আমরা যাকে বিশ্বনবী হিসেবে বিবেচনা করি, ভক্তি শ্রদ্ধায় বিগলিত হই আর মনে করি তিনি না জন্মালে আমরাও জন্মাতাম না, তার কথাই বলছি। বলছি এজন্যে যে, তারই নামে আমরা যারা জিকিরে আপ্লুত হই, চিৎকারে মুখের লালা ঝড়াই, সেই ব্যক্তিটির বিষয়ে আমরা কতটুকু জানি বা জেনেছি। তাকে বিশ্বনবীর উপাধিতো আর আল্লাহ দেন নাই দিয়েছি আমরা, আল্লাহর খাস বান্দারা। কোরআনের কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে না আল্লাহ প্রদত্ত তার বিশ্বনবীর উপাধি। কিন্তু তার অনুগত চাম্চারা কি না পারে! তারা তাকে বিশাল উপাধিতে ভূষিত করার পরও ক্ষান্ত হয়নি কখনো বরং তার নামে আবিষ্কার করেছে মিলাদ, মিছিল ও আরো কত ঠগবাজির অতিরঞ্জন।
বলছিলাম আমাদের বিশ্বনিন্দিত বা নন্দিত মুহাম্মদ এর কথা। তার পিতা, পিতামহ, চাচারা কেউ তার কথায় বিশ্বাস রাখেনি কারণ তারা জানতো তার উৎপত্তির প্রকৃত ইতিহাস। লোকমুখে শোনা যায় তিনি ছিলেন দয়ার অবতার আর ভালবাসায় শ্রেষ্ঠ। সেইসাথে তিনি ছিলেন উপদেশ বিতরণে অতি উত্তম। তারই উপদেশে স্বীয় পালক পুত্র (যায়দ) কে বিবাহ বিসর্জন দিতে হয়েছে, তালাক দিতে হয়েছে। কারণ, আব্বাজানের পছন্দ হয়ে গেছে তার নববধুকে।
একটু ভাবতে পারেন ব্যাপারটি সুস্থ মস্তিষ্কে? একটি দম্পতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলেছিল ছোট্ট সংসারটি। অনেক স্বপ্ন ছিলো তাদের চোখে-মুখে, অন্তরের গভীরে। কিন্তু তাতে বাধা সৃষ্টি করলো বাবাজানের লালসা নামক ভালবাসা। আর সেই ভালোবাসার কাতরে বাবা তাকে বুদ্ধি দিলেন স্ত্রীকে ত্যাগ করে তার হাতে তুলে দেবার অভিপ্রায়। এটাই কি বিশ্বসেরা উপদেশ? একেই আমরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাবো? বেচারা যায়দ (পালক পুত্র) ব্যাপারটিতে কোন মতেই সায় দিতে পারছিলো না। তবুও তার উপায় নেই, তার কোন প্রত্তুতরের ভাষা নেই। নির্বাক হয়ে সেই বাবার চেহারার দর্পনে সে নিশ্চয় দেখেছে এক লালসাপূর্ণ অভিলাষ। অতঃপর বাধ্য হয়েই ত্যাগ করতে হয়েছে স্ত্রীকে।
এদিকে বাবার আনন্দ আর দেখে কে। তরিঘরি করে তার পুত্রবধুকে বিবাহনামক প্রহসনে বন্দী করে ঘড়ে তুলেছেন অত্যান্ত দ্রুত গতিতে। অবশ্য সমাজে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তা শান্ত করেছেন তিনি আল্লাহর অভয় বাণী দিয়ে। বলেছেন মুহাম্মদের যাকে পছন্দ তাকেই সে গ্রহণ করতে পারে। এ ব্যাপারে কারো কোন বাধা দেবার অবকাশ থাকবে না। অতঃপর বিবাহ ও সেই উপলক্ষ্যে প্রায় তিনশত জন মুরীদকে খাওয়ানো হলো পেট ভরে।
আপনার কি মনে হয়ে, যদি আপনার স্ত্রীর প্রতি তার দৃষ্টি পড়তো আপনিও কি নির্দ্ধিধায় তাকে বিসর্জন দিতেন তার হাতে তুলে দিয়ে? এমনই মহান যদি হয়ে থাকে আপনার অন্তরের আকাঙ্খা তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
