You are currently viewing তোমার পাপের জন্য ক্ষমা চাও: গোনাহগার মোহাম্মদ

তোমার পাপের জন্য ক্ষমা চাও: গোনাহগার মোহাম্মদ

  • Post author:
  • Post last modified:December 22, 2021

গেই বলেছি সূর করে কোরআন পড়ার চেয়ে কোরআন পড়ে তা বোঝা অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ কোরআনের অনেক আয়াতই আমরা প্রতিনিয়ত উচ্চারণ করি মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে কান্ডজ্ঞানহীন মানুষের মতো, আর ভাবি তাতে তিনি নিশ্চয় ধন্য হয়েছেন। কিন্তু যখন অনুধাবন করতে সক্ষম হই কি বলেছি তাঁকে তখন নিশ্চয় অনুশোচনায় দগ্ধ হবারই কথা। দেখুন এই আয়াতটির প্রকৃত অর্থ-

   إِنَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَـٰبَ بِٱلْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَآئِنِينَ خَصِيمًا (105) وَٱسْتَغْفِرِ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا (106)

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার কর, আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ সমর্থন করো না। এবং আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করো, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা আন-নিসা ৪: ১০৫-১০৬ আয়াত)।

উল্লেখিত আয়াতটির শানে নুযুল বর্ণিত হয়েছে এইভাবেঃ উল্লেখিত কয়েকটি আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়। ঘটনাটি মদীনায় বণী উবাযরাক নামক গোত্রের তুমা নামক এক কপট মুসলমান প্রতিবেশী সাহাবী হযরত রেফাআ (রাঃ) এর ঘরে সিঁদ কেটে এক বস্তা আটা ও যুদ্ধাস্ত্র চুরি করে এবং তা তারই এক ইহুদী বন্ধুর ঘরে আমানত রাখে। সকালে আটার মালিক খোঁজ করে দেখতে পেল উহা তুমার গৃহ পর্যন্ত আটার চিহ্ন বিদ্যমান দেখলো। তুমাকে ঘটনা সম্পর্কে বললে সে কসম খেয়ে উহা অস্বীকার করলো। পরে সেই ইহুদীকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে স্বীকার করে বললো ওমুক মুসলমান আমার নিকট আমানত রেখেছে। এদিকে তুমা তার গোত্রীয় লোকজনসহ বহুলোক একত্রিত হয়ে, ইহুদীর উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করলো।

অবশেষে এর মীমাংসার জন্য রাসূল (সাঃ) এর দরবারে মোকদ্দমা পেশ করা হলো। তুমা যেহেতু শপথ করে বলছে, আর মাল ইহুদীর গৃহ হতে উদ্ধার হয়েছে, রাসূল (সাঃ) ধারণা করলেন মুসলমান মিথ্যা কসম করে না। তাই তিনি ইহুদীকে চোর সাব্যস্ত করে তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দানের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। অতঃপর আয়াতগুলি নাযিল হয়। তুমা দোষী সাব্যস্ত হলো, আর ইহুদী দোষমুক্ত হলো, পরে মুনাফিক তুমা পলায়ন করলে অল্পদিন পর প্রাচীর চাপা পরে সে মারা যায়।

জামাকসারীর তাফসীরে বলা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অবিবেচনা করে ইহুদীর হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দিলে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয় (আল-জামাকসারীর তাফসীর দ্রষ্টব্য)।

আল্লাহর রসূল কিভাবে এই অবিচার করলেন তা বোধগম্য নয়। তবে তার এই অবিচারের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। অর্থাৎ এই বিষয়ে তিনি আল্লাহর ইচ্ছা বুঝতে অক্ষম হয়েছেন এবং তাঁর সুষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্ত্তীতে তাকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

নবীজির অবিচারের আরো বর্ণনা রয়েছে হাদীসের বিভিন্ন অধ্যায়ে। সহীহ বোখারী শরীফের ২৮২০ নং এ দেখা যায়- হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মক্কা প্রবেশের সময় তার মাথায় শিরস্থান পরিহিত ছিল। যখন তিনি মাথা থেকে শিরস্থান নামিয়ে রাখলেন, তখন একজন লোক এসে তাকে জানাল যে, ইবনে খাতাল কাবাগৃহের গেলাফ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাকে হত্যা কর। সহীহ বোখারী হাদিস, ২৮২০, পৃষ্ঠা ৩৯৯।

