কোরআন বুঝে পড়ার চেয়ে তা পড়ে বোঝার হাকীকত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোরআন পড়ে আমরা যখন তার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করি, অনুসন্ধান করি আয়াতের উৎস, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কিংবা আয়াতটি নাযিল হওয়ার কারণসমূহ, তখন তা বিশ্লেষণে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও চিন্তাশক্তির ফলপ্রসূ প্রকাশ ঘটে। আর সেইসাথে উপলদ্ধি করতে সক্ষম হই বাক্যের অতিরজ্ঞনতা বা তার অকৃত্রিম ঐতিহাসিক তথ্যসমূহ।
কিন্তু বাস্তবে তা বাধাগ্রস্ত হয় আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকদের আরবী প্রেম ও অসমাজ্ঞস্যপূর্ণ বক্তৃতা-বিবৃতির কথামালার জোয়ারে। তারা ভাবতেই পারেন না যে তাদের সব উদ্ভট, ভারসাম্যহীন, আজগুবী গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজ্ঞানের তথ্যতে কেউ ভেসে যাবে না। এভাবেই তারা নির্দ্ধিধায় লাগামহীন ওয়াজ নসিয়তে যা ইচ্ছা তা ব্যক্ত করেন। সহসা তাদের বক্তব্যে কেউ যদি সন্দেহপোষণ করে, তাহলে তাকে নির্বিঘ্নে “কাফের” আখ্যায়িত করে হেয় প্রতিপন্ন করে আত্নতৃপ্তি অনুভব করেন তারা। এতে যেমন প্রতিবাদ করার দুঃসাহস কারো থাকে না তেমনি প্রতিরোধেরও কেউ থাকে না তাদের অবাঞ্ছিত চীৎকারের গতি সামাল দেবার। এভাবেই চলে এসেছে, চলছে এখনো, চলবে হয়তো আরো কিছুকাল।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইসলামের ইতিহাসের সূত্রপাত ঘটেছে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ সালে যখন মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে। কথিত আছে, একদিন তিনি হেরা পর্বতের গুহায় গিয়েছিলেন ধ্যান করার জন্যে। তিনি মাঝে—মধ্যে সেখানে যাওয়া—আসা করতেন বলে জানা যায়। তবে হঠাৎ একদিন তিনি অস্বাভাবিক ভয়ে ভীত চীৎকারে ছুটে এলেন স্ত্রী খাদিজার কাছে এবং বললেন তাকে জড়িয়ে ধরতে। খাদিজা তৎক্ষণাত একটি কম্বলে তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের উরুতে বসালেন এবং জানতে চাইলেন তার ভয়ের কারণ। তখন শীতের মাঝেও তার (মুহাম্মদ) চোখে—মুখে বিন্দু বিন্দু ঘামের চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছিল। মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ছিল তখন চল্লিশ বছর আর স্ত্রী খাদিজার সাতান্ন বছর।
তার বর্ণনায়, মুহাম্মদ (সাঃ) ব্যক্ত করেন যে, তিনি একজন মন্দ আত্নাকে দেখেছেন যিনি তাকে পড়তে বলেছেন কয়েকটি আরবী বাক্য। বস্তুতঃ তিনি পড়া বা লেখাতে নিজের অযোগ্যতা প্রকাশ করলেও ওই ব্যক্তিটি তিন তিনবার তাকে পড়তে বললেন ও পরে সাহায্য করলেন পড়তে— “ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাকা” অর্থাৎ “পড় তোমার প্রভুর নামে।” তিনি তা পড়তে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে তা মুখে প্রকাশ করেন অনভিপ্রেত সেই আগন্তুকের উপস্থিতিতে।
ব্যাপারটি খাদিজাকে একটু ভাবিয়ে তুলেছিলো, তবুও তিনি স্বীয় চিন্তা আর অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বলে উঠলেন ‘তোমার কাছে জিব্রাইল এসেছিল’, তোমাকে নবুয়ত দান করার জন্যে। কিন্তু বিবি খাদিজার কথায় মুহাম্মদ (সাঃ) এর চিত্ত নাড়া দিলো না । তিনি তখনও বুঝে উঠতে পারেন নাই এইসব আলামত সমূহের কারণ ও প্রকারভেদ।
