রসুলুল্লাহ্ শব্দের অর্থ আল্লাহর রাসূল বা আল্লাহর প্রেরিত। রসুলুল্লাহ্ শাব্দিক অর্থ নবী নয়, প্রেরিত অর্থাৎ যাকে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সুতরাং, আল্লাহর প্রেরিত প্রতিটি ব্যক্তিই রসুলুল্লাহ্। পবিত্র কিতাবে উল্লেখিত সব নবীকেই আরবীতে রসুলুল্লাহ্ বলা হয়। কিন্তু প্রায়শঃই, রসুলুল্লাহ্ বলতে আমরা শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেই সন্মোধন করে থাকি। মনে করি তিনিই রসুলুল্লাহ্ বা একমাত্র রাসূল।
যুগে যুগে জাতিতে জাতিতে আল্লাহ্ পাক তাঁর নবী রাসূলদের জগতে পাঠিয়েছেন তাঁর কালাম আর নির্দেশনা দিয়ে যেন মানুষের চৈতন্যের উদয় হয়, এবং তারা ফিরে আসে তাঁর প্রদর্শিত পথে। তাই প্রত্যেকটি নবী রাসূলের ভুমিকা ইতিহাসে অপরিসীম। প্রত্যেকেই আল্লাহর বাণী মানবজাতির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ত্যাগ আর তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে। অনেকে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করে গেছেন। নির্যাতন আর উপেক্ষা তাদের দমাতে পারে নাই এই কাজের আহবান থেকে। তাদের সেই অবদানকে আমরা মাঝে-মধ্যে কিন্ঞ্চিৎ স্মরণ করলেও আজো উপেক্ষা করে চলি অনায়াসে। অথচ সেইসব নবী রাসূলদের উদাহরণ অনুসরণ করলে আমরা পেতে পারি ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ জ্ঞান, যা হতে পারে আমাদের জাগতিক জীবনের পথ চলার পাথেয়।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নবী রাসূলদের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের পরিকল্পনা ও নির্দেশনাবলী প্রকাশ করেছেন মানুষের কাছে। তাই নবী রাসূলের গুরুত্বতা অত্যাধিক। কিন্তু বিশেষ কোন রাসূলকে দিয়ে বিশেষ কোন নবী-রাসূলের তারতম্য বা বিভেদ করেন নাই তিনি। সেটা আমরাই করে থাকি নিজস্ব বিবেচনায়। কোন নবী-রাসূল একে অন্যের চেয়ে বড় বা ছোট এমন নয়। প্রেত্যেকেই স্বীয় কর্মে ও আহবানে উজ্জ্বল। তবে কিতাবে উল্লেখিত কোন কোন নবী-রাসূলের গুরুত্বতা ও বৈশিষ্ট্য থাকার কারণ তাদের জীবনে আল্লাহ্-তায়ালার অলৌকিক শক্তির প্রকাশের কারণেই।
যেমন ‘এনক’ নবীকে জীবিত অবস্থায় বেহেশতে তুলে নেওয়া হয়েছে (ইব্রানী ১১: ৫ আয়াত দ্রষ্টব্য)।
মূসা নবীকে আল্লাহ্ নিজেই পর্বতের চূড়ায় ডাকলেন এবং সেখান থেকে দেখালেন তাঁর জাতি বণী ইসরাইলকে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুত দেশটিকে। এরপর তিনি তার জীবনাবসান ঘটালেন। তারপর, তিনি নবী ইউসা (আঃ) কে দায়িত্ব দিলেন বণী ইসরাইলকে নেতৃত্ব দেবার। মূসাকে তিনি সেই পর্বতের চূড়াতেই অব্যাহতি দিলেন মৃত্যুর হাতে এবং নিজে তার কবর দিলেন সেখানেই।
কেউ কেউ মনে করেন রসুলুল্লাহ্ বলতে শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেই বুঝায়। কিন্তু তাদের জানা উচিৎ যে, নবীজি নিজেই তাঁর নামের সাথে রসুলুল্লাহ্ সংযোজনকে মুছে ফেলেছিলেন একদিন। ঘটনাটি ঘটেছিল হুদাই বিয়ার সন্ধি চুক্তির সময়ে। মক্কার মুশরিকদের সাথে সন্ধিকালে আলী (রাঃ) তার মুসবেদা লেখেন। তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) এর নামের সাথে লেখেন মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ্। এই লেখায় মুশরিকরা আপত্তি তুলে বলে, এটা লেখা যাবে না। কেননা, যদি তুমি রাসূল হতে (অর্থাৎ আমরা যদি রাসূল মেনে নিতাম) তাহলে আমরা তোমার সঙ্গে