You are currently viewing ইসলাম শান্তির ধর্ম?

ইসলাম শান্তির ধর্ম?

  • Post author:
  • Post last modified:April 24, 2022

মাশাল্লাহ্! এটাই তো আমরা জানি, শুনে এসেছি বহুকাল ধরে। কিন্তু এখন যখন কোরআনের পাতায় চোখ পড়ে তখন দেখি এর উল্টো চিত্র। শুধু তাই নয়, এতে দেখা যায় এক ভয়ংকর চিত্র প্রতিশোধের আর আক্রমণের। তবে কি ধরে নিতে হবে এতদিন যা শুনে এসেছি সেসব মিথ্যা?

অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যায় অন্যদের, বিশেষতঃ অমুসলিমদের প্রতি আক্রমণের উদ্বাত্ত আহ্‌বান। আল্লাহ কি কাউকে হত্যা করার জন্যে (Sole Agency) বিপণন প্রতিনিধিত্ব দিয়েছেন ইসলামী যুদ্ধবাজদের?

চলুন দেখা যাক সূরা বাক্বারাহ্‌ এর ২৫৬ নং আয়াতটি। এখানে বলা হয়েছে

لَآ إِكْرَاهَ فِى ٱلدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشْدُ مِنَ ٱلْغَىِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِٱلطَّـٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسْتَمْسَكَ بِٱلْعُرْوَةِ ٱلْوُثْقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَا ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (٢٥٦)

বাংলা অনুবাদঃ “ধর্মে কোন জোর-জবরদস্তি নেই, নিশ্চয় সুপথ প্রকাশ্যভাবে কুপথ থেকে পৃথক হয়েছে-“

এছাড়াও একই সূরার ২৭২ আয়াতে বলা হয়েছে-

۞ لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَىٰهُمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يَهْدِى مَن يَشَآءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ٱبْتِغَآءَ وَجْهِ ٱللَّهِ ۚ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (٢٧٣)

বাংলা অনুবাদঃ “তাদের সৎপথে গ্রহণের দায় তোমার নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন।”

অত্যান্ত সুন্দর কথা এগুলো। কিন্তু পরক্ষণেই লক্ষ্য করা যায় অন্য আয়াতগুলোতে বিপরীত চিত্র।

দেখুন সেই চিত্রটি। সূরা তাওবাহ্‌ ৯: ২৯ আয়াত।

قَـٰتِلُوا۟ ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلْحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ حَتَّىٰ يُعْطُوا۟ ٱلْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَـٰغِرُونَ (٢٩)

বাংলা অনুবাদঃ “যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে না ও পরকালেও নয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা নিষিদ্ধ করেছেন তা নিষিদ্ধ করে না এবং সত্য ধর্ম অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে অনুগত্যের নিদর্শন স্বরূপ স্বেচ্ছায় জিযিরা (কর) দেয়।”

উপরেল্লেখিত আয়াতটি কি সাংঘর্ষিক নয় পূর্বের আয়াতগুলির সাথে?

তাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা……কাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে? যিহুদীদের প্রতি ঈসা আল-মাসীহে্‌র অনুসারীদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ স্বয়ং তা করেছেন। তাদের উপর চড়াও হয়ে হবে কেনো? কেনো তাদের বাধ্য করা হবে জিযিরা অর্থাৎ কর দেবার জন্যে? তাদের পথ তারা অনুসরণ করবে আর আমরা করবো আমাদের পথ অনুসরণ। এটাই তো বাস্তব। কিন্তু যেভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে অন্যকে আক্রমণ করার জন্য সেটা আল্লাহর কালাম নয় বরং কোনো গর্দভের কর্মকান্ড বলেই আমার বিশ্বাস।

সূরা তাওবাহ্‌ এর ৫ আয়াতটিও লক্ষ্যণীয়। এখানে বলা হয়েছে-

فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلْأَشْهُرُ ٱلْحُرُمُ فَٱقْتُلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَٱحْصُرُوهُمْ وَٱقْعُدُوا۟ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ ۚ فَإِن تَابُوا۟ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّوا۟ سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (٥)

বাংলা অনুবাদঃ “অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্ধী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওৎ পেতে থাকবে, কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে, নিশ্চয় ‍আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

