You are currently viewing তার অবিচারের বলি যখন এক নিরপরাধ ব্যক্তি
Picture credit: Indianexpress.com

তার অবিচারের বলি যখন এক নিরপরাধ ব্যক্তি

  • Post author:
  • Post last modified:May 22, 2021

সুবিচার পাওয়াটা মানুষের মৌলিক অধিকার।  আর সেই অধিকার সমাজের ছোট-বড়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য।  এই অধিকার ক্ষুন্ন হলে আর তা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  তবুও এর ব্যাপ্তি ও প্রসারতা লক্ষ্যণীয় সমাজের স্তরে স্তরে।  কিন্তু একজন সুস্থ বিবেকবান ব্যক্তি তার নিজস্ব বুদ্ধি-মত্তায় কখনো সখনো ব্যর্থ হন সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে।  যদি সুবিচারে ব্যর্থ হন, তাহলে তার সারা জীবনে আক্ষেপ থেকে যায় তার অযোগ্য বিচারের কালিমায়।

আল্লাহর নবীরা আল্লাহ্ প্রদত্ত ওহীর মাধ্যমে ঐশ্বরিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করে থাকেন। তাই তাদের জীবনে ভূল-ভ্রান্তি হতে পারে না।  কিন্তু নিচের এই আয়াতটি পড়ে দেখুন তাতে কি বলা হয়েছে।

إِنَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَـٰبَ بِٱلْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَآئِنِينَ خَصِيمًا (١٠٥) وَٱسْتَغْفِرِ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا (١٠٦)

বাংলা অর্থ: “তোমার প্রতি সত্য সহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি আল্লাহ্ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার কর, আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ সমর্থন করোনা, (১০৬) এবং আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর, আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” – সূরা আন্ নিসা ৪ঃ ১০৫, ১০৬)।

সূরাটির শানে নযুল এই রকমঃ উল্লেখিত কয়েকটি আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার পরিপেক্ষিতে নাযিল হয়।  ঘটনাটি এই মদীনায় বনী উবাযরাক নামক গোত্রের তুমা নামক এক কপট মুসলমান প্রতিবেশী সাহাবী হযরত রেফাআ (রাঃ)  এর ঘরে সিঁদ কেটে এক বস্তা আটা ও যুদ্ধাস্ত্র চুরি করে এবং তা তারই এক ইহুদী বন্ধুর ঘরে আমানত রাখে।  সকালে আটার মালিক খোঁজ করে দেখতে পেল উহা তুমার গৃহ পরে উহা ইহুদী গৃহ পর্যন্ত আটার চিহ্ন বিদ্যমান দেখলো।  তুমাকে ঘটনা সম্পর্কে বললে সে কসম খেয়ে উহা অস্বীকার করলো পরে ইহুদীকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে স্বীকার করে বললো ওমুক মুসলমান আমার নিকট আমানত রেখেছে।

এদিকে তুমা তার গোত্রীর লোকজনসহ বহুলোক একত্রিত হয়ে, ইহুদীর উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করলো।  অবশেষে এর মিমাংসার জন্য রসুল (সাঃ) এর দরবারে মোকাদ্দমা পেশ করা হল।  তুমা যেহেতু শপথ করে বলেছে আর মাল ইহুদীর গৃহ থেকে উদ্ধার হয়েছে, রসুল (সাঃ) ধারণা করলেন মুসলমান মিথ্যা কসম করে না, তাই তিনি ইহুদীকে চোর সাব্যস্ত করে তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দানের ইচ্ছা করলেন।  ইতিমধ্যে আয়াতগুলি নাযিল হয়, তুমা দোষী সাব্যস্ত হলো, আর ইহুদী দোষমুক্ত হলে পরে মুনাফিক তুমা পলায়ন করলে অল্পদিন পর প্রাচীর চাপা পড়ে মারা যায় (জামাকসারির তফসীর দ্রষ্টব্য, নূরানী কোরআন শরীফ, সোলেমানিয়া বুক হাউস- ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৪১)।

অবস্থাদৃষ্টে দেখা যায় যে, নবীজি এখানে সত্য ঘটনাটি বুঝতে না পেরে অন্যায়ভাবে বিচার করেছেন এবং একজন নিরীহ ব্যক্তির হাত কেটে ফেলার জন্য দায়ী হয়েছেন।  আর আল্লাহ্ তাকে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

আল্লাহর নবী হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তিনি সত্যকে উপলদ্ধি করতে পারলেন না তা প্রশ্নবিদ্ধ।  তবে না জেনে যে কাজটি তিনি করেছেন তার জন্যে আল্লাহর হুকুম হয়েছে তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনা করার এ কথাগুলিও আমাদের উচ্চারণ করতে হবে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে? এটাও কি আমাদের এবাদতের মাধ্যম?

