ্লেষনের দৃষ্টিভঙ্গিতে।

প্রথম সাংঘর্ষিক রূপঃ

কোরআনের অনেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে কোরআন নাজিল হয়েছে আরবী ভাষায় অর্থাৎ আরবী উচ্চারণে (সূরা আশ-শো’আরা ২৬: ১৯৫, সূরা রা’দ ১৩: ৩৭, সূরা আশ-শুরা ৪২: ৭, সূরা-যুমার ৩৯: ২৮, সূরা যুখরুক ৪৩: ৩) দ্রষ্টব্য। অথচ অন্ততপক্ষে কোরআনের দু’টি অন্য অংশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে অনারবীয় ভাষার কথা (সূরা নাহল ১৬: ১০৩ ও সূরা হা-মীম সেজদাহ ৪১: ৪৪) দ্রষ্টব্য। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো–  কিতাব অনারবীয় ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষার। এরপর বলা হয়েছে যে, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার, ইত্যাদি।

আস্‌ সূয়ুতি তার ইতকান গ্রন্থে (২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৫) উল্লেখ করেছেন যে অনেক কোরআন বিশেষজ্ঞ (যাদের মধ্যে সাফিই, ইবন আল-তাবারি উল্লেখযোগ্য) ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন এবং তাদের নির্ভরতা ওইসব আয়াতসমূহের উপর। আহমাদ শাকির সম্পাদিত গ্রন্থ “আল-রিসালা”-র (পৃষ্ঠা ৪১) উদ্ধৃতি দিয়ে, সূয়ুতি বলেন, “এটা বলা হয়ে থাকে যে আল্লাহর গ্রন্থ আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় মিশ্রিত হয় নাই তার প্রমাণ কোথায়?” প্রমাণ হলো গ্রন্থটি নিজেই।

অতঃপর সাফিই উল্লেখিত আয়াতসমূহের উদ্ধিৃতি (১৬: ১০৩ ও ৪১: ৪৪) তুলে ধরেন। তিনি এই আয়াতসমূহের একটি দিক নির্দেশনা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাতে অসামর্থ হয়েছেন। মুসলিম বিশেষজ্ঞদের মধ্যে হযরত ইবন আব্বাস, মুজাহিদ, ইবন জুবাইর, আকরামা এবং আতা চেয়েছিলেন এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবার কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছেন।

ডঃ মুহাম্মদ রাজাব যিনি তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর সমাধান দিতে চেয়েছিলেন নিজের লেখা (Solidarity) আল-আদামুন ম্যাগাজিন এর (এপ্রিল ১৯৪৯) সংকলনে।

আল্লামা আস্‌ সূয়ুতি তার “আল ইতকান” গ্রন্থের (২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৮-১১৯) কোরআনের ১১৮টি অনারবীয় শব্দের তালিকা লিপিবদ্ধ করেছেন। ইবন আব্বাসসহ কতিপয় আরো কিছু নামকরা মণীষীরা স্বীকার করেছেন যে, কতিপয় কোরআনের শব্দসমূহ পারস্যষীয়, ইথিওপিয়ান এবং নাবাতিয়ান (পৃষ্ঠা ১০৫)। ডঃ বাইয়ুমী যিনি সূয়ুতির এই দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতকে সমর্থন করেছেন। এইসবের মুখোমুখি হওয়ার পর সূয়ুতি তার পুস্তকের পৃষ্ঠা ১০৬ এ বলেছেন, “কিছু অনারবীয় শব্দের কারণে কোরআন অনারবীয় হতে পারে না।”

সে কারণেই এ কথা বলা যায় যে, আমরা জানি কোরআন আরবীয় গ্রন্থ, কিন্তু এ কথাও বলা যায় যে, এতে অনেক অনাবরীয় শব্দের সংমিশ্রণ রয়েছে। এটা অবশ্যই সাংঘর্ষিক ও বৈপরিত্যের শামিল যেখানে পাঁচটি দশটি নয়, রয়েছে ১১৮টি অনারবীয় শব্দ। হয়তো বা নবীজি নিজেই জানতেননা যে, তার আনীত কোরআনে রয়েছে অনারবীয় শব্দমালার সংমিশ্রন। তিনি নিজেও জানতেন না যে এতে রয়েছে– পারস্যষীয়, ইথিপিয়, বারবার, টার্কিশ ও নাবাতিয়ান শব্দমালার সংযোজন। অথচ তিনি দাবি করেছেন সমগ্র কোরআনে রয়েছে প্রকৃত আরবীয় ভাষা।

দ্বিতীয় সাংঘর্ষিক রূপঃ

‘আল ইতকান’ এর ৩য় খন্ডেই, পৃষ্ঠা ৮৩ তে সূয়ুতি ব্যাপকভাবে বলেছেন এই সাংঘর্ষিক রূপের কথা। তিনি বলেছেন, কোরআনে ক্রটিসমূহের কথা যা এর সাংঘর্ষিক রূপের প্রকাশ। তিনি বলেন- কোরআনে এমনসব বিষয় রয়েছে যা হযরত ইবন আব্বাস উত্তর দিতে চান নাই। একজন ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো যে, কোরআনে উল্লেখ রয়েছে যে বিচারের দিন হবে একহাজার বছরের সমান দীর্ঘ এবং অন্য আয়াতে আর তা বলা হয়েছে যে এটা পন্ঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ। উত্তরে ইবন আব্বাস বলেছেন, এই দুটি দিনগুলিতে আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁর কোরআনে উল্লেখ করেছেন এবং তিনিই এ বিষয়ে ভাল জানেন। এটা ইবন আব্বাসের একটি সততার সদুত্তর, যাতে করে তিনি কোন যেনতেন ব্যাখ্যা দিতে চান নাই।

যখন ইবন মুসাইইবকে (যিনি নবীজির খুব ঘনিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন) এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি উত্তরে বলেছেন, ইবন আব্বাস আমার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি তিনি এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। বিষয়টি তিনি এভাবেই এড়িয়ে গিয়েছেন।

তৃতীয় সাংঘর্ষিক রূপঃ

একই অংশের ৭৯ পৃষ্ঠায় সূয়ুতি বলেছেন যে, কোরআনের সূরা আন-আম ২২-২৩ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, বিচারের দিনে মুশরিকরা আল্লাহর কাছ থেকে লুকাবার চেষ্টা করবে। অথচ সূরা আল-নিসা ৪২ আয়াতে কোরআনের সাংঘর্ষিক আয়াতে বলা হয়েছে তারা আল্লাহর কাছ থেকে কিছুই গোপন করতে পারবে না। সূয়ুতি চেষ্টা করেছেন এটি নিজ বিবেচনায় সাংঘর্ষিকতা এড়িয়ে যেতে এবং তিনি বলেছেন যে, তারা তাদের মুখের কথায় তা গোপন করার চেষ্টা করবে কিন্তু তাদের হাত-পা তা স্বীকার করবে। অথচ ব্যাপারটি অমিমাংশিত থেকে যাচ্ছে কারণ তাদের হাত-পা তা স্বীকার করবে অথচ তারা তা স্বীকার করবে না। এর মানে এই নয় যে, তারা আল্লাহর কাছ থেকে তা লুকাবার চেষ্টা করবে না।

This Post Has One Comment

Leave a Reply