You are currently viewing শবে মে’রাজ সম্পর্কিত উদ্ভট গল্প

শবে মে’রাজ সম্পর্কিত উদ্ভট গল্প

  • Post author:
  • Post last modified:May 22, 2021

বে মে’রাজ সম্পর্কিত অনেক উদ্ভট গল্প প্রচলিত আছে আমাদের মাঝে যার সত্যিকার কোন অস্তিত্ব নেই বাস্তবে। এক ধরণের ইসলাম বিশারদরা তাদের মন গড়া কল্পকাহিনী দিয়ে বেশ নিপুণভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন আমাদের সরলমনা ধর্মভীরু মুসলমান ভাই-বোনদের। তাদের ওয়াজ মাহফিলে তারা এমনভাবে এসব কল্পকাহিনী বয়ান করেন যে, তা অবিশ্বাস  করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

অথচ প্রকৃত ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোরআন শরীফেই তা বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু আরবীর বাংলা তরজমা আর ক’জনাই বা পড়েন। আর ক’জনাই বা কৌতুহলী হয়ে সত্যান্ননেষে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মৌ-লোভীরা যা বলেন তাতেই সবার ভরসা। শবে মে’রাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে সূরা ‘বণী ইসরাঈল’ এ ঠিক এভাবে-

 سُبْحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِۦ لَيْلًا مِّنَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ إِلَى ٱلْمَسْجِدِ ٱلْأَقْصَا ٱلَّذِى بَـٰرَكْنَا حَوْلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنْ ءَايَـٰتِنَآ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْبَصِيرُ (١)

বাংলা অর্থঃ “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর দাসকে নিদর্শন দেখাবার জন্য রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) হতে মসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ করেছিলেন বরকতময়, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”।  

সূরাটির টিকা-তে লেখা রয়েছে এ হচ্ছে সেই ঘটনা যা ইসলামের পরিভাষায় মে’রাজ নামে খ্যাত। অধিকাংশ ও বিশ্বস্ত বিবরণ অনুসারে এই ঘটনাটি হিজরতের এক বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। হাদীস ও রসুলুল্লাহর জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ-সমূহে এই ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ সাহাবাদের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।

এইরূপ বর্ণনাকারী সাহাবাদের সংখ্যা ২৫ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। কোরআন মজীদে অর্থাৎ মসজিদুল হারাম থেকে আকসা পর্যন্ত গমনের কথা স্পষ্টরূপে বিবৃত হয়েছে এবং হাদীস সমূহে বায়তুল্লাহ থেকে উর্ধ জগতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে আল্লাহ্ তায়ালার সকাশে তাঁর উপস্থিতি হওয়ার কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। 

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর তফসীরে বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম হতে আল মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়। তাতে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য: তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। 

ইতিমধ্যে মক্কার কুরাইশ ও অন্যান্য গোষ্ঠির মধ্যে প্রচার হয়ে গেছে যখন মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর শবে মে’রাজ এর কথা ব্যক্ত করেন (মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাত্রে গমনাগমন)। এই ঘটনাটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ, আবু সাইদ, আল কুদরী, মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী আয়েশা, মাওয়াইয়া ইবনে আবু সুফইয়ান, হাসান ইবনে আবু আল হাসান আল বসরী, ইবনে শিয়ার আল ঐহরী, কাতাদ্দা, উম্মে হানি, আবু তালিবের কন্যা ও অন্যান্য অনেকের কাছ থেকে। এখানে সে সব ব্যক্তির বর্ণিত ব্যাখ্যাসমূহ আলোচনা করতে চাই।

(কোরআন মজীদে মাত্র বায়তুল্লাহ্) অর্থাৎ মসজিদুল হারাম (মক্কা) থেকে মসজিদুল আকসা (বায়তুল মোকাদ্দস) পর্যন্ত গমনাগমনের কথা স্পষ্টরূপে বিবৃত হয়েছে। আর হাদীস সমূহে বায়তুল্লাহ্ থেকে উর্দ্ধ জগতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে আল্লাহ্ তায়ালার সকাশে তাঁর উপস্থিতি হওয়ার কথা বিস্তৃতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। 