তবে ভাগ্য ভালো যে, আপনি তখন জন্মই নেননি। আর এখন আর কেউ নেই যিনি তারমতো এই আচরণ করতে পারেন। কি এক সাংঘাতিক উপদেশ যা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। একটু মনোযোগ সহকারে সূরা আহ্-যাব এর ৩৩ নং সূরাটি পড়ে নিন আর দেখুন ঘটনাটির সত্যতা কতটুকু। বাংলাতেই পড়ুন নতুবা বুঝবেননা এর মারপ্যাঁচ।
আরেকটি বিষয়ের অবতারণা করতে চাই এই স্বল্প পরিসরে। এটি না করলেই নয়। বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে সহীহ্ মুসলিম হাদিস এর ৭৫৭ পৃষ্ঠায়। এটি আরেকটি উপদেশ সেই বিশ্বসেরা নবীর। এখানে বলা হয়েছে- হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি) আবু হুযাফার আযাদকৃত দাস সালেম আবু হুযাইফা ও তার পরিবারের সাথে তাদের বাড়ীতেই থাকতো। একদিন আবু হুযাইফার স্ত্রী সাহ্লা নবী করিম (সাঃ) এর কাছে এসে বললো, সালেম তো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষে পরিণত হয়েছে এবং জ্ঞানবুদ্ধিও হয়েছে। সে আমার সামনে চলাফেরা করার কারণে মনে হয় (আমার স্বামী) আবু হুযাইফা (রাঃ) অস্বস্তিবোধ করেন।
এ কথা শুনে নবী করিম (সাঃ) তাকে বললেনঃ সালেমকে তোমার বুকের দুধ পান করিয়ে দাও, তাহলে তুমি তার জন্য মুহরিম হয়ে যাবে এবং আবু হুযাইফার মনের অস্বস্তিও দূরভূত হবে। পরবর্ত্তী সময়ে সাহ্লা তাকে এসে বললো, আমি সালেমকে দুধপান করিয়েছি এবং আমার স্বামী আবু হুযাইফার মনের অস্বস্তি দূরীভূত হয়েছে।
কি সাংঘাতিক উপদেশ! কি আশ্বর্য কথা। একজন পরিণত বয়সের ব্যক্তিকে কিভাবে সাহ্লা নিজের বুকের দুধ দিলেন? কিভাবেই বা নবী করিম (সাঃ) এমন জঘন্য উপদেশ দিলেন! আমার মস্তিষ্কের কোনো চিন্তা ধারায় এর কুল কিনারা খুঁজে পাই নাই আমি। তাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলেছি বিশ্বনবীর বিশ্বসেরা উপদেশ এটি।
এটা সত্যি যে, আজকের কোনো সভ্য সমাজে এ কথায় চিড়ে ভিজবে না। কোন মহিলাই তার এই উপদেশ বাক্যে কান দিবে না। তারা বরং তাদের স্যান্ডলের ছাপ বসিয়ে দিবে সেই উপদেষ্টার গালে। একেই বলে হাদিস্! আমার কথায় বিশ্বাস না হলে কষ্ট করে সোলেমানিয়া বুক হাউস ঢাকা থেকে প্রকাশিত “ছহীহ্ মুসলিম হাদিসটি” সংগ্রহ করে নিজ চোখেই অবোলকন করুন (৭৫৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।
আপনার কোন প্রিয়জন (স্ত্রী, মেয়ে, বোন) কি এই শ্রেষ্ঠ উপদেশটি মানতে পারবে? পারবে না। অর্থাৎ প্রত্যেকেই এই উপদেশ অমান্য করবে।
তবে কোন্ আক্কেলে বিশ্বনবী এই নিকৃষ্ট কাজটি করতে উপদেশ দিলেন? এই উপদেশ তো শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির জন্য নয়। বরং প্রতিটি ইসলাম অনুসারীদের জন্য। তার উপদেশই তো সুন্নত হিসেবে বিবেচিত, নয় কি? লম্বা দাঁড়ি রাখা যেমন সুন্নত তেমনি এ কাজটিও সুন্নত। আপনার অন্তরে যদি অতি ভক্তিতার স্রোত বহমান হয়ে থাকে তবে তা পালন করে যান। নতুবা বের হয়ে আসুন এসব অপকর্ম থেকে।