“আরবী একটি শব্দ উচ্চারণে দশটি সওয়াব হাসিল হয়,” এই অন্ধ শিক্ষার বিপর্যয়ে সত্যগুলো হারিয়ে গেছে বহু পূর্বে।  তাই বিবেচনার কোন সুযোগ হয় না কারো।  তাছাড়া এর বিপরীতে কথা বলার দুঃসাহস হবে কার? সে তো নাফরমান, নাস্তিক এইসব বিশেষণে অভিষিক্ত হবে ধর্মের অন্ধ অনুসারীদের মতে। তাদের জীবনে আল্লাহর দিক দর্শনের চেয়ে ধর্মের রীতিনীতি অনুসরণ করাই শ্রেয়।

সত্য-মিথ্যা বিভাজন করা অত্যান্ত কঠিন কাজ, আর সে কাজে আগ্রহ নেই কারো। আগ্রহ রয়েছে মন্দতার পক্ষে চিৎকার করার প্রবনতায়।  সেইসাথে রয়েছে জনস্রোতে হারিয়ে যাওয়ার আগ্রহ।  সবাই যা বলে তাইই অবধারিত বিবেচনা, নিজস্ব কোন চিন্তা শক্তির ব্যবহার যেন হারিয়ে গেছে বিবেকবিবর্জিত মানুষের কাছে।

আসুন আল্লাহ্ পাকের দেওয়া এই অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মেধাকে জাগিয়ে তুলি মননশীলতার প্লাবণে। সেইসাথে অনুধাবন করতে শিখি অল্লাহ্ পাকের অন্তর দাহ।

আমাদের অবিবেচনায় আমরা মহান আল্লাহকে খাটো করেছি বহুবার। নিজের দুর্বলতাকে ঢাকতে গিয়ে তাঁকে দোষারোপ করেছি অহরহ। আমাদের আচরণে কত নিরীহ মানুষ যে বিতাড়িত হয়েছে তাঁর সান্নিধ্য থেকে সে কথা বলাই বাহুল্য। একটু প্রশ্ন তুলতেই “কাফের” হয়ে যাবার থাকে সমূহ সম্ভাবনা। তাই প্রশ্ন নয়, চোখ, কান বন্ধ করে অন্ধদের মতো আচরণ করাটাই হয়ে দাড়ায় অনিবার্য পদক্ষেপ। সে কারণেই আজো আমরা পড়ে আছি অন্ধকারের অতল গহ্বরে।

যে আয়াতটি নিয়ে এত দূর আসা তাতে বলা হয়েছে- “আল্লাহ্ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার কর,” আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ সমর্থন করোনা। যদিও কথাটি তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলেছেন সে কথানুযায়ী আমরা পারি তা থেকে শিক্ষা নিতে।  যদি আমরা নিজেকে প্রশ্ন করি- কি জানিয়েছেন তিনি আমাদেরকে যা দিয়ে আমরা মানুষের মধ্যে বিচার করতে পারি?

যদি আমরা বুঝতেই না পারি কি জানিয়েছেন তিনি আমাদেরকে তাহলে ভুল তো হবেই। কিভাবে আমরা অন্যের বিচার করতে পারি যদি না আমরা অনুধাবন করতে পারি আল্লাহ্ তায়ালার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা? সুর করে মন্ত্র পাঠ করলেই যেমন ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়া যায় না, তেমনি সুমধুর উচ্চারণে কোরআনের আয়াতগুলি পড়ে গেলেই আল্লাহর খাশ বান্দা হওয়া যায় না। এখানে প্রয়োজন অন্তর নিংড়ানো ভালবাসা আর শ্রদ্ধার অকৃত্রিম প্রকাশ, এটাই এবাদতের চাবিকাঠি। 

নবীজির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে একটি নিরাপরাধ ব্যক্তির হস্তকর্তন করা হয়েছে।  পরবর্ত্তীতে তার এই ভুলের জন্যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।  কিন্তু সে ইহুদি ব্যক্তিটি নবীজির অবিচারের বলি হয়ে চিরদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছে হাত কাটা জীবন। এর কোন বিচার হয় নাই। কীভাবে তিনি এত বড় ভুল করতে পেরেছেন? আল্লাহ্ ক্ষমাশীল তিনি তাই ক্ষমা করতে পারেন। তবে আর কত নিরপরাধ ব্যক্তির জীবনকে তিনি নষ্ট করেছেন তার বর্ণনা পরবর্ত্তীতে নিয়ে আসবো আপনাদের সামনে।

আরও জানুন: মুহাম্মদ (সাঃ) এর জিব্রাইল ভ্রম ও নবীত্ব বিভ্রাট

Leave a Reply