এই আয়াতটি পড়ে আপনার কি মনে হচ্ছে? কাকে আল্লাহ চেয়েছেন বন্দী করতে? হত্যা করতে? এটাই তাঁর এবাদতের তালিম? এটাই কি শান্তির নিশানা? আল্লাহ কি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ধ্বংস করতে? তাও আবার অন্যকে দিয়ে? স্বন্ত্রাসের মূল শক্তি এহেন বাক্যে গেঁথে আছে। আর যারা এর অধ্যায়নকারী তারাই অনুসরণ করে হত্যাযজ্ঞের পথ। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, এটি আল্লাহর কালাম। আমার বিশ্বাস এটি তাঁর গুণধর বান্দাদের কাজ, যারা আড়ালে আবডালে ঘাপটি মেরে থেকে লুটপাটে অভ্যস্ত।

দেখুন আরেকটি সূরা নমূনা- সূরা মুহাম্মদ এর ৪৭: ৪ আয়াতটি।

فَإِذَا لَقِيتُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَضَرْبَ ٱلرِّقَابِ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَثْخَنتُمُوهُمْ فَشُدُّوا۟ ٱلْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّۢا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَآءً حَتَّىٰ تَضَعَ ٱلْحَرْبُ أَوْزَارَهَا ۚ ذَٰلِكَ وَلَوْ يَشَآءُ ٱللَّهُ لَٱنتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَـٰكِن لِّيَبْلُوَا۟ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ ۗ وَٱلَّذِينَ قُتِلُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَـٰلَهُمْ (٤)

বাংলা অনুবাদঃ “অতএব তোমরা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধকালীন তাদের গর্দানে আঘাত কর, যখন ওদের সম্পূর্ণভাবে পরাভূত করবে তখন মজবুত করে বাঁধবে, পরে ইচ্ছা করলে মুক্ত করে দিতে পার বা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিতে পার। এটিই বিধান। কিন্তু তিনি চান তোমাদের একে অপরের দ্বারা পরীক্ষা করতে। যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তিনি কখনই তাদের কাজ বিনষ্ট হতে দেন না।”

এসব কারণেই আমরা জামাত-শিবিরের তান্ডব দেখেছি দেশে, দেখেছি তাদের চাপাতির কোপ যত্র-তত্র। ইসলামকে রক্ষার সর্বময় দায়িত্ব যেন তাদের উপর ন্যস্ত। এখানে শান্তির লেশমাত্র নেই, রয়েছে শুধু অশান্তির অনল। অথচ মুখে মুখে তাদের শান্তির বুলি অহরহ বহমান।

এবার চলুন দেখি সূরা আন্‌ফাল কি বলে। সূরা আন্‌ফাল ৮: ৫৬ আয়াত।

ٱلَّذِينَ عَـٰهَدتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنقُضُونَ عَهْدَهُمْ فِى كُلِّ مَرَّةٍ وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ (٥٦)

বাংলা অনুবাদঃ “হে নবী! বিশ্বাসীদের সংগ্রামের জন্য উদ্ভুদ্ধ কর, তোমাদের মধ্যে ‍কুড়িজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শত জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তাদের মধ্যে একশত জন থাকলে এক সহস্র অবিশ্বাসীদের উপর বিজয়ী হবে। কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যার বোধশক্তি নেই।”

এসব পড়ে কি মনে হয়ে আপনার? আল্লাহ মহান, দয়ালু ক্ষমা মার্জনাকারী, ধৈর্যশীল, ইত্যাদি, ইত্যাদি? নাকি কঠোর মনোভাবপূর্ণ প্রতিশোধ গ্রহণকারী, যুদ্ধাঙ্গ মনোভাবপূর্ণ অত্যাচারী বিচারক?

প্রায়শঃই বলা হয়ে থাকে যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এতে কোন জবরদস্তি নেই। উল্লেখিত আয়াতসমূহ কি সেই বার্তা বহন করে? আঘাত কর, হত্যা কর, যুদ্ধ কর এবং তার মধ্য দিয়ে আল্লাহর আনুগত্য অর্জন কর এটাই কি নয় প্রকৃত ইসলামের ভাষা? পক্ষান্তরে, একথাও বলা হয়েছে যে, ইসলামে কোন জবরদস্তি নেই।

ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে এসব কিছুর সমাহার নেই। রয়েছে মানবিক মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলা। মানুষের সেবা করা, সাহায্যের হাত প্রসারিত করার মতো আরো অনেক মননশীল শান্তির বারতা। তাই অনেক সময় অবাক হয়ে ভাবি ইসলাম কি আল্লাহর ধর্ম নাকি শয়তানের?