মুসলমানদের কাছে এই শবে মে’রাজের গুরুত্ব অনেক। কারণ, আল্লাহ্ পাক এর মধ্যে দিয়ে তাঁর শাসন, রাজত্ব ও নির্দেশসমূহ মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে ব্যক্ত করেন বা প্রকাশ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাঁর আশ্চর্য কর্মকান্ড মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানাতে চেয়েছেন এর মধ্য দিয়ে (সূরা বণী ইসরাঈল ১৭ঃ ১) এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তার সাক্ষী হয়েছেন এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। সংক্ষেপে এটাই হলো শবে মে’রাজ এর প্রকৃত তাৎপর্য।

আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ বলেনঃ মুহাম্মদ (সাঃ) কে “বোরাক” দেখানো হলো, সেই আশ্চর্য পশুটিকে যে তাঁকে বহণ করে নিয়ে গিয়েছিল এই যাত্রায়। তাঁর বন্ধু (জিব্রাইল) তাঁকে সাহায্য করেছিল তার পিঠে চড়ার। মুহাম্মদ (সাঃ) তাতে চড়ে আসমান ও বেহেশতের আশ্চর্য চিত্র দেখেছেন। তাঁর এই যাত্রার শেষে তিনি জেরুজালেম এসে পৌছালেন যেখানে তিনি ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদের সাথে সাক্ষাত করলেন। সেই সব নবীদেরকে তাঁর সৌজন্যে হাজির করা হয়েছিল যেন তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও একত্রে এবাদত করতে পারেন।

বোরাক কি? এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে এটা হলো একটি বিদ্যুতের গতি সম্পন্ন অত্যান্ত দ্রুতগামী ডানাসন্মলিত একটি অ অশ্ব বিশেষ এটাই নবীকে বহন করে নিয়ে গিয়েছেল মে’রাজে। বলা হয়ে থাকে এই অশ্ব বিশেষ জন্তুটি সাদা রঙের এবং দেখতে গাধা-র চাইতে একটু বড় আকারের। মুহাম্মদ (সাঃ) যখন মে’রাজে যাত্রা করেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন জিব্রাইল ও মিখাইল।

ইসলামে ইব্রাহীম (আঃ), মূসা (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) কে ধরা হয়ে থাকে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ নবী হিসেবে যারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর বহু আগে এসেছিলেন পৃথিবীতে।

ইঞ্জিল শরীফের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই এইসব নবীরা বিশেষত মূসা (আঃ), ও ইলিয়াস (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নেমে এসেছিলেন পৃথিবীর এক উঁচু পাহাড়ে। তাঁদের সাথে সাক্ষাতের সময় ঈসা (আঃ) এর চেহারা সূর্যের মতো উজ্জ্বল নূরাণী আলোয় রূপান্তরিত হয়েছেল। 

মুুহাম্মদ (সাঃ) কখনো সে রকম আলো বা নূরানী চেহারায় রূপান্তরিত হন নাই তাঁর উর্দ্ধে যাত্রাকালে বা পরবর্ত্তীকালে। অনেক ওয়াজ নসিয়তে বলা হয় যে, মুহাম্মদ (সাঃ) যখন আল্লাহর আরশে পৌঁছালেন তখন তাকে তিনটি পাত্র দেওয়া হলো। এর একটিতে ছিল দুধ, আরেকটিতে ছিল শরাব ও অন্যটিতে ছিল পানি। এই তিনটি পাত্র তাঁর সামনে রাখার পর তিনি শুনলেন তাঁকে বলা হচ্ছে: “যদি তুমি পানিভর্তি পাত্রটি নাও তাহলে তোমার লোকেরা ভুল পথে পড়বে। কিন্তু যদি তুমি দুধের পাত্রটি নাও, তাহলে তুমি ও তোমার লোকেরা সত্য পথে পরিচালিত হবে। অতএব মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আমি দুধের পাত্রটি নিলাম এবং তা থেকে পান করলাম। তখন জিব্রাইল আমাকে বললেন, ও মুহাম্মদ (সাঃ) আপনি সত্য পথে পরিচালিত হবেন। আপনার সাথে আপনার লোকেরাও সে পথে যাবে (সিরাতুনবী, ইবনে হিসাম, ১ম খন্ড)। ব্যাপারটি কি আষাঢ়ে গল্পের সমতুল্য নয় ?