লড়াই করতাম না। এ কথার প্রেক্ষিতে তারা দাবী করলো যেন মুহাম্মদ (সাঃ) এর নামের সাথে লেখা রসুলুল্লাহ্ কথাটি মুছে ফেলতে হবে। তখন তিনি আলী (রাঃ) কে বললেন, “শব্দটি মুছে ফেলো”। উত্তরে আলী (রাঃ) বলেন, “আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়”। অতঃপর রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) নিজ হাতে তা মুছে ফেলেন এবং তাদের সঙ্গে এই শর্তে সন্ধি করেন। (কিতাবুস সুলহে, সহীহ্ আল বুখারী ২৫০২, ২৯ অধ্যায় ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩ দ্রষ্টব্য)।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যদি নিজ হাতেই “রাসুলুল্লাহ্” শব্দটি তাঁর নাম থেকে মুছে দিয়ে থাকেন, তাহলে আজ অবধি তা প্রচলিত হয়ে আসলো কিভাবে? কারা তা নতুনভাবে সংযোজন করলো?
অনেক কথাই মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে যায় আমাদের। অনেকে গর্ব করেই একটা পদবী জুড়ে দেন নিজের নামের আগে বা পিছনে। এতে কিছুটা আত্নতৃপ্তি অর্জন করা যায় বটে কিন্তু তা দিয়ে ঐশ্বরিক মূল্যায়ন হয় না।
ইরানের ইসলাম প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন ধর্মীয় নেতা খোমেনী নিজেকে আয়াতুল্লাহ্ রুহুল্লা পদবীতে ভূষিত করেছিলেন এবং এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন আশির দশকে। আয়াতুল্লাহ্ ও রুহুল্লাহ্ এ দু’টো পদবীই তার নামের সাথে সংযোজিত হলেও তিনি আল্লাহর আয়াত বা রূহ নন। অন্যভাবে বিচার করলেও তিনি ঐশ্বরিক কোন ব্যক্তি নন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষ আমাদের মতোই। তিনি “শিয়া” মতাবলম্বী মানুষ ছিলেন এবং ধর্মের গোঁড়ামীযুক্ত বিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেশটিতে। পরবর্ত্তীতে উন্নয়নগামী সেই দেশটিই অধঃপতনের শেষ সীমান্তে পৌঁছে গিয়েছিলো তাঁর ধর্মীয় গোঁড়ামী আর অনুশাসনের পেষ্টনে।
খোমেনীর এই উদ্ধ্যত্বপূর্ণ আচরনের জন্য (আয়াতুল্লাহ্ রুহুল্লাহ্ নাম গ্রহণের জন্য) মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলির নেতারা মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনে মোবারক এর নেতৃত্বে একত্রিত হন এবং খোমেনীকে তাঁর এহেন পদবী ত্যাগ করতে চাপ দেন। তারা স্পষ্ট করে বলেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কেউ আয়াতুল্লাহ্ রুহুল্লাহ্ হতে পারেনা একমাত্র ঈসা আল্ মাসীহ্ ছাড়া। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকেই একমাত্র আয়াতুল্লাহ্ ও রুহুল্লাহ্ করে এ জগতে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তা পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে (সূরা মায়িদা, সূরা নিসা, সূরা আল-ইমরান দ্রষ্টব্য)।
يَـٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَـٰبِ لَا تَغْلُوا۟ فِى دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ ۚ إِنَّمَا ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥٓ أَلْقَىٰهَآ إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ ۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ ۖ وَلَا تَقُولُوا۟ ثَلَـٰثَةٌ ۚ ٱنتَهُوا۟ خَيْرًا لَّكُمْ ۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَـٰهٌ وَٰحِدٌ ۖ سُبْحَـٰنَهُۥٓ أَن يَكُونَ لَهُۥ وَلَدٌ ۘ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلًا (١٧١) |