বিবি খাদিজা মূর্তি পুজারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের খ্রীষ্টায়ান সম্প্রদায়ের একজন ধনবান সম্ভ্রান্ত মহিলা। তার চিন্তাধারা আর অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যা ভেবেছেন তা দিয়ে অভয়দান করেছেন স্বামীকে এই বলে— “নিশ্চয় সেই ব্যক্তি জিব্রাইল এবং তিনি তোমার জন্যে নবুয়তের বার্তা বহন করে এনেছেন।” যেই ভাবা সেই কাজ।
মুহাম্মদ তখনো উদ্ভ্রান্ত অসহায়ের মতো আচরণ করলেও বিবি খাদিজা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলন তারই এক বর্ষীয়ান চাচা–ওরাকা—বিন—নাওফুল– এর কাছে যার পান্ডিত্যের সুনাম ছিল ততকালীন সময়ে। চাচা ওরাকা—বিন—নাওফুল সে সময়ে ইঞ্জিল শরীফ আরবীতে প্রথম অনুবাদ করে সুনাম অর্জন করেছিলেন। যদিও ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যায় যে ওরাকা—বিন—নাওফুলকে খ্রীষ্টায়ান সম্প্রদায় থেকে যে কোন একটি বিশেষ কারণে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। তার অপরাধের কথা অবশ্য তেমনভাবে ব্যপ্তিলাভ করে নাই যেভাবে তিনি সুনাম অর্জন করেছিলেন ইঞ্জিল শরীফ আরবীতে অনুবাদের মাধ্যমে।
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে ওরাকা—বিন—নাওফুল মুহাম্মদ (সাঃ) এর উল্লেখিত বিষয়টি শোনার পর মতামত ব্যক্ত করেন যে, জিব্রাইল সেই পর্বত গুহায় “নবুয়তের” বার্তা নিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসেছিল। সেই সাথে তিনি নবীজিকে অনুপ্রাণিত করেন “নবুয়তে” সাড়া দিয়ে নিজেকে নবী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করার জন্যে।
এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন এ কারণে যে, কতিপয় ভন্ড আলেম তাদের বক্তৃতা—বিবৃতিতে প্রচার করে চলেছেন যে, ওরাকা বিন নাওফুল নবীজির ঘাড়ের পিছনে বা পিঠে একটি চিহ্ন দেখে তাকে নবী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ব্যাপারটি যে কত বড় হাস্যকর হতে পারে তা আর ভেবে দেখেনি কেউ। সেই থেকে শুরু তার (মুহাম্মদ সাঃ) এর নবীত্বের পথ চলা। এখানে কোরআনের একটি আয়াত প্রণিধানযোগ্য:
وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدَىٰ
সেখানে বলা হয়েছে—“তিনি পেয়েছেন আপনাকে পথহারা, অতঃপর তিনি পথপ্রদর্শন করেছেন (সূরা আদ-দোহা ৯৩:৭)।
পথহারা মানে পথভ্রষ্টতা বোঝায়। পথভ্রষ্টতা মানে মন্দতায় পথ চলা বোঝায়। আয়াতটিতে কি তার ভ্রষ্টতার কথা স্পষ্টতঃ প্রমাণ করে না? তাই যদি না হয় তবে কেন আল্লাহ তায়ালা এ কথা বলবেন?
সে যাই হোক, শুধুমাত্র তার নিজের বর্ণনায় আর বিবি খাদিজার অনুমানে বলা হয়েছে ফেরেশতা (জিব্রাইল) এসেছিল হেরা পর্বতের গুহায় নবীজিকে কোরআন শিক্ষা দিতে।
বার্ধক্যের কারণে আর অসংকুলান তথ্যের নির্ভরতায় ‘ওরাকা’ একমত হয়েছেন যে জিব্রাইল নবীজির কাছে নবুয়তের বাণী নিয়ে এসেছিল । তবে একথা শোনা যায় নাই যে, সেই ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর আরশ থেকে নবুয়তের বাণী নিয়ে আসা একজন ফেরেশতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছে । কিন্তু ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর হলেও তার সত্যতা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেননি কেউ কোনদিন।