নিজে হত্যা করা বা কাউকে দিয়ে হত্যা করাতে বাধ্য করা, দু’টিই অত্যান্ত গর্হিত কাজ ও অপরাধ। যে কোন দেশের আইনের দৃষ্টিতে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাহলে আল্লাহর নবী কিভাবে তা করতে পারেন? তিনি কি বিচারের উর্দ্ধে? নাকি মানবতার আর্তনাদকে পদদলিত করার বদ অভ্যাসে অভ্যস্থ তিনি?

যাইহোক, এ বিষয়ে গুরুজনরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে আমার কাছে মনে হয় এ যেন এক অসহায়ত্বের বিবর্ণ চিত্র আর বিকৃত হিংসার ভয়ংকর রূপ।

ঘুমন্ত অবস্থায় তার নির্দেশে আবু রাফে কে হত্যা করা হয়ঃ

হযরত বারা’ ইবনে আয়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবু রাফে’কে হত্যা করার জন্য তার কাছে আনসারদের একদল লোক পাঠালেন। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রাত্রিবেলা তার বাড়ীতে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হত্যা করেছিল। (সহীহ বোখারী হাদীস নং ২৮০৪, পৃষ্ঠা ৩৯৬)। নবীজির প্রত্যক্ষ নির্দেশেই হয়েছিল এইসব ঘটনা। এতে কারো মনে কোন দয়ার উদ্ভব হয় নাই। দ্বিতীয় আরেকটি আয়াত দেখা যাক যাতে স্পষ্টতঃ তাকে আবার ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

لِّيَغْفِرَ لَكَ ٱللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنۢبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُۥ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَٰطًا مُّسْتَقِيمًا (2)

বাংলা অর্থঃ যেন, তিনি তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ক্রটিসমূহ মার্জনা করবেন এবং তোমার প্রতি তার নেয়ামত পূর্ণ করবেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করবেন (সূরা ফাতহ্‌ ৪৮: ২ আয়াত)।

আয়াতটি একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই আয়াতে নবীজিকে তার অতীত ও ভবিষ্যৎ ক্রটিসমূহের মার্জনার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তিনিও পাপ বা ক্রটি বহির্ভূত ছিলেন না যা সচরাচর আমরা মনে করে থাকি। আর তাই তার মার্জনার প্রয়োজন হয়েছে। কারন, আল্লাহ কোন ক্রটি বিচ্যুতি গ্রহণ করতে পারেন না। এ বিষয়ে আরো দেখা যায় সূরা মুহাম্মদ এর ৪৭: ১৯ আয়াত।

فَٱعْلَمْ أَنَّهُۥ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسْتَغْفِرْ لِذَنۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ ۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَىٰكُمْ (19)

বাংলা অর্থঃ অতএব তুমি জেনে রাখো, আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই তাই তোমার নিজের এবং বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের জন্য ক্ষমা চাও। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও আবাসস্থল সন্বন্ধে জ্ঞাত (সূরা মুহাম্মদ ৪৭: ১৯ আয়াত)

এই আয়াতটিতে আল্লাহ নবীজিকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন এবং সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমরা যখন নামাযে দাঁড়িয়ে বা ওয়াজ মাহফিলে এইসব আয়াত অনর্গল উচ্চারণ করি সুরেলা কন্ঠে, তখন কি নবীজিকে আমরা স্মরণ করিয়ে দেই না যে, তার ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন? এটা কি যুক্তিসঙ্গত মনে হয়? তাই বলছি আমাদের জানা উচিৎ কি উচ্চারণ করছি আমরা ভিন্ন ভাষায়? অর্থাৎ জানা প্রয়োজন আয়াতের বাংলা অর্থসমূহ। তাহলে অনেক জটিলতার অবসান হবে নির্বিঘ্নে।