কারণ, প্রথমতঃ বোরাক নামের কোন জন্তু-জানোয়ারের অস্তিত্ব কি কোথাও কেউ শুনেছেন ? নিশ্চয় না। এটা একটি অভিনব কাল্পনিক চিত্র। যদি সত্য হতো, তাহলে কোরআনেই তা পরিষ্কারভাবে লেখা থাকতো। গাধার চেহারা বিশিষ্ট জন্তু অথচ আকাশে উড়ে চলে সপ্তম আসমানে! আলোক রশ্নির চেয়েও দ্রুতগামী সে! অথচ তারই পিঠে চড়ে খোলা আকাশের বুক চিড়ে স্বর্গ যাত্রা করতে পারে কেউ ? এর চেয়ে বড় কোনো কৌতুক কি আর হতে পারে ?

প্রতিটি বস্তুকে বিশ্লেষণ করে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে পরখ করি বলে আমরা বাস্তববাদী। আষাঢ়ে গল্পের অবস্থান তার ঠিক বিপরীতে। মানুষের অনুভূতিতে তা কাজ করে। কিন্তু বাস্তবতার ধার ধারে না। কল্পিতস্বপ্ন প্রবাহে এর অবস্থান। এতে যুক্তি থাকতে পারে কিন্তু সত্যতা নেই।

দ্বিতীয়তঃ প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা তাঁকে যেতে হয়েছিল কেন ? সেখানেই কি স্বর্গের সিঁড়ি অবস্থিত ? তাই যদি হয় তাহলে মক্কা-মদিনা দৌড়া-দৌড়ি করে অযথা আমরা ক্লান্ত হই কেন ? অথবা মসজিদুল আল আকসা হয় না কেন আল্লাহর সাথে মোলাকাত করার জায়গা ?

তৃতীয়তঃ তাঁর সামনে (হযরত মুহাম্মদ সাঃ) তিনটি বাটিতে তিন ধরণের পানীয় রেখে তাও আবার স্রষ্টার অজান্তে তাঁর (হুজুরের) কানে কানে বলে দিতে হয় কোনটি তাঁর জন্য উপযুক্ত ? এ যেন পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়ে যাবার মতো অবস্থা!

বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া আমার একটি ঘটনা মনে পড়ল। আমি বসেছি ড্রাইভিং লাইন্সেস এর জন্যে পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা শুরুর একটু আগে এক ব্যক্তি রুমে এসে আমাকে একটি কাগজ দেখিয়ে বললো, “এইগুলো আসবে  পরীক্ষায়”। কথাগুলো বলেই সে তাড়াতাড়ি সড়ে গেল রুম থেকে। পরীক্ষার কাগজ হাতে পাওয়া মাত্রই আমি অবাক হয়ে দেখলাম তা হুবহু সেই ব্যক্তির প্রদর্শিত কাগজের সাথে মিলে গেছে।

পরে জেনেছিলাম সেই ব্যক্তটি ছিল আমার এজেন্টের লোক, যাকে আমি লাইসেন্সের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এ এক আজব অভিজ্ঞতা যা ভুলে যাবার মতো নয়। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, আল্লাহর আরশেও কি এমন কিছু হয়, যা আমাদের মর্তের অভিজ্ঞতার সাথে হুবহু মিলে যেতে পারে? একটু ভেবে দেখুন তো আল্লাহ্ তাঁর মেহমানকে শরাব পরিবেশন করতে যাবেন তা ও বিশ্বাস করতে হবে আমাদের?