আমরা জানি ফেরেশতা পরিচয়ে অনেক সময় মন্দ আত্নারা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে মানুষকে প্রবঞ্চিত করে, প্রতারিত করে। আদম ও হাওয়া সেইভাবেই প্রলোভিত ও প্রতারিত হয়েছিলেন শয়তানের প্ররোচনায়, আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিলেন আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে। আজকের পীর—ফকিরদের মাঝেও আমরা দেখি এই প্রবঞ্চনার ফজিলত।
তারা দাবী করেন আশ্চর্য সব আলৌকিক শক্তির কথা যা তারা পেয়ে থাকে স্বপ্নে, নয়তোবা স্বপ্নসম অবচেতন মনের সুপ্ত আকাঙ্খার প্রতিফলনে। এসব কর্মকান্ড অনেকাংশে “মন্দ আত্না” নির্ভর যা শয়তানের আত্নপ্রকাশের বিবিধ কৌশল ছাড়া কিছু নয় ।
আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সৃষ্ট পৃথিবীকে শয়তানের হাতে ছেড়ে দেন নাই। শয়তান তার মন্দ কাজের বিস্তার ঘটায় মানুষের ঘাড়ে নির্ভর করে। মানুষ যখন স্বেচ্ছায় শয়তানের পরিকল্পনায় আত্নহুতি দেয় সত্য মনে করে, তখন শয়তান তার শক্তির সক্ষমতা প্রকাশ করতে পারে সেই ব্যক্তির জীবনে। আদম (আঃ) এর পাপে পতনের পর আল্লাহ্ তাঁকে বিতাড়িত করেছেন বেহেশেতের বাগান থেকে। আদমের উপর জয়লাভের পর থেকে শয়তান তার মন্দ আত্মাদের মধ্যদিয়ে মানুষকে নিজের দলভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। সেইজন্যে যারা আল্লাহর কালাম আর প্রাচীন নবীগণের পথ পরিহার করে এসেছে, তাদের জীবনে শয়তান প্রবল প্রতাপে অধ্যাবধি রাজত্ব করে চলেছে।
ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই আল্লাহর ফেরেশতা যতবার মানুষের মাঝে স্বর্গীয় বার্তা নিয়ে এসেছে ততবার নিজের পরিচয় ও আল্লাহর প্রিয়জনদের পরিচয় দিয়ে ব্যক্ত করেছে তার আগমন বার্তার কারণ সমূহের।
কিন্তু এহেন কোন অভিব্যক্তি কিংবা চিহ্ন আমরা দেখতে পাই না হেরা পর্বর্তের গুহার নিভৃত অন্ধকারে। মানুষ তার স্রষ্টাকে অন্নেষণ করতে বন-জঙ্গল কিংবা পাহাড়-পর্বতের গুহায় যায় নাই কখনো, বরং সেই মহিমান্বিত ঈশ্বর মানুষের অন্তরে নিজেকে প্রকাশ করেছেন ধৈর্য আর মহত্ত্বম ভালবাসায়। সুতরাং, নবীজির হেরা পর্বতের গুহায় জিব্রাইলের সাথে সাক্ষাত নেহাতই “ইবলিশ”এর মুখোমুখি হওয়া ও প্রতারিত হওয়া ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
তবে হযরত মুসা (আঃ) এর ব্যাপারটি ছিল একটু ভিন্নতর। কারণ, তিনি কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে ‘সিনয় বা জয়তুন’ পর্বতে আরোহন করেছিলেন ঝোপের মধ্যে আগুনের প্রকাশ দেখে। সেখানে আগুন জ্বলছিল কিন্তু পুড়ছিলো না কিছু। এতে আশ্চর্য হয়ে ক্রমান্বয়ে তিনি সেদিকে আকৃষ্ট হন আর পরবর্তীতে আল্লাহ্ তায়ালার গায়েবী আওয়াজ শোনেন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে ডেকেছিলেন এক অন্তরঙ্গ আহ্বানে এবং দিয়েছিলেন (নবুয়তের) নবীত্বের মর্যাদা। সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অনেকেই নবী হওয়ার বাসনায় পাগলের প্রলাপ বকেছেন পরবর্তীতে।
বেহেশত থেকে বিতাড়িত ইবলিশ্ (শয়তান) মানুষকে তাদের ঈমান থেকে বিচ্যূত করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। যেহেতু মুহাম্মদ (সাঃ) তখনও এক ঈশ্বরতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না, সেহেতু তাকে অতি সহজেই বিভ্রান্ত করা সম্ভব ছিল। কারণ তখনও তিনি ছিলেন মূর্তি পূজারীদের দলভূক্ত। তার দাদা আব্দুল মোতালেব সহ চাচা আবু তালেব ও অন্যান্য পবিবারবর্গ মূর্তি পূজা করতেন।