“তুমি ক্ষমা চাও,” এ কথাটি বারেবারে বলা হয়েছে কোরআনের বিভিন্ন সূরায়। আর তা বলা হয়েছে আমাদের নবীজিকে। কারণ, নিশ্চয় তার জীবনে অসীম ক্রটি-বিচ্যুতি ছিল। ছিল ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। তিনি তো আর ফেরেশতা ছিলেন না। ছিলেন আমাদের মতোই রক্ত-মাংসের মাটির মানুষ। তিনি অসাধারণ মানুষ বা নুরের তৈরী হলে তার আর প্রয়োজন ছিল না। এবারে দেখুন সূরা মূমিন এ কি বলা হয়েছে।

فَوَقَىٰهُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِ مَا مَكَرُوا۟ ۖ وَحَاقَ بِـَٔالِ فِرْعَوْنَ سُوٓءُ ٱلْعَذَابِ (45)

বাংলা অনুবাদঃ অতএব তুমি ধৈর্য দর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি ক্ষমা চাও তোমার পাপের জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের সুপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর(সূরা মু’মিন ৪০: ৫৫ আয়াত)।

এই আয়াতটিও আমরা কোন না কোনভাবে প্রায়শঃই উচ্চারণ করি অর্থাৎ পড়ি। তখন এর মানে কি দাঁড়ায়, আমরা তখন যেন নবীজিকে স্মরণ করিয়ে দেই যে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর সুপ্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে হবে। ঠিক কি না?

কেন তাকে বারে বারে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তা এড়িয়ে গেছেন ইসলামী তত্ত্ববিদেরা। যাকে আমরা অত্যান্ত মহিমান্নিত মনে করেছি, ভেবেছি তার সাতখুন মাফ অর্থাৎ তার সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছেমতো হয়েছে, তাকে বারংবার ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা সূরা নাযিল করলেন কেন?

সূরা নাছর এ আবার তাকে বলা হয়েছে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা। বলা হয়েছেঃ

فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَٱسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ تَوَّابًۢا (3)

বাংলা অনুবাদঃ আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী (সূরা নাসর ১১০: ৩ আয়াত)।

এই আয়াতের মধ্য দিয়ে কি পরিষ্কার বোঝা যায় না যে, আল্লাহর কাছে নবীজির ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ রয়েছে? ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলার কারণ রয়েছে নিশ্চয়। আল্লাহ তো আর অনর্থক তাকে ক্ষমা চাইতে বলেন নাই। কিন্তু আমরা যখন এই আয়াতসমূহ উচ্চারণ করি তখন কি আমরাও তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করি না? একটু চিন্তা করার বিষয় বটে। তার (নবীজির) প্রতি এ নির্দেশ থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমরা যখন সে কথাই উচ্চারণ করি তখন কি মনে হয় না আমরা তাকে অহরহ নির্দেশ দিচ্ছি ক্ষমা চাওয়ার জন্য?

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমরা যখন চিৎকার করে গলা ফাটাই তখন কি মনে পড়ে না আল্লাহর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমটিও হতে পারে বাংলা। নতুবা এটি হতে পারে ভ্রান্তিযুক্ত অনেক অপরাধ?

আসলে মুক্ত চিন্তা-ভাবনা করাটাই যেন অপরাধ এ দেশে। আগেকার মুণী-ঋষিরা যা বলে গেছেন তার বাইরে যেন কোন পথ আর খোলা নাই। তাই আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথনের পরিবর্তে তাঁকে পুনঃরাবৃত্তি করে শোনাই তাঁরই বাক্য। এসব কারণেই বিশাল ব্যবধানের দেয়ালে আটকা পড়ি আমরা। অবস্থাদৃষ্টে পীর ফকিরের কেরামতি বৃদ্ধি পায় আমাদের পথ দেখানোর উসিলায়। আসলে কোরআন পড়ে বোঝা উচিত কি বলা হয়েছে সেখানে। আর কি করা উচিত আমাদের। আল্লাহ তায়ালা হয়তো সেই আশাতেই দিন গুনছেন যেন আমাদের বোধদয় হয়।