আল-হাসানের বর্ণনানুযায়ী ইবনে হিসাম বলেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ) একদা বলেছেন “আমি যখন পবিত্র জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলাম, জিব্রাইল এসে আমাকে ধাক্কা দিলেন। আমি উঠে বসলাম কিন্তু কিছুই দেখলাম না। আমি আবার আমার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিন্তু জিব্রাইল আমাকে আবার ধাক্কা দিলেন। আমি আবার কিছু দেখতে না পেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। তারপর তিনি তৃতীয়বারের মতো ধাক্কা দিলেন। এরপর আমি উঠে বসলে তিনি আমার হাত ধরে  দরজার কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি সাদা জন্তু দাঁড়িয়ে ছিল। এর চারটি পা খুব বড় ছিল। জিব্রাইল আমাকে তার উপর চড়তে সাহায্য করলেন। তিনি আমার সাথে সাথে সর্বক্ষণ ছিলেন এবং আমার চলার সঙ্গি হয়েছিলেন।

আলবাকাতা-র বর্ণনানুযায়ী ইবনে হিশাম বলেন- আমি যখন সেই জন্তুটির কাছে গেলাম চড়ার জন্য, সেটা তখন অস্থির হয়েছিল। তাই জিব্রাইল তার গায়ে হাত রেখে বললেন, “তুমি কি নিজের ব্যাপারে লজ্জিত নও? বোরাক, আল্লাহর যে সব দাসেরা যারা তোমার উপর চড়েছিল, তারা কেউ মুহাম্মদ (সাঃ) এর চেয়ে উত্তম ছিল না।” এতে বোরাক এত লজ্জা পেল যে, তার সারা গায়ে পুঁথির মতো বিন্দু বিন্দু ঘামে ভরে গিয়েছিল। আর সেটা স্থির হয়ে থাকলো তাতে চড়া পর্যন্ত।

হাসান বলেনঃ মুহাম্মদ (সাঃ) জিব্রাইলের সঙ্গি হয়ে জেরুজালেম পর্যন্ত গমন করেছিলেন। সেখানে তিনি ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তারপর তাঁর কাছে দু’টি পাত্র আনা হয়েছিল। এর একটিতে দুধ ও অন্যটিতে শরাব ছিল। মুহাম্মদ (সাঃ) দুধের পাত্রটি নিয়েছিলেন এবং তা পান করেছিলেন। তিনি শরাবের পাত্রটি স্পর্শ করলেন না। এরপর জিব্রাইল তাঁকে বললো, “আপনাকে সৃষ্টি করার দিন থেকে আপনাকে সঠিকভাবে পথ দেখানো হয়েছে। আপনার লোকেরাও একইভাবে অর্থাৎ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং শরাব আপনার জন্য নিষিদ্ধ।

নবীজি মক্কায় ফিরে আসলেন এবং কোরাইশদেরকে পরের দিন তাঁর এ অভিজ্ঞতার কথা বললেন। উত্তরে বেশীরভাগ লোকেরা বললো, আল্লাহর কসম, এটা একেবারেই অসম্ভব! চিন্তা করে দেখো। এক রাত্রে মুহাম্মদ (সাঃ) সিরিয়া যাওয়া-আসা করেছেন বলছেন, যেটা (Caravan) ক্যারাভান এ যেতে দুই মাস লাগার কথা!