শুধুমাত্র বিবি খাদিজা ছিলেন আহলে কিতাবীদের অনুসারী যদিও তিনি মনে-প্রাণে তা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে একথা সত্য যে, বিবি খাদিজা প্রাচীন নবীদের কথা জানতেন এবং মাঝে মধ্যে তা স্বামী মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলতেন। মুহাম্মদ (সাঃ) তা শুনতেন এবং বিস্ময়ে হতবাক হতেন। শোনা যায় মুহাম্মদ (সাঃ) অতি আগ্রহে তা শুনতেন বিবি খাদিজার কাছ থেকে এবং যায়দ নামে এক ক্রীতদাস এর কাছ থেকেও শুনতেন সেসব কথা। পরবর্তীতে মারিয়া কিবতীয়া মুহাম্মদ (সাঃ) এর রক্ষিতার কাছ থেকেও শুনেছেন তিনি সেইসব কথা যা নিজে কিতাব পড়ে বুৎপত্তি লাভ করেন নাই।
সুতরাং, জিব্রাইল বা ফেরেশতাগণের বিষয়ে তার ধারণা ছিল অত্যান্ত অপ্রতুল। শুধুমাত্র খাদিজার কথায় তিনি নবী হয়ে গেলেন সেই থেকে। আর ইবলিশ হয়ে গেলেন জিব্রাইল ফেরেশতা। ইংরেজীতে ছোট একটি বাক্যের ভুলে অত্যান্ত বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি হতে পারে ক্ষেত্র বিশেষে। কেউ যদি Unite কথাটি ভুল বানানে Untie লেখেন তবে তার অর্থ দাঁড়ায় দু’টি ভিন্ন জিনিসের। Unite মানে একত্র করা আর Untie মানে বিচ্যূত করা। একটু ভুলের কারণে সৃষ্টি হতে পারে বিশাল সমস্যার সূত্রপাত।
বিবি খাদিজার এক কথায় মুহাম্মদ (সাঃ) যখন নবী হয়ে গেলেন তখন তাকে প্রাচীন নবীদের মতো চলাচল করতে শেখানো হলো খাদিজার স্বল্প প্রচেষ্টায়। খাদিজার সম্মান-সম্ভ্রম অব্যাহত ছিল কুরাইশদের কাছে তার বিত্ত-বৈভব আর সামাজিক অবস্থানের কারণে। তবে তার ব্যাপারে অনেক রটনাও ছিল বিদ্যমান। কারণ, ইত্যবসরে তিনি দুই দুইবার বিবাহ করেছেন এবং তার বিয়াল্লিশ বছর বয়সে পঁচিশ বছর বয়সী মুহাম্মদ (সাঃ) কে (তৃতীয় বিবাহ) বিবাহ করা ইত্যাদি, ইত্যাদি।
সে যাই হোক, নবীজির নবুয়ত প্রাপ্তির পর পরই তিনি শ্রেষ্ঠ বন্ধু আবু বকর (রাঃ) কে তা জানালেন এবং সেই সাথে তাকে ইসলামের দীক্ষা দিলেন। এরপর যে ক্রীতদাসটিকে খাদিজা তাকে দান করেছিলেন তাকে আজাদ করে তাকেও দীক্ষা দিয়েছিলেন ইসলামের বারতা। এই তিনজন বিবি খাদিজা, আবু বকর ও যায়দ হলেন ইসলামের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তিবর্গ ও সৈনিক।
অবস্থাদৃষ্টে কতিপয় প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া স্বাভাবিক: প্রথমতঃ মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিবি খাদিজার বিবাহ কোন্ আয়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত? অর্থাৎ, কে তাদের কোন্ শরীয়ত বা বিশ্বাসের ভিক্তিতে বিবাহ সম্পাদন করেছেন, কেনো আজো তা প্রকাশ পায় নাই জনসম্মুখে? আর যদি ইসলামিক তত্ত্বের ভিক্তিতে তা না হয়ে থাকে তাহলে তা হালাল হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা? যদিও আমরা জানি নবুয়তের বহু পূর্বে তাদের বিবাহ হয়েছিলো। কিন্তু কিভাবে? খাদিজার ইচ্ছানুযায়ী খ্রীষ্টিয়ান মতে নাকি নবীজির পারিবারিক বিশ্বাসের মন্ত্র-তন্ত্রের ভিক্তিতে? কোনো হুজুর আজ অবধি ওয়াজ-নসিয়ত করেন নাই এ বিষয়ে। কিন্তু কেন?