বাংলা অনুবাদঃ হে কিতাবীগণ! দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করিও না ও আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলিও না। মারয়াম তনয় ঈসা মসীহ্ আল্লাহর রসূল ও তাহার বাণী যাহা তিনি মারয়ামের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন ও তাঁহার আদেশ। (সূরা নিসা, ৪: ১৭১ আয়াত)।
তফসীরে ইবনে আব্বাসে এ বিষয়ে বলা হয়েছে ঠিক এইভাবে,“হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য-সঠিক কথা ছাড়া বলো না। নিশ্চয় মারয়াম তনয় ঈসা মসীহ্ মহান আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বাণী। যা তিনি মারয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন এবং তাঁর পক্ষ হতে রূহ (তফসীরে ইবনে আব্বাস, সূরা নিসা ৪: ১৭১ আয়াত, পৃষ্ঠা ২৯২, প্রকাশনা ইসলামী ফাউন্ডেশন, ঢাকা)।
আরেকটি আয়াতে সেই একই কথার প্রকাশ পাওয়া যায়।
فَٱتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَآ إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا (١٧) |
বাংলা অনুবাদঃ “অতঃপর আমি (আল্লাহ্) তাহার নিকট আমার রূহকে পাঠালাম, সে তাহার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করিল” (সূরা মারয়াম, ১৯: ১৭ আয়াত)।
আয়াতটির প্রতিটি অক্ষরে প্রকাশ পায় আল্লাহর রূহের আত্নপ্রকাশের ঘটনা ও মসীহ্ রুহুল্লার ঐশ্বরিক পরিচিতি।
ঈসা মসীহ্ বা হযরত ঈসা (আঃ) প্রকৃত রুহুল্লাহ্ বা আল্লাহর রূহ। মানুষের গর্ভে জন্ম হলেও তিনি এসেছিলেন খোদার আরশ থেকে এই জগতের পরিমন্ডলে। এই জগতবাসীর কারণেই। তিনিই প্রকৃত নাজাতদাতা এবং হা যা সীরাতুল মুসতাকিম। যে তাঁর কথা বিশ্বাস করে ও যিনি তাকে পাঠিয়েছেন তার কথা শোনে, সে তৎক্ষণাত মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে। (৪র্থ খন্ড সিপারা, ইউহোন্না ৫: ২৪ আয়াত, ইন্জ্ঞীল শরীফ দ্রষ্টব্য)।
নাজাত বা উদ্ধারের বিষয়ে ঈসা মসীহ্ স্পষ্ট করে বলেছেন “আপনারা পাক-কিতাব খুব মনোযোগ দিয়ে তেলাওয়াত করেন, কারণ আপনারা মনে করেন তার দ্বারা আখেরী জীবন পাবেন। কিন্তু সেই কিতাব তো আমারই বিষয়ে সাক্ষী দেয়, তবুও আপনারা জীবন পাবার জন্য আমার কাছে আসতে চান না”, (৪র্থ সিপারা, ইউহোন্না ৫: ৩৯- ৪০ আয়াত, ইন্জ্ঞীল শরীফ)।
এটা অবধারিত সত্য যে, আমরা আজো খুব মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত করি আর মনে করি এই কাজটির মধ্য দিয়েই আখেরী জীবন পাবো। কিন্তু সেই কালামটির মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা আমাদের জানা প্রয়োজন তা অবজ্ঞা করি। অথচ সেই কালামের মধ্য দিয়েই আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাঁর সান্নিধ্যলাভের সুযোগ করে দিয়েছেন যা আমরা অগ্রাহ্য করে চলেছি প্রতিনিয়ত। আমরা যারা শুধু তেলওয়াতেই সীমাবদ্ধ, তারা এর অর্থ না জেনে অযথাই যত্রতত্র এর ব্যবহার করি। তাই রুহুল্লার চেয়ে রসুলুল্লাহর গুরুত্বতাকে আমরা মূল্য দেই বেশী। আমাদের বোঝা উচিৎ যে, আল্লাহর রূহ থেকে রাসূলের ব্যবধান বিশাল। রসুলুল্লাহ্ আল্লাহর বার্তাবাহক হতে পারেন। কিন্তু রুহুল্লা আল্লাহর মন, প্রাণ, অন্তর। তাঁর হুবহু প্রকাশ।
এবার দেখা যাক আমাদের নাজাতের বিষয়ে রুহুল্লাহ্ কি করতে পারেন। রুহুল্লাহ্ অর্থাৎ ঈসা মসীহ্ আল্লাহর কাছ থেকে এসেছেন মানব জাতীকে পথ প্রদর্শনের জন্য, গুনাহ্ থেকে উদ্ধারের জন্য। কোরআনের আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে—
فَٱتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَآ إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا (١٧) |
বাংলা অনুবাদঃ অতঃপর আমি তাহার নিকট আমার রূহকে পাঠাইলাম। সে তাহার নিকট পূর্ণমানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করিল (সূরা মারয়াম, ১৯: ১৭)।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি যা প্রমাণ করে আল্লাহ্ তায়ালা স্বয়ং ঈসাকে নিজের রূহ এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, মানবীয় গর্ভে যার মধ্য দিয়ে তাঁর মানবীয় আত্নপ্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু একথা অগ্রাহ্য করার অবকাশ নেই যে তিনি আল্লাহর রূহানী পুত্র বা রুহুল্লাহ্। তিনি আল্লাহর একমাত্র রূহানীপুত্র সেই কারণে তাঁকে অন্য কোন উপাধীতে সন্মোধন করাটাও হবে আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ।
অনেকে বুঝতে পারেনা পিতা-পুত্রের এই সম্পর্ক তাই যুক্তি খোঁজেন তা মিথ্যা প্রমাণ করার। আর দোদুল্যমান বিভ্রান্তিতে ভোগেন। তাদের ধারণা আল্লাহর সাথে মানুষের দৈহিক মিলনের মধ্য দিয়ে ঈসা মসীহের জন্ম (নাউজুবিল্লাহ্)।
আমাদের মস্তিষ্কের স্থীরকৃত ধারণা ভেঙ্গে যদি পরিচ্ছন্ন চিন্তাভাবনাকে পশ্রয় দিতে না পারি তাহলে আজীবন অন্ধকারে ঘুরপাক খেতে হবে উন্মাদের মতো।
একটা গল্প মনে পড়েছে ছোটবেলাকার। এক প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক তার ক্লাসে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন— ছাত্ররা, বলতো দুই আর দুইয়ে কত হয়? সবাই সমস্বরে বলে উঠলো- স্যার, চার হয়। কিন্তু একজন ছাত্র দাঁড়িয়ে বললো- না স্যার, দুই আর দুইয়ে পাঁচ হয়। শিক্ষক তাকে বললেন, না, এটা চার হবে তবুও সে শুনতে নারাজ। তার যুক্তিতে সেটা পাঁচ হয় তাই সে গোঁড়ারের মতো জিদ ধরে থাকলো- সেটা পাঁচই হবে। ঠিক এরকম গোঁড়ামীযুক্ত জিদ ধরে বসে থাকি আমরা অনেকেই আর অবহেলা করি সত্যের ব্যাখ্যা।
এরপরের আয়াতটি আরেকটু প্রান্জ্ঞল। এতে বলা হয়েছে—
قَالَ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَىَّ هَيِّنٌ ۖ وَلِنَجْعَلَهُۥٓ ءَايَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا ۚ وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا (٢١) |
বাংলা অনুবাদঃ আমি উহাকে এই জন্য সৃষ্টি করিব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট হইতে এক অনুগ্রহ; ইহা তো স্থীরকৃত ব্যাপার। (সূরা মারায়াম ১৯: ২১ আয়াত)।
এই উক্তিটি বুঝতেও কি কারো অসুবিধা হওয়ার কথা? আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন যে, এটা এক স্থীরকৃত ব্যাপার। কেন বলেছেন? কারণ মানুষের দ্বন্দ আর বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে ব্যাপারটি অবিশ্বাসের পর্যায়ে গড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করতে পারি? সেটাই তো হচ্ছে যত্রতত্র। তাঁর কালামের ব্যাখ্যা ও প্রেক্ষাপট না বুঝে কত ওয়াজই না করেছেন মহান আল্লাহর গুনাহগার বান্দারা। এভাবেই কালামের অপব্যাখ্যা আমাদের মাহফিলের বাজার সয়লাব করেছে। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েছে নিরীহ বিশ্বাসীরা।