অনেক মুসলমান ইসলাম ছেড়ে চলে গেছে এসব কথাবার্তায়। অনেকে আবু বকরের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, আপনার বন্ধুর এসব কথায় (একরাত্রে জিরুজালেম ভ্রমণ) আপনি কি বলেন ? তিনি দাবী করছেন, তিনি সেখানে এবাদত করে ফিরে এসেছেন! আবু বকর তাদের বললেন- তোমরা কি মনে করো সে মিথ্যা বলছে ? তারপর বললেন,  আল্লাহর কসম সে নিজে একথা বলে থাকলে তা সত্যি। এটা বিশ্বাস করতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন ? সে যদি আমাকে বলে এক ঘন্টার মধ্যে তার ওহী বেহেশত থেকে দুনিয়ায় আসে, আমি তাকে বিশ্বাস করবো। আর এটাতো আরো গুরুত্বপূর্ণ যা তোমাদের কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছে।

বলা হয়ে থাকে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর মতো অন্ধবিশ্বাসী বন্ধু পেয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। হাসান আরো জানানঃ যারা এই ঘটনায় ইসলাম ত্যাগ করে চলে গেছে আল্লাহ্ তাদের জন্য নিচের আয়াতগুলি নাযিল করেছেন।

وَإِذْ قُلْنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِٱلنَّاسِ ۚ وَمَا جَعَلْنَا ٱلرُّءْيَا ٱلَّتِىٓ أَرَيْنَـٰكَ إِلَّا فِتْنَةً لِّلنَّاسِ وَٱلشَّجَرَةَ ٱلْمَلْعُونَةَ فِى ٱلْقُرْءَانِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَـٰنًا كَبِيرًا (٦٠)

বাংলা অর্থঃ “স্মরণ করো,আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, তোমার রব মানুষকে ঘিরে আছেন। আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি তাও কোরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ যা কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্য। আমি ওদের ভীতি প্রদর্শন করি এ ওদের তীব্র অবাধ্যতাই বৃদ্ধি কর”।

শবে মে’রাজ এর বিবরণ বর্ণিত হয়েছে সহীহ্ মুসলিম শরীফে (নং ২৪৫, প্রথম অধ্যায়, পৃষ্ঠা ১৪১, ১৪২, ১৪৩)।

এ বিষয়ে নবীর পত্নী আয়েশা (রাঃ)-র উক্তিটি প্রণিধান যোগ্য। হযরত আবু বকরের পরিবার থেকে একজন বলেছেন, আয়েশার বর্ণনানুযায়ী: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কোথাও যান নাই। তাঁর শরীর যথাস্থানেই ছিল। তিনি তো আমার সাথে ঘুমিয়ে ছিলেন একই বিছানায়। তাহলে বোধ করি আল্লাহ্ তাঁর আত্মীয়দের ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বয়ং আয়েশার চোখে-মুখেই ছিল বিষ্ময়ের চিহ্ন। তারই প্রকাশ ঘটেছে তার মন্তব্যে।

শবে মে’রাজ এর ঘটনাটি কোরআন অনুযায়ী মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। মসজিদুল আকসা থেকে আসমান বা আল্লাহর আরশ ভ্রমণের কথা কিছুমাত্র কোথাও বলা হয় নাই কোরআনে। সাহাবীদের অতিরিক্ত কাল্পনিক চিত্রের ভূরী ভূরী কথা লেখা হয়েছে বিভিন্ন জাল হাদীস ও কিতাবে। বাস্তবিক বিবেচনায় এটা অযৌক্তিক ও কাল্পনিক। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে তা হাস্যকর উপাদান ছাড়া অন্য কিছু নয়।  কোরআনের বাইরে কথা বলা যেমন কোরআন বিরোধী হয়, তেমনি কল্পকাহিনীর আশ্রয় নিলে তা মিথ্যা বলে পরিগণিত হয়।