দ্বিতীয়তঃ নবীজি কিসের ধ্যান করতে গিয়েছিলেন হেরা পর্বতের গুহায়? তিনি তো তখন মুসলমান হিসেবে বিবেচিত হন নাই। তিনি আহলে কিতাবীদেরও অনুসরণ করেন নাই বিবি খাদিজাকে বিবাহ করার মধ্য দিয়ে। তাহলে তো ধরে নিতে হবে তিনি পথভ্রষ্ট ছিলেন সে সময়ে। হেরা পর্বতের গুহায় কি তবে তিনি অদৃশ্য কোনো দেবতার অন্নেষণ করতে গিয়েছিলেন যখন সেই কথিত জিব্রাইল তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো? এখানে একটি আয়াত উল্লেখযোগ্য-
أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَـَٔاوَىٰ
বাংলা অর্থঃ “তিনি কি আপনাকে ইয়াতীম অবস্থায় পাননি, অতঃপর আশ্রয় দেননি? (সূরা আদ-দোহা, ৯৩ঃ ৬)।
তৃতীয়তঃ কেনোই বা আমরা গ্রহণ করবো “ওরাকা-বিন-নাওফুল” এর মন্তব্য যখন তার জীবনের পথ চলাই ছিল ভ্রষ্টচিত্তের? কেনোই বা তখন খ্রীষ্টিয়ান সমাজ তাকে সম্প্রদায়চ্যূত করে বিতাড়িত করেছিলো চার্চ থেকে? এহেন ব্যক্তির মন্তব্যের গ্রহণ যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।
চতুর্থতঃ কিভাবে মহান স্রষ্টা তাঁর মহান বারতা এমন একজন ব্যক্তির কাছে পাঠালেন যে তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে মনুষ্য সৃষ্ট মূর্তি পূজায়? এছাড়াও, আল্লাহ্ কি এটাও জানতেন না যে সেই ব্যক্তিটি তাঁর বাক্য পড়তে বা বুঝতে পারবে না মূর্খতা হেতু? তাহলে কি বলতে হবে আল্লাহ্ তায়ালার তা অজানা ছিল? নাউজুবিল্লাহ্!
পঞ্চমতঃ নিজ ভাষায় যার লেখা বা পড়াতে অসমর্থতা রয়েছে কিভাবে সে ব্যক্তি মনে রাখতে পারবে ঐশ্বরিক বার্তাসমূহ? কিভাবে সেই ব্যক্তি নির্ভূলভাবে সমস্ত বার্তা অবিকল ভাবে মনে রাখতে পারে যখন তা লিপিবদ্ধ করা হয় নাই? মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন সাজালেও কোন সদুত্তর প্রত্যাশা করা যে বৃথা সে কথা আমি জানি। তবুও বলছি- যে, এই ব্যাপারটি বিশ্লেষণের দাবী রাখে। একটি স্বপ্নদৃষ্টে যদি কেউ পীর বনে যায়, একটি মন্দ আত্মার প্রভাবে যদি কেউ নবীত্ব দাবী করে তাহলে তো শয়তানের সুবিধা শতগুণ।
মানুষের মনুষ্যত্বের ঘিলুকে যদি সে করায়ত্ব করতে পারে তাহলে তো মানুষ যাদু-টোনা, টটকা-ফটকা কর্ম-কান্ডের ঝিকিরে উন্মাদ হবেই। পথভ্রষ্টতার নমুনাই হলো এটি। তাইতো আজ ইসলামী পান্ডিত্যের নেপথ্যে চলে শয়তানের ভেলকিবাজি। সেইসাথে চলে আপাদমস্তক আচ্ছাদনের অন্তরালে মন্দ আত্মার বিক্ষিপ্ত লালসার অভিলাষ। একেই আমরা কখনো সখনো বন্দেগী বলে অখ্যায়িত করি।
আরো একটি অনির্বাণ প্রশ্ন আমার অন্তরে সর্বদা ঘুরপাক খায়। আর তা হলো- কেন কোরআন নাযিল হওয়ার প্রথম বাক্যগুলো কোরআনের শুরুতে স্থান পেল না? তার অবস্থান হলো কোরআনের একেবারে শেষ প্রান্তে ৯৬ নম্বর সূরা আল-আলাক্ক এর ১-৫ আয়াতে? এটা যদি হয়ে থাকে কোরআন আর্বিভাবের প্রথম সূরা অর্থাৎ এই কথা দিয়েই তো শুরু হয়েছিল নবীজির ইসলাম যাত্রা। কেনো সেটা স্থান পাবে না কোরআনের শুরুতেই? আয়াতগুলি ঠিক এভাবেই শুরু।
ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ (১) خَلَقَ ٱلْإِنسَـٰنَ مِنْ عَلَقٍ (২) ٱقْرَأْ وَرَبُّكَ ٱلْأَكْرَمُ (৩) ٱلَّذِى عَلَّمَ بِٱلْقَلَمِ (৪) عَلَّمَ ٱلْإِنسَـٰنَ مَا لَمْ يَعْلَمْ (৫)
