চমকে উঠেছেন? চমকে উঠবার কথাই বটে। যদি আপনি এবাদতের জন্যে কিংবা নামাযে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করেন আরবীয় সূরা বা আয়াতসমূহ, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহকে বানিয়েছেন “কাফের।” বিশ্বাস হচ্ছে না? আসুন তবে দেখা যাক কি বলে চলেছি আমরা তাঁকে যখন-তখন। আমি জানি আপনি, আমি, আমরা সবাই বহুবার উচ্চারণ করেছি এইসব অবাস্তব কথামালা। কারণ, তা কোরআনের একটি বিশেষ অংশ। সেজন্যে আমার দৃঢ় বিশ্বাস কোরআন পড়ে আমাদের বোঝা উচিৎ কি রয়েছে তার নিভৃত অন্তরালে। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র এর উচ্চারণগত তেলাওয়াত নির্ভর এবাদতকারী। না বুঝেই অনেক অকথ্য ভাষার ফুলঝুরি ছড়াই আবেগপ্রবণ উচ্চারণে। আসুন দেখা যাক আয়াতের বাস্তব চিত্রটি।
قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْكَـٰفِرُونَ (١) لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ(٢) وَلَآ أَنتُمْ عَـٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ (٣) وَلَآ أَنَا۠ عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ (٤) وَلَآ أَنتُمْ عَـٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ (٥) لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِىَ دِينِ (٦) |
সূরা আল-কাফিরুন, ১০৯: ১-৬
বাংলা অনুবাদঃ ১. আপনি বলে দিনঃ হে কাফিরবৃন্দ। ২. আমি তার ‘ইবাদত’ করি না, তোমরা যার ‘ইবাদত’ কর। ৩. এবং তোমরাও তার ‘ইবাদতকারী’ নও যার ‘ইবাদত’ আমি করি। ৪. আর আমিও তার ‘ইবাদতকারী’ নই, যার ‘ইবাদত’ তোমরা কর। ৫. এবং তোমরাও তার ‘ইবাদতকরী’ নও, যার ইবাদত আমি করি। ৬. তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য আমার কর্মফল।
সূরাটির শানে নযূলে বলা হয়েছে যে, কিছু কাফির নবীজির কাছে আপোস প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল এই মর্মে যে, আমরা আপনার মা’বুদ এর ইবাদাত করি এবং আপনি আমাদের দেবতার ইবাদাত করুন। এভাবে একটি মিশ্রিত দীন প্রতিষ্ঠিত হোক। তার জবাবে এই সূরা অবতীর্ণ হয়।
এবার একটু নিরবে চিন্তা করে দেখুনতো কাকে সন্মোধন করে আপনি উচ্চারণ করছেন এসব কথা। এবাদত যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন তো এতদিন কি বলে এসেছেন তাঁকে?
আর আপনার এবাদত যদি আল্লাহ্ ব্যতিত অন্য কারো প্রতি হয়ে থাকে তাহলে আমার বলার কিছু নেই।
এই সূরাটি কাফেরদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। এটা অনেকটা ঝগড়া বিবাদ করা কাফেরদের সঙ্গে। ধরে নিলাম কাফেরদের সাথে মতপ্রার্থক্যের কারণে এ কথা উচ্চারণ করেছেন। অবশেষে এর নিষ্পতি করেছেন এই বলে যে, ৬. তোমার জন্যে তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য আমার কর্মফল। কিন্তু আমরাও নামাযে দাঁড়িয়ে কাফিরদের লক্ষ্য করে এ কথা বলছি নাকি বলছি আল্লাহকে? যদি এসব উচ্চারণ আমরা করি তবে কি তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলা হয় না? পক্ষান্তরে, আমরা মহান আল্লাহ্ তায়ালা কে ‘কাফের’ বানিয়ে ছাড়ি, বারবার, বহুবার।
মজার ব্যাপার হলো— একটি ছোট্ট কথা (আয়াত) কতবার কতরূপে এখানে বলা হয়েছে। ছোট্ট একটি কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কতবার বলা হয়েছে একটু ভেবে দেখুন। এখানে তো ব্যাকারণগত ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয় সহজে। এটা কি আল্লাহর ভাষা হতে পারে? এটা যে কোন বেক্কল বান্দার কাজ তা অত্যান্ত পরিস্পষ্ট। তাই বলছিলাম কোরআন পড়ে তা বোঝা উচিৎ কি লেখা রয়েছে সেখানে। সেইসাথে আমাদেরও দায়িত্ব এর অর্থ উদ্ভাবন করতঃ বুঝে-শুনে তা ব্যবহার করা বা ব্যবহার না করা। কারণ, এর অপব্যবহারের পরিণতি আমাদের প্রত্যেককে ভোগ করতে হবে।
আসুন, কে কাফের আর কে কাফের না তার বিবেচনায় মাথা না ঘামিয়ে পরম স্রষ্টার কাছে ফিরে আসি আনুগত্য আর বিশ্বাস নিয়ে। নির্দ্ধিধায় উচ্চারণ করতে পারেন তাঁর উদ্দেশ্য- প্রভু আমি আমি তব পায়, কর দয়া মোরে এ সময়। আমার বিশ্বাস যদি শ্রদ্ধা আর আনুগত্য নিয়ে আপনি ফিরে আসেন তাঁর দরবারে এই ছোট্ট প্রার্থনায়, আল্লাহ্ পাক তা শুনে চমকে গিয়ে আপনার এই আহবানে সাড়া দেবেন। তিনি শুধু সেই অপেক্ষায় রয়েছেন যেদিন তাঁর বান্দারা অন্ধ ধর্মতার শৃঙ্খল বিদীর্ণ করে ফিরে আসবে তাঁর ভালবাসার চরণতলে।