কিন্তু আজো বিভিন্ন ওয়াজে-মাহফিলে বক্তারা এ কথাও বলে থাকেন যে, রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন মে’রাজ রজনীতে উর্দ্ধকাশে গমন করলেন এবং আরশে মুআল্লায় পৌঁছে নিজের পাদুকাদ্বয় খোলার ইচ্ছা করলেন, তখন আল্লাহর পক্ষ হতে ডাক দেওয়া হয়েছে- “মুহাম্মদ, তোমার পাদুকাদ্বয় খুলিও না, কারণ পাদুকাবস্থায় তোমার চরণে আল্লাহর আরশ মর্যাদাবান হবে এবং এর বরকত লাভ করে অন্যের উপর গর্ব করবে। অতঃপর, নবী করিম সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কদমদ্বয়ে পাদুকা পড়াবস্থায় আল্লাহর আরশের দিকে গমন করলেন, এর দ্বারা মহিমান্বিত ও মর্যাদাবান হয়।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট হাদীস গবেষক আল্লামা আবদুল হাই লাক্ষৌবী (রাঃ) উল্লেখ করেন যে, মুহাদ্দিস আহমদ মুকরী মালেকী (রাঃ) (ইন্তিঃ ১০৪১ হি) স্বীয় “ফাতহুল মুতাআল ফি মার্দহি খাইরিন নিআল” গ্রন্থে আল্লামা রজিউদ্দিন কাজবীনী এবং মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল বাকী জুরকারী (ইন্তিঃ ১১২১ হি:) শরহে মাওয়াহিরে লুদানিয়া গ্রন্থে বলেন যে, উপরোক্ত কাহিনীটি পুরোটাই মাওজু তথা বানোয়াট! মে’রাজে নবী সম্পর্কীয় রেওয়াতগুলোতে কোন রেওয়াতে উপরোক্ত কাহিনীর প্রমাণ নেই। এমনকি তিনি আরশে আরোহণ করার কথাটি প্রমাণিত নয়।

আল্লামা কাজবীনী এক প্রশ্নের জবাবে বলেনঃ রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) জুতা পায়ে দিয়ে আরশ গমন করার হাদীসটি বিশুদ্ধ নয় এবং অপ্রমাণিত। বরং তিনি আরশে আরোহণ করাটা কোন সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ও নয়।

কোন কোন মাহফীলে ওয়াজিনদের মুখে একথাও বলতে শুনা যায় যে- মে’রাজ রজনীতে রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জীলানী (রাঃ) এর স্কন্ধের উপর পা রেখেছিলেন।

উপরোক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে ‘তাফসীরে মাথরিফুল কোরআন’ গ্রন্থকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফতী আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের কিতাবসমূহে উপরোক্ত ঘটনাটির কোন উল্লেখ নেই, সাধারণ লোকমহলে এ ধরণের অলিক কথা-বার্তা বর্ণনা করা, তাদেরকে গোমরাহী ও ফিৎনায় লিপ্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।

এছাড়াও, কথাটি কোন সুস্থ বিবেকও সমর্থন করে না। কারণ, রসুলুল্লাহর মে’রাজ হয়েছেল হিজরতের এক বছর পূর্বে মক্কা নগরীতে। আর পীরানে পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) জন্মগ্রহণ করেন বাগদাদের ‘গিলান’ শহরে ৪৭০ হিজরীতে। তাহলে হিজরতের এক বছর পূর্বের সংঘটিত মে’রাজের সময় চারশত সত্তর বছর পরে জন্মগ্রহণকারী হযরত বড়পীর সাহেব (রহঃ) কে তাঁর রসুলুল্লাহ্-র কদম রাখার জন্য কিভাবে পেলেন ? সুস্থ বিবেকের এটি একটি যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন। অধিকন্তু, তাঁর মে’রাজে আল্লাহ্ যদি ‘বোরাক’ পাঠিয়ে থাকেন তাহলে সেখানে হযরত বড়পীর এর কাঁধে পা রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কিভাবে? 