বাংলা অর্থ: “পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালক অতিশয় দয়ালু, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না (আল-আলাক্ক, ৯৬ঃ ১-৫ আয়াত)।
এর শানে নযুলে এভাবে বলা হয়েছে ‘আরিশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ এর কাছে সত্য স্বপ্নের আকারে (অহীর) সূচনা হয়। অতঃপর তার কাছে ফেরেশতা এসে বললেন ‘পড়ো, তোমার প্রভুর নামে। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্তবিন্দু থেকে। পড়ো, এবং তোমার প্রভু মহাসম্মানী। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন।” (সহীহ্ আল-বুখারী, আধুনিক প্রকাশনী, ৪র্থ খন্ড, ৬১৩ পৃষ্ঠা, ৪৫৮৭ নং হাদীস)। এখানে বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ্ এর কাছে সত্য স্বপ্নের আকারে অহী আসে। স্বপ্ন যেমন কখনো সত্য হতে পারেনা তেমনি সত্যটিও স্বপ্নের মতো হতে পারে না। তবে কি তিনি আবেগ প্রসুত কল্পনায় ধারণ করেছেন জিব্রাইলের অবয়ব, ভাষ্য বা বাক্য?
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ্ তায়ালাই ভালো জানেন। তিনি সর্বজ্ঞ। রহস্যে ঘেরা ‘ওরাকা-বিন-নাওফুল তার পান্ডিত্বের ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ (সাঃ) কে নবী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও নবীজির প্রথম হিজরত এর পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই পৃথিবীতে। তার মৃত্যুরও কোন চিহ্ন কোথাও উল্লেখ করেন নাই কেউ। হঠাৎ তার গায়েব হয়ে যাবার বিষয়ে কেউ কেউ মনে করেন তাকে নিরবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো অদৃশ্য হাতের ইশারায়। ‘ওরাকা’ নিজে নবী নন যে তিনি কাউকে নবীর মর্যাদা দান করার ক্ষমতা রাখেন। তাছাড়া তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) কে নবী হিসেবে সমর্থন করলেও নিজে কখনো ইসলাম গ্রহণ করেন নাই বা অনুসরণ করেন নাই ইসলামের বিধি-বিধান সমূহ। কিন্তু কেন?
মজার ব্যাপার হলো- মুহাম্মদ এর তথ্যানুযায়ী তিনি একাই নিজের সাক্ষী হয়েছেন যে সে অশরীরি ব্যক্তিটি হেরা পর্বতের গুহায় তাকে বলেছেন- “হে মুহাম্মদ, পড় তোমার প্রভুর নামে।” এ বিষয়ে আর কোন সাক্ষী নাই বা ছিলনা। শুধুমাত্র তিনিই বলেছেন তার এই অভিজ্ঞতার কথা স্ত্রী বিবি খাদিজাকে বিস্ময়ে বিমোহীত হয়ে। জিব্রাইল নিজে তাকে তার পরিচয় ব্যক্ত করেন নাই। বরং ভয়ে উদভ্রান্তের মতো খাদিজার কাছে ছুটে গেলে খাদিজাই তাকে আশ্বস্ত করেন। নবীজি ভেবেছিলেন ব্যক্তিটি কোন মন্দ আত্মা ছাড়া আর কেউ নন।
হেরা পর্বতের গুহায় এক দুঃস্বপ্নের মতো তিনি যাকে দেখেছিলেন তাকে বিবি খাদিজা, নাওফুল, আবুবকর নবুয়তের চিহ্ন মনে করলেও মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজের অতি কাছের লোকজন এতে হাস্য-বিদ্রুপ করেছিলো। বলেছিলো তিনি বদ্ধ উম্মাদ ছাড়া কিছু নন। পিতামহ আব্দুল মোতালেব সহ তার নিকট-আত্মীয় সকলেই হতাশ হয়েছিল তার এই আচরণে।
আমরা যদি জিব্রাইল ফেরেশতার বিষয়ে কথা বলি তাহলে অবশ্যই তার চারিত্রিক বৈশিষ্টসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখবো, সেইসাথে দেখা যাবে ইবলিশ কিংবা পতিত ফেরেশতা বা মন্দ আত্মার বিষয়টিও। ইতিহাসের পাতায় নজর দিলে আমরা দেখতে পাবো আল্লাহর সবক’টি নবী (ছোট বড় সবাই) এসেছেন বণী ইসরাইল জাতি থেকে। অন্য কোন জাতি বা বংশ থেকে নয়। এব্যাপারে কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে যে, “নিশ্চয় আল্লাহ্ নির্বাচন করেছেন আদমকে, নূহকে, ইবরাহীমের বংশধরকে এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ববাসীর জন্যে” (আল ইমরান, ৩ঃ৩৩)।