পক্ষান্তরে, নবীজি সারা জীবন আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়েছেন। আল্লাহ যদি তার প্রকৃত বন্ধু হতেন তাহলে তাকে বারেবারে ক্ষমা চাওয়ার হুকুম দিবেন কেন? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্রষ্টা এবং পৃথিবীর সর্বত্র তাঁর বিচরণ, সব কর্মকান্ডে তাঁর দৃষ্টি রয়েছে। কেউ ফাঁকি দিতে পারে না তাকে। তাই ভুল হওয়া মাত্রই আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত, আর প্রয়োজন সে পথ থেকে সরে দাঁড়ানো।

নবীজি যখন জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন, যখন প্রচন্ড অসুখে তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো তখনও তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আর উদ্বিগ্নচিত্তে উপরের দিকে বারেবারে চোখ তুলেছেন। প্রার্থনা করেছেন—“হে আল্লাহ! আমাকে মার্জনা করুন! আমার প্রতি সদয় হোন এবং আমাকে আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধুর সান্নিধ্যে পৌঁছিয়ে দিন।” (আসাহহুস সিয়ার, পৃষ্ঠা ৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত)। আজো আমরা তার জন্য দোয়া চাই প্রতি আযান শেষে যেন তার বেহেশত নসীব হয় (হে আল্লাহ এই নামাযের তুমিই প্রভু। দান কর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বেহেশত যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে করেছিলে। তুমিতো ভঙ্গ করো না অঙ্গিকার)।

আমাদের এই দোয়ায় তার বেহেশত নসীব হয়েছে কিনা বলা মুশকিল। যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারতাম তার বেহেশত নসীব হয়েছে তাহলে তো আনন্দে হাততালি দিতে পারতাম। সেইসাথে বন্ধ করতাম এই আযানের দোয়া পড়ার অনুশীলন। আজানের দোয়ার বাংলা অর্থ পড়লে বোঝা দুষ্কর নয় যে সেটা কোন্‌ Tense বা কালের কথা বলে। তাছাড়া তিনি যদি বেহেশতে পদার্পণ করেই থাকেন তাহলে তো আর এই দোয়া পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। একটু ভেবে দেখুন তো ঠিক কি না?

আপনি কতো বছর থেকে তার (নবীজির) জন্যে দোয়া করে আসছেন? আর কতদিন করে যাবেন এই কাজটি? আপনার দোয়ার জোড়ালো ধারে কি তিনি পৌঁছে যাবেন বেহেশতের দরবারে? মোটেও না। তার জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডের হিসেব তাকে দিতে হবে আল্লাহর কাছে। সেই চিন্তায় জীবনের শেষ প্রান্তে, মৃত্যুশয্যায় তিনি বারেবারে আকুতি জানিয়ে কেঁদেছেন আল্লাহর কাছে। চেয়েছেন যেন তাকেও দেওয়া হয় আল্লাহর ঘনিষ্ঠজনদের সাথে স্থান বেহেশতে। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে নিজেই পড়ে দেখুন সূরা আশ-শুআরা ২৬: ৮২-৮৩।

وَٱلَّذِىٓ أَطْمَعُ أَن يَغْفِرَ لِى خَطِيٓـَٔتِى يَوْمَ ٱلدِّينِ (82) رَبِّ هَبْ لِى حُكْمًا وَأَلْحِقْنِى بِٱلصَّـٰلِحِينَ (83)

বাংলা অনুবাদঃ এবং আমি আশা করি কিয়ামতের দিন তিনিই আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান দান করুন এবং আমাকে নেককার লোকদের শামিল করুন।

এবার আসাহহুস সিয়ার পুস্তকটির ৫২৬ পৃষ্ঠায় চোখ রাখুন, দেখুন একই কথার পুনরাবৃত্তি রয়েছে কিনা সেখানে।
এবার একটু ভেবে দেখুন কেনো আপনাকে-আমাকে দোয়া চাইতে হয় তার জন্যে। বিচারের দিনে তাকেও ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে হবে হাসরের ময়দানে। আপনার দিকে তাকাবার তার সময় থাকবে না। নিজের পাপের বোঝা কাঁধে দিয়ে তাকেও দাঁড়াতে হবে বিচারের সুদীর্ঘ লাইনে। আর মনে মনে বলতে হবে আল্লাহ মাফ করো আমায়।

Leave a Reply