আল্লাহর কালামের বাইরে কথা বললে যেমন তাঁর নাফরমানী করা হয়, তেমনি তাতে ঈমানেরও ক্ষতি হয়। অথচ, এই উদ্ভট ঘটনাকে কেন্দ্র করে নফল নামাজ, জিকির করা ও রোজা রাখার রেওয়াজ প্রচলিত হয়ে গেছে আমাদের দেশে বহু আগে থেকেই। মধ্যপ্রাচ্যে ও মুসলিম দেশগুলি ও পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে এ নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা নেই।

মসজিদুল আকসা-র ইতিহাসঃ

এই গল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, “মসজিদুল আকসা” মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর অনেক পরে (প্রায় ৫৩ বছর) নির্মিত হয়েছিল। হযরত ওমর যখন জেরুজালেম অধিকার করেছিলেন তখন সেখানে সলোমন রাজার এবাদতখানা ছিল, তিনি সেখানে নামাজ পড়েছিলেন। খ্রীষ্ট পরবর্ত্তী ৭০ দশকে রোমীয় সম্রাজ্য সেটা ধ্বংস করে দিয়েছিল। তখন থেকে সেখানে কোন এবাদতখানা বা ধর্মশালা ছিল না। কোন মন্দির, গীর্জা বা মসজিদ ছিল না সেখানে তখন থেকে।

আবেদ- আল- মালিক ইবনে মারওয়ান যিনি সেই মসজিদুল আকসার ঐতিহাসিক গম্বুজটি তৈরী করেছিলেন তা ছিল প্রায় ৬৯১ খ্রীষ্ট পরবর্ত্তী সময়ে। তার মানে হিজরতের ৭২ বছর পরের ঘটনা এটি। মসজিদুল আকসা তৈরী হয়েছিল ৭ম শতাব্দীর শেষ দিকে। 

এ গল্পের আরেকটি সমস্যা হলো যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বর্ণিত মে’রাজের ঘটনাটি ঘটেছিল খ্রীষ্ট পরবর্ত্তী ৬২২ বছরে। সে সময়ে জেরুজালেম ছিল খ্রীষ্টানদের (ঈসাহীদের) হাতে। সেখানে কোন মুসলিমের বসবাস ছিল না সে সময়ে এবং অবশ্যই কোন মসজিদের অবস্থান ও ছিল না। মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর ৫৩ বছর পরে মুসলমানেরা আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করে ঠিক যেখানে বাদশাহ সোলাইমানের এবাদতখানাটি ছিল। সূরা ইসরাইলের  ১ আয়াতটি যেই লিখে থাকুক না কেন তার জানা ছিল না যে মসজিদুল আকসার কোন অস্তিত্ব ছিল না  মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়কালে। কিভাবে তাহলে নবীজি সেখানে থেকে আল্লাহর আরশ বিচরণ করলেন যার কোন অস্তিত্বই ছিল না সে সময়ে?

আরেকটি সমস্যাঃ তারা বলেন যে, মসজিদুল হারাম (কা’বা) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নির্মাণ করেছেন। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, তিনি তো খ্রীষ্টপূর্ব ২১৫০ বছরপূর্বে বসবাস করেছেন, এবং সলোমনের এবাদতখানা নির্মিত হয়েছে প্রায় ৯৫৮-৯৫১ খ্রীষ্টপূর্ব বছরে। এই দুই এবাদতখানা নির্মাণ সময়ের মধ্যকার ব্যবধান ১০৪০ বছরের।

বস্তুত: ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী ইব্রাহীম (আঃ) কখনো মক্কায় অবস্থান করেন নাই। তিনি ছিলেন “উর” এ। সেখানে থেকে আল্লাহ্ তায়ালার আহ্বানে সাড়া দিয়ে “হারান” ও “কলদিয়” তে যান। মক্কায় তাঁর অবস্থানের ঐতিহাসিক কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নাই কখনো। ইসলামের ইতিহাসবিদদের মনগড়া কাহিনীতে সয়লাব হয়ে গেছে সত্যের জলাশয়।

সবশেষে ড.আবদুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর (সহযোগী অধ্যাপক আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া) এর শবে মে’রাজ সম্পর্কিত মন্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন- আমরা দেখি যে, রজন মাসের ২৭ তারিখে মে’রাজ হয়েছিল বা এই তারিখটি লাইলাতুল মি’রাজ। এই কথাটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) থেকে এই মি’রাজ হওয়া সম্পর্কে কোন কিছুই সহীহ বা যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয়নি।  এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই ঐতিহাসিকগণের মতামত অথবা বানোয়াট কথাবার্তা।১০ 