۞ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰٓ ءَادَمَ وَنُوحًا وَءَالَ إِبْرَٰهِيمَ وَءَالَ عِمْرَٰنَ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ
উল্লেখিত আয়াতে শুধুমাত্র দু’টি বংশধরকে আল্লাহ্ নির্বাচন করার কথা বলেছেন, তার একটি ইব্রাহীমের বংশ অর্থাৎ বণী ইসরাইল জাতি এবং অন্যটি ইমরানের বংশধর। তিনি কোরআনের কোথাও বলেন নাই কুরাইশ বংশধরদের কথা বা অন্য কিছু। আল্লাহ্ তায়ালা নিশ্চয় তাঁর কথার রদ-বদল করেন না আমাদের মর্জিমাফিক! সুতরাং, আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি আল্লাহ্ জিব্রাইলকে হেরা পর্বতের গুহায় তাঁর ঐশ্বরিক বার্তা দিয়ে পাঠান নাই। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ কেনো তার নিজের কথার বরখেলাপ করতে যাবেন আর ছয়শত বছর পর তাঁর ফেরেশতাকে পাঠাবেন এমন একজনের কাছে যিনি সেই নির্বাচিত বংশধরদের কেউ নন।
তাছাড়া এমন লোকের কাছেই বা তিনি তাঁর বাণী পাঠাবেন কেনো যে বাস্তবিকই লেখা-পড়ার কোনোটাই জানেন না। আল্লাহর কি এমন প্রয়োজন পড়ে গেল তাঁর নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার! আসতাগফিরুল্লাহ! আল্লাহ্ এমন কাজ করতে পারেন না।
বস্তুতঃ, মুহাম্মদ (সাঃ) তার এই অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতায় কান্ড-জ্ঞানহীন আচরণ করেছেন। আর তা ঢাকা দিতে খাদিজাকে বলতে হয়েছে নবীজির নবুয়ত প্রাপ্তির কথা। আরব্য উপন্যাসের চরিত্রকেও এটা হার মানিয়ে দেবার মতো ঘটনা বটে। দেখে-শুনে মনে হয় আল্লাহ্ তায়ালা যেন তাদের ছেলের হাতের মোয়া।
জিব্রাইল ফেরেশতা কোনো জিন বা ভূত নন যে সহসা যেখানে সেখানে আবির্ভূত হয়ে যাকে তাকে নবীত্ব বিলি করে বেড়ান। বরং তিনি আল্লাহর সুনির্দ্দিষ্ট বার্তা বহনকারী এবং শুধুমাত্র আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির কাছে বিশেষ বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেন এবং তার সুনির্দ্দিষ্ট কারণটিও বর্ণনা করেন। তাঁর উপস্থিতি মানুষকে ক্ষণিকের জন্য ভীত করে তুললেও তাঁর আশ্বাসবাণী মানুষকে প্রশান্তি দান করে। ঠিক এমনটি দেখা যায় যখন হযরত জাকারিয়া (নবী) তাঁর ইবাদতকালে সহসা জিব্রাইল ফেলেশতাকে দেখে আতকে উঠেছিলেন। পরে তার (জিব্রাইল) আশ্বাসবাণী ও আগমণের কারণ বর্ণনা করায় তিনি অনুধাবন করতে পারেন আল্লাহ্ তায়ালার পরিকল্পনা ( ইঞ্জিল শরীফ, লূক ১:১৯ আয়াত) দ্রষ্টব্য।
প্রবন্ধটি ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন: Jibreel Illusion |
জিব্রাইল (আঃ) হযরত জাকারিয়া (আঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়ে নিজের পরিচয় প্রদান করেন ও বলেন যে, তিনি আল্লাহ্ তায়ালার পাশে দন্ডায়মান থাকেন এবং এখন তিনি সেখান থেকে তাঁর জন্যে (জাকারিয়া) আল্লাহর হুকুম নিয়ে এসেছেন যা এক বিস্ময়কর চিহ্ন বহন করে মানব জাতির জন্যে। তিনি তাঁর (জাকারিয়া) অনাগত সন্তান হযরত ইউহোন্নার জন্মের বারতা নিয়ে এসেছিলেন।