রুহুল্লার বৈশিষ্ট্য হলো তিনি পাপহীন নিঁখুত এক ব্যক্তি যিনি বেহেশত থেকে এসেছেন পৃথিবীতে। আর এসেছেন একটি মাত্র উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে। আর তা হলো জগতের সব গুনাহগার/পাপী মানুষের গুনাহের কাফফারা হয়ে নিজেকে কুরবানী করার জন্যে, যাতে তার মধ্যে আল্লাহর বিচারের পরিসমাপ্তি ঘটে আমাদের জীবনে।
ব্যাপারটি বোঝা একটু কষ্টকর হতে পারে, তাই ভালভাবে তা বোঝার চেষ্টা করা উচিৎ।
প্রথম মানুষ আদম এর অবাধ্যতার কারণে পাপ বা গুনাহ্ গ্রাস করে মানুষের অন্তরের সমস্ত ধার্মিকতা। সেই থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আল্লাহ্ পাক এর মহব্বতের সম্পর্ক থেকে। শয়তানের প্রকৃতি তৎক্ষণাত এসে দখল করে মানুষের অন্তরের সার্বিক পরিসর। এভাবেই পাপের সূচনা হয় আদম সন্তানের জীবনে। ফলশ্রুতিতে আদমের এক সন্তান তাঁর আরেক সন্তানকে হত্যা করে এক বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়। আদম (আঃ) যেমন গুনাহ্ করার পর নিজেকে আল্লাহর দৃষ্টি থেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিল, ঠিক তেমনি তার সেই খুনী সন্তানও আল্লাহর দৃষ্টির আড়ালে লুকাবার অপচেষ্টা চালায় (পয়দাদেশ)। আজো এর ব্যতিক্রম হয় না। আজো মানুষ নির্দ্ধিধায় পাপ করে (ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়) আর তা থেকে নিজেকে আড়াল করার শত কৌশলে লিপ্ত হয়। আর আল্লাহ্ পাক মানুষকে তার সেই পতন থেকে উদ্ধার করে নিজের সান্নিধ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এটাই আল্লাহ্ তায়ালার মহব্বত।
যেহেতু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ন্যায়বান ও দয়ালু, সেহেতু ইচ্ছা করলেও তিনি মানুষকে ক্ষমা করে দিতে পারেন না। কারণ, প্রত্যেকটি কর্মের পরিণাম অপরিহার্য। তাই এই গুনাহগার বান্দাকে নাজাত দানের জন্য তাঁকে নিজেই কুরবানীর ব্যবস্থা করতে হয়। ইন্জ্ঞীল শরীফের ইব্রানী কিতাবের ৯ অধ্যায়ের ২২ আয়াতে বলা হয়েছে “রক্তক্ষরণ ব্যতীরেকে পাপের কাফফারা হয় না” অর্থাৎ মানুষের পাপের কারণে তাকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এভাবেই, পশু কুরবানীর মধ্য দিয়ে সাময়িকভাবে কাফফারা করা যায় বটে তবে তার স্থায়ী সমাধান হয় না। আর সে কারণেই আল্লাহ্ পাক তাঁর রূহানী পুত্র রুহুল্লাকে পাঠিয়েছেন পাপী মানুষের হয়ে যেন তাদের পাপের জন্যে নিজে কুরবানী হন। আর এর মধ্যে দিয়েই পতিত আদম সন্তান যেন আবার আল্লাহর সান্নিধ্যে ফিরে আসে।
পাপের কারণে আদম ও বিবি হাওয়া যখন অনুভব করলেন যে তারা উলঙ্গ, তখন তারা তাঁদের উলঙ্গতা ঢাকতে তৎপর হলেন আর গাছের আড়ালে লুকালেন আল্লাহর দৃষ্টির অন্তরালে থাকার অভিপ্রায়ে। আজো আমরা সেই একই কায়দায় স্রষ্টার আড়ালে নিজেদের লুকাতে তৎপর হই যখন তাঁর অবাধ্য হয়ে পড়ি।
আদম ও হাওয়ার উলঙ্গতা ঢাকতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পশুর চামড়া দিয়ে তাদের ঢেকে দিয়েছিলেন। আর এ জন্যে নিরীহ এক পশুকে জীবন দিতে হয়েছিল। সেটা ছিল একটি তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক সমাধান। আজো সে সব চলছে একই ধারায়। মানুষ অহরহ পাপ করছে আর নিজেকে তা থেকে লুকিয়ে রাখার শত চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু পাপের অবধারিত পরিণতির কথা কে বিবেচনা করে? আদম গাছের বড় বড় পাতা দিয়ে নিজের লজ্জা আবরণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা দিয়ে কি অবাধ্যতা ঢাকা যায়? ঢাকা যায় পাপ? আল্লাহর দৃষ্টির আড়াল করার কোন উপায় নেই মানুষের। তবুও, তাদের চেষ্টার অন্ত নেই।