আরো অনেক সাংঘাতিক হত্যাযজ্ঞের জন্যে উস্‌কে দেওয়া আয়াত রয়েছে কোরআনের পাতায় যা আর লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন মনে করছি না। শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হতে চাই যে, তথাকথিত শান্তির ধর্মকে যত তাড়াতাড়ি ত্যাগ করে মুক্ত বিহনে বের হয়ে আসা যায় ততই মঙ্গলজনক। অন্নেষণ করুন প্রকৃত স্রষ্টাকে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর মহত্ব প্রকাশের বাসনায়। আর চেয়েছেন যেন সেই সৃষ্টি বারে বারে ফিরে আসে তাঁর কাছে ভালবাসার আলিঙ্গণে। আনুগত্যে আর শ্রদ্ধায় যেন তাঁর সৃষ্টি খুঁজে পায় স্রষ্টার অসীম ভালবাসা আর রহমত। খুঁজে দেখুন সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাকে যিনি ইসলাম বহির্ভূত। সে কারণেই আসুন ছিঁড়ে ফেলি ইসলামের শত বান্দাদের শয়তানি কার্যকলাপ। আল্লাহ মহান। কিন্তু ইসলামের আল্লাহ হত্যাকারী জুলুমকারী এক জঘন্য মিথ্যাচারী ঠাকুর।

বস্তুতঃ ইসলামী তথাকথিত নবী মুহাম্মদ তার সময়কালে মানুষকে তার দলে ভেড়াবার জন্যে শতভাবে মানুষকে জুলুম করে, ভয় দেখিয়ে ইসলামী ঝান্ডা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। পরবর্ত্তীতে, তার অনুসারীরা একইভাবে অন্ধের মতো আচরণ করে যাচ্ছে আল্লাহর নামে মানুষকে ভয় দেখিয়ে। দেখে যেন মনে হয় আল্লাহর সব দায়-দায়িত্ব তাদেরই ঘাড়ে ন্যস্ত হয়েছে। কিন্তু তা সত্যি নয়। আসলে ইসলামের রীতি-নীতির কোনটাই সত্যি নয়। আর একটি আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই এই শান্তির সেনা দলের কথা। দেখুন তবে সূরা আল-ইমরান ৩: ১৪৪ আয়াতে কি বলে।

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ ۚ أَفَإِي۟ن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ ٱنقَلَبْتُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَـٰبِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيْـًٔا ۗ وَسَيَجْزِى ٱللَّهُ ٱلشَّـٰكِرِينَ (١٤٤)

বাংলা অনুবাদঃ “মুহাম্মদ তো একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়। তার পূর্বেও বহু রাসূল চলে গেছে। সুতরাং, যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তাহলে কি তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে? আর যদি কেউ ফিরেও যায়, তবে সে কখনও আল্লাহর কিছু ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদের পুরস্কার দিবেন।”

এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- “মুহাম্মদ তো একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়।” অর্থাৎ তার কোন অধিকার নেই মানুষকে কোন বিষয়ে বাধ্য করার। রাসূল অর্থাৎ বার্তাবাহক ছাড়া সে আর কিছু নয়। বার্তাবাহক, অর্থাৎ যাকে আমরা পিয়ন বলি। একজন পিয়নের কাজ বার্তা বহন করা তার মনিবের। সে তো আর মনিব হতে পারে না। কিংবা মনিবের পক্ষে কাউকে চোখ রাঙাতে পারে না। অথচ ‍আমাদের ধর্মীয় পন্ডিতেরা তাকে বানিয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। এখানেই আমাদের ব্যর্থতা আল্লাহর প্রকৃতরূপ তুলে ধরার। আল্লাহ সৃষ্টিশীল তিনি দয়ালু। যে সৃষ্টি করতে জানে না সে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে। বুঝতে পারে না সৃষ্টির সেবায় অর্জন করা যায় স্রষ্টার আর্শীবাদ। তাই যত্রতত্র হৈ চৈ করাই তাদের পক্ষে সম্ভব। আসুন, এই অসত্য, বেয়াদপ ব্যক্তির আহ্‌বান পরিহার করি আর সমুন্নত রাখি মহান আল্লাহ তায়ালার সম্মান। ভালো থাকুন, আর ত্যাগ করুন এই অশান্তির ধর্মকে।

Leave a Reply