একইভাবে, পরবর্ত্তীতে জিব্রাইল যখন হযরত মরিয়ম (আঃ) এর কাছে আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামতের বাণী নিয়ে আসেন তখন মরিয়ম (আঃ) ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন ক্ষণিকের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে জিব্রাইল ফেরেশতা তাকে অভয়বাণী দিয়ে বলেছিলেন যে, তিনি মানব জাতির জন্য এক সুসংবাদ বহন করে এনেছেন আল্লাহ্ তায়ালার কাছ থেকে। এবং একইভাবে নিজের পরিচয় তিনি কুমারী (সে সময়ে) মরিয়মকে দিয়ে বলেছিলেন, আল্লাহর মহান রহমত আপনার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আপনি এক পবিত্র পুত্রের জন্মদান করবেন (লূক ১: ২৮-৩১, ইঞ্জিল শরীফ) দ্রষ্টব্য।
অবিশ্বাস্য সেই কথায় মরিয়ম আতঁকে উঠেছিলেন এবং প্রশ্ন তুলেছিলেন তা কিভাবে সম্ভব? তখন জিব্রাইল ফেরেশতা তাকে খুলে বলেছিলেন আল্লাহর পরিকল্পনা যা মরিয়মকে শান্ত করেছে এক অনিবার্য প্রশান্তির মমতায়।
এখানে দু’টি বিষয় সুস্পষ্ট। প্রথমতঃ জিব্রাইল আল্লাহর আরশ থেকে তাঁর বার্তা নিয়ে এসেছিলেন এবং দ্বিতীয়তঃ তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন পরিষ্কারভাবে এবং বলেছিলেন তাঁর আগমণের কারণ। জিব্রাইলের আগমন ও বার্তা বহনের বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা নাই তবে রয়েছে আধ্যাত্মিক পরিণাম। এসবে অহেতুক আজগুবি কোন উপন্যাসের উপাদান নাই যা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
সঙ্গত কারনেই স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয় যে, হেরা পর্বতের গুহায় নবীজির সকাশে জিব্রাইল আসে নাই। এসেছিল ইবলিশ। আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করা শয়তানের তথা ইবলিশের প্রধান কাজ। মানব সৃষ্টির প্রথম থেকেই সে আদম সন্তানদের ক্রমাগতভাবে ধোঁকা দিয়ে আল্লাহর বিপরীতে চলার অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে। আর তারই প্রোরচনায় আল্লাহর বান্দারা বিভ্রান্ত হয়ে অসংলগ্ন কাজে লিপ্ত হয়ে পাপাচারে বন্দী হয়েছে। আল্লাহর নবীর কাছে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না শুধু যুদ্ধ-বিগ্রহ, নারী লোলুপতা, হত্যা আর ক্রীতদাস বেচা-কেনা। এসবে আল্লাহর কোন মহত্ত্ব প্রকাশ পায় না। যা প্রকাশ পায় তা মন্দতা আর লোলুপতার বিকৃত অভিব্যক্তি আর অসংযমী অভিলাষ। সংগত কারণেই দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, মুহাম্মদ (সাঃ) হেরা পর্বতের গুহায় ইবলিশকে দেখেছিলেন যে তাকে বিভ্রান্ত করে সত্য থেকে বিচ্যুত করে নিয়ে গেছে অন্ধকারের অন্তিম সীমানায়।
পরিশেষে, এটা অনস্বীকার্য যে, কোরআন বুঝে শুদ্ধকরে পড়ার পরিবর্তে তা পড়ে ভালভাবে বোঝা উচিত কি রয়েছে তাতে। আর সেইসাথে নিজের জ্ঞান ও বিবেকের পরিসরে উদ্ভাবন করা উচিত সত্যের অনিবার্য অবয়ব।
আপনি কি সাহসী এক সত্যান্নেষী? আপনি কি সত্য অন্নেষণ করে চলেছেন? যদি না হন তবে আজ থেকেই শুরু হোক আপনার নতুন পথচলা।
আরও জানুন: সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়াদৌড়ি |
Pingback: তার অবিচারের বলি যখন এক নিরপরাধ ব্যক্তি | all about Him