আমি জানিনা এতগুলো তথ্যের উদ্ধিৃতি দিয়ে লেখা আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় বোঝাতে পেরেছি কিনা যে, আল্লাহর নামে আজগুবী কাহিনী দিয়ে মানুষের মন জয় করে আল্লাহর সম্মান বৃদ্ধি হয় না, বরং অসম্মান হয়। তাই আসুন কল্পকাহিনীতে নয়, তাঁর কালামেই উত্তর খুঁজি আমাদের ধার্মিকতার। পরম করুণাময়ের দরবারে এই আমার আর্জি।

বিঃদ্রঃ আমি জানি আমার এ লেখায় অনেকের গাত্রদাহ হতে পারে কারণ এভাবে কখনো বলেনি কেউ। কিন্তু ধীরচিত্তে নিজেই একটু অনুসন্ধান করেই দেখুন না ঘটনাটির সত্যতা। পুরাতন মরচে পড়া নড়বড়ে বিশ্বাসের ভিত্তিতে আঘাত পড়লে মনঃকষ্ট হবারই কথা। কিন্তু যদি বিবেকের রুদ্ধ দুয়ার খুলে মুক্ত চিন্তার আলোকিত আঙিনায় আমরা পদার্পণ না করি তাহলে কেউ কোনদিন খুঁজে পাবো না সত্যের ঠিকানা।

একটু সত্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণের দৃষ্টিতে বিবেচনা করা প্রয়োজন বিষয়টি। একদিন তো আমরা সবাই দাড়াবো মহান আল্লাহর দরবারে বিচারিত হওয়ার লাইনে। তখন কি আপনার এই রুদ্রভঙ্গীমা তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট? নাকি আপনাকে ভেবে-চিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে আজকেই। আপনার আজকের সিদ্ধান্ত আপনাকে নিয়ে যাবে সেই দিনের সঠিক পরিণতিতে। সুতরাং, একটু ভেবে দেখুন। কোন পথে চলেছেন আপনি, কাকে সন্তুষ্ট করার জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন আপনি?

 

তথ্য সুত্র:

১. আল-কোরান, অধ্যায় ১৭, আয়াত ১
২. নূরানী কোরআন, সোলেমানিয়া বুক হাউস ঢাকা থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ৪১৩ দ্রষ্টব্য।
৩. তফসীরে ইবনে আব্বাস ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত।
৪. নূরাণী কুরআন শরীফে, সোলেমানিয়া বুক হাউস থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ১৪৩ দ্রষ্টব্য।
৫. আলী মনসুরের নাসিফ শারহু, কিতাবিত-তাজ দ্রষ্টব্য।
৬. মথি ১৭ঃ৩,৪ আয়াত, মার্ক  ৯ঃ ৪,৫ আয়াত, লূক ৯ঃ৩০,৩১ আয়াত, ইঞ্জিল শরীফ।
৭. আল-কোরান, অধ্যায় ১৭, সূরা বণী ইসরাঈল, আয়াত ৬০।
৮.প্রচলিত জাল হাদীস, পৃষ্ঠা ৫০, তাসনীম-বিন-মুনীর এর প্রকশনায়, যানভী লাইব্রেরী, হাট হাজারী, চট্রগ্রাম দ্রষ্টব্য।
৯. The Concise Encyclopedia of Islam) এর তথ্য অনুযায়ী, Harper and Row ১৯৮৯, পৃষ্ঠা ৪৬ ও ১০২ দ্রষ্টব্য।
১০.  হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা; পৃষ্ঠা ৪১০, অধ্যাপক ড.আবদুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর রচিত।

আরও পড়ুন: বণী ইস্রাইল পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত জাতি

Leave a Reply