প্রক্ষান্তরে, রসুলুল্লাহ্ বা অন্য কোন প্রেরিত সে যেই হোক না কেন, তার কোন যোগ্যতা নেই নিজেকে পাপ থেকে উদ্ধার করার। অন্যকে উদ্ধারের কথা তো সুদূর পরাহিত। রসুলুল্লাহর জীবনেও ছিল অনেক পাপ আর সে কারণে তাকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে বারংবার।
নিচের কতিপয় সূরাতে রসুলুল্লাহর গুনাহের প্রকাশ ঘটেছে এইভাবে—
فَٱعْلَمْ أَنَّهُۥ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسْتَغْفِرْ لِذَنۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ ۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَىٰكُمْ (١٩) |
বাংলা অনুবাদঃ সুতরাং জানিয়া রাখ, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদিগের ক্রটির জন্য। আল্লাহ্ তোমাদিগের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন (সূরা মুহাম্মদ, ৪৭: ১৯ আয়াত)।
অতএব তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই তাই তোমার নিজের এবং বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের জন্য ক্ষমা চাও। আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি ও আবাসস্থল সন্মন্ধে জ্ঞাত (সূরা মুহাম্মদ ৪৭: ১৯ আয়াত, নূরানী কোরআন শরীফ, মাওলানা আশরাফ আলী যানভী অনুবাদিত)।
فَٱصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّ وَٱسْتَغْفِرْ لِذَنۢبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِٱلْعَشِىِّ وَٱلْإِبْكَـٰرِ(٥٥) |
বাংলা অনুবাদঃ অতএব তুমি ধৈর্য ধর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি ক্ষমা চাও তোমার পাপের জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমরা রবের সুপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর (সূরা মু’মিন, ৪০: ৫৫ আয়াত)।
وَيَنصُرَكَ ٱللَّهُ نَصْرًا عَزِيزًا (٣) |
বাংলা অনুবাদঃ যেন, তিনি তোমার অতীত ও ভবিষ্যত ক্রটিসমূহ মার্জনা করবেন এবং তোমার প্রতি তার নেয়ামত পূর্ণ করবেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করবেন (সূরা ফাতহ্, ৪৮: ৩ আয়াত)।
وَٱسْتَغْفِرِ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا (١٠٦) |
বাংলা অনুবাদঃ “এবং আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর, আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (সূরা আন্ নিসা, ৪: ১০৬ আয়াত)।
উল্লেখিত প্রতিটি আয়াতে স্পষ্টতঃ মুহাম্মদ (সাঃ) এর পাপের কথা উল্লেখ রয়েছে। আর সে কারণে তাকে বারবার ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে আল্লাহর কাছে। যদিও ইসলামী বক্তারা এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে সত্যতা পাশ কাটিয়ে যেতে চান তবুও কি এর কোন পরিবর্তন সম্ভব? এসব আয়াতে এ কথাও বলা হয়েছে যে আল্লাহ্ তার (রাসূলের) গতিবিধি সন্মন্ধে অবগত আছেন। সোজা বাংলায় উক্তিটিকে ধমক বলা যেতে পারে।
এটাই যদি হয়ে থাকে রসুলুল্লার অবস্থা তাহলে কিভাবে তিনি পাপী মানুষকে তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারেন? যে ব্যক্তির নিজের জীবনে পাপ বিদ্যমান, যাকে বারে বারে নিজের পাপের জন্যে ক্ষমা চাইতে হয়, তিনি কিভাবে হতে পারেন নাজাতদাতা?
আমরা যদি একটু বিশেষভাবে অন্য একটি আয়াতের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে তিনি আজো বেহেশতের কাছাকাছি কোথাও পৌঁছাতে পারেন নাই। সূরা আহযাবের এই আয়াতটি লক্ষ্যনীয়। এখানে বলা হয়েছে—
إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَـٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِىِّ ۚ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ صَلُّوا۟ عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا (٥٦) |
বাংলা অনুবাদঃ আল্লাহ্ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর (সূরা আহযাব, ৩৩: ৫৬ আয়াত)।
আয়াতটি লক্ষ্যণীয় এই জন্যে যে, এখানে বলা হয়েছে আমরা যেন তার জন্যে অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। অর্থাৎ তার উদ্দেশ্যে দরূদ সালাম পাঠ কিংবা বিনতি প্রার্থনা করি। কিন্তু এ কথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য প্রার্থনা করেন। প্রশ্ন হলো আল্লাহকে যদি তার জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে হয় তাহলে কি আল্লাহকে নবীর চেয়ে ছোট করা হলো না? আল্লাহকেও অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে হয়, এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য? তবে কি নবীর মর্যাদা আল্লাহর চেয়েও বেশী? তিনি কি তাঁরও উর্দ্ধে? অন্যদিকে, ফেরেশতারাও তার জন্যে অনুগ্রহ প্রার্থনা করে অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্যে বিনতি প্রার্থনা করে কথাটি একটু বিবেচনার বিষয়। আমাদের জানা মতে আল্লাহ্ যখন সৃষ্টির সেরা জীব আদম বা মানুষকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে সবকিছুর উপর কর্তৃত্ত্ব দিলেন এবং ফেরেশতাদেরকে বললেন আদমকে সেজদা করে সম্মান দেখাতে, তখন তিন চতুর্থাংশ ফেরেশতা বেঁকে বসলো এবং তা করতে অসম্মতি জানালো। ফলশ্রুতিতে, আল্লাহ্ পাক তাদেরকে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করলেন। ফেরেশতাদের যুক্তি হলো তারা আগুনের তৈরী এবং মানবের চেয়ে অনেক উন্নত সৃষ্টি। কিভাবে তারা মাটির তৈরী মানুষকে সেজদা করে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে? এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ফেরেশতাগণ মানুষের জন্য (আদম সন্তান) দরূদ পাঠ করবে বা বিনতি প্রার্থনা করতে তা কি তাদের ইচ্ছার পরিপন্থী নয়?
আমরা তার জন্য প্রায়শঃই অনুগ্রহ প্রার্থনা করে চলেছি। প্রত্যেক ওয়াক্ত আযানের পরপরই যে দোয়া আমরা পড়ি তা তার জন্যে অনুগ্রহ প্রার্থনা। আমাদের নিজের জন্য নয়। অথচ আমাদের জন্যে তো তারই সাফায়াত করার কথা। রুহুল্লার জন্যে তো কাউকে সেভাবে অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে হয় না। আর পাক কিতাবের কারো জন্যেও আমাদের করতে হয় না বিনতি প্রার্থনা। কারণ তারা তো জান্নাতের অধিবাসী। জান্নাতবাসীদের জন্যে মর্তলোকবাসী মানুষের প্রার্থনার প্রয়োজন আছে কি? এইসব কিছু বিবেচনা করলে আমাদের বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে রসুলুল্লাহ্ আমাদের নাজাতদাতা হতে পারেন না। আমাদের অনুগ্রহ প্রার্থনায় আল্লাহ্ পাক হয়তো তাকে কোনদিন জান্নাতের আলো দেখাতে পারেন। ব্যাপারটা অনেকখানি এরকম— বিরাট শিল্পপতী সেলিম সাহেব গত সপ্তাহে মারা গিয়েছেন। প্রায় হাজার খানেক মানুষ-মুসুল্লি জমা হয়েছিলেন তার জানাযায়। গত পরশুদিন তার উসিলায় বিশাল এক মেজবানের আয়োজন করা হয়েছিল।
কয়েক হাজার মানুষ সেখানে জড় হয়ে ভুরিভোজ সহকারে দু’হাত তুলে মরহুমের আত্নার মাগফেরাত কামনা করেছিলেন আর দোয়া চেয়েছিলেন যেন তিনি জান্নাতবাসী হন। এতগুলো মানুষের অনুগ্রহ প্রার্থনায় মরহুম সেলিম সাহেব যদি বেহেশতবাসী হতে পারেন তবে তার কারণে বিশাল এই আয়োজনটি সার্থক হবে। যদি তিনি জান্নাতে না পৌঁছান তাহলে আমাদের প্রার্থনা করে যেতেই হবে তার শুভকামনায়। যদি সেলিম সাহেব জান্নাতবাসী হতেই পারেন, তাহলে সেখান থেকে তিনি কখনো তার পরিজনদের জানাতে পারবেন না তার বর্তমান পরিস্থিতির কথাটি।
এসব কারণেই আমাদের নিশ্চিতভাবে জানা প্রয়োজন আমরা কোথায় চলেছি। কার সাফায়াতের মুখাপেক্ষী আমরা। কে পারেন আমাদের নাজাত বা উদ্ধার নিশ্চিত করতে, রসুলুল্লাহ্ না রুহুল্লাহ্। আসুন, বিনম্রভাবে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের নিজের জীবনের জন্যে প্রার্থনা করি যেন সঠিক পথটি আমরা পেতে পারি সহজেই। আর কাটিয়ে উঠতে পারি সমস্ত বিভ্রান্তির বেড়াজাল।
মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসার প্রকাশ ঘটেছে এভাবে— যখন আমরা পাপী ছিলাম মসীহ্ আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন আমাদের পাপের কারণে। যেন তাঁর এই মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মানুষের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয় (রোমীয় ৫: ৮ আয়াত, ইঞ্জিল শরীফ) দ্রষ্টব্য।
যেহেতু মসীহ্ ছিলেন নিঃষ্পাপ সেহেতু মানুষের পক্ষে তাঁর এই কুরবানী আল্লাহ্ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এ কারণে যারা তাঁর উপর ঈমান এনেছে ও তাঁর প্রভুত্বকে স্বীকার করেছে তারাই জান্নাতে প্রবেশের অংশীদার।
আপনি জীবনে যতই ভুল বা গুনাহ্ করে থাকেন না কেন, যদি আপনি তাঁর উপরে আপনার ঈমান আনতে পারেন তাহলে আপনিও পেতে পারেন নাজাতের আলো। আল্লাহ্ আপনাকেও ক্ষমা করে দেবেন ঈসা আল্ মাসীহের উসিলায়। নিরবে অনুশোচনের অশ্রু নিয়ে আজই আপনি আসতে পারেন তাঁর ভালবাসার প্রাঙ্গনে। আমার প্রার্থনা যেন আপনি স্থির করতে পারেন মন-প্রাণ আর সমর্পিত হতে পারেন আল্লাহর অসীম ভালবাসার আলিঙ্গনে।
আরও জানুন: কিতাবুল মোকাদ্দস পরিবর্তন হওয়ার অভিযোগ |