চতুর্থ বৈপরিত্য বা সাংঘর্ষিক রূপঃ সূরা “ওয়াক্বিয়াহ্” তে বলা হয়েছে যারা ভাগ্যবান এবং যারা বেহেশ্তে প্রবেশ করবে তাদের বিষয়ে। ১৩ এবং ১৪ আয়াতে বলা হয়েছে-“এর বড় দলটি হবে অগ্রগামীদের মধ্য হতে (অর্থাৎ যারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর পূর্বে এসেছে) এবং অল্প সংখ্যক পশ্চাতগামীদের মধ্যেও থাকবে (অর্থাৎ যারা মুহাম্মদ (সাঃ) কে বিশ্বাস করে)। কিন্তু একই সূরায় ৩৯ ও ৪০ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “তাদের অনেকে হবে অগ্রগামীদের মধ্য হতে, এবং অনেকে হবে পরবর্ত্তীদের মধ্য হতে।” এটা একটা বিরাট বৈপরীত্যভ্ত্তিীক ও সাংঘর্ষিক আয়াতের চিত্র।
The commentary of the Baydawi, P.710; Zamakh-Shari in his Kash-Shaf, Part 4, P.458; and the Jalalan, P.453 দ্রষ্টব্য। All of them just say that “….the formers are the nations from Adam to Muhammad and the latters are the people of Muhammad.” অথচ কোরআনে একসময় বলা হয়েছে- “অল্প সংখ্যক অন্যান্যদের থেকে।” আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, বেশী সংখ্যক অন্যান্যদের থেকে আসবে। এটা একটি পরিস্কার সাংঘর্ষিক আয়াত।
পঞ্চম বৈপরীত্য বা সাংঘর্ষিক রূপঃ বিবাহ বিষয়ে কোরআন শিক্ষা দেয় সম্ভাব্য চারজন স্ত্রীলোককে একই সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা যায়। সূরা আন্-নিসা ৪: ৩ দ্রষ্টব্য। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, “আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে বিবাহ করবে।
কিন্তু একই সূরার ১২৯ আয়াতে বলা হয়েছে “তোমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না।” এ বিষয়ে সূয়ুতি তার আল-ইত্কান পুস্তকে বলেন, “প্রথম আয়াতটিতে আমরা বুঝতে পারি যে সমান ব্যবহার করা সম্ভব, অথচ দ্বিতীয় আয়াতে আমরা দেখি যে সমান ব্যবহার করা সম্ভব নয়।” (আল-ইত্কান ফিল উলুমমূল কোরআন, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৫ দ্রষ্টব্য)।
আসলে কোরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় যে মুহাম্মদ (সাঃ) ও অন্যান্য সাহাবী একরামরাও এই সমান ব্যবহার এর অনুশীলন করেছেন এবং আজো তা কোথাও কোথাও অনুশীলন হয়ে থাকে। যদি ১২৯ আয়াতটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে নবীজি নিজে ও তার খলিফারা সবাই তা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন কারণ, তারা সবাই একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছেন। এ জন্যেই কি বলা যায় না যে, ৪: ১২৯ আয়াতটি সাংঘর্ষিক ও বৈপরিত্যে পূর্ণ?
জালালান (পৃষ্ঠা ৮২) এবং বাইদাউই (পৃষ্ঠা ১৩০) অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ) স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন মানবিক দিক থেকে। কিন্তুর্ অন্তরের দিক থেকে তিনি সমান ব্যবহার করতে পারেন নাই তার সব স্ত্রীদের প্রতি। এজন্যে তিনি বলতেন, “হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা কর কারণ এ ব্যাপারে আমার নিয়ন্ত্রণ নেই।”
মুসলিম মনীষীদের মতে আয়েশা ছিলেন নবীজির সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি অন্যান্য স্ত্রীদের মধ্যে। অথচ সাওদা বিন্ত জামেয়া-র প্রতি ছিল তার নিরুত্তাপ দৃষ্টি। এক পর্যায়ে তিনি সাওদার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করার জন্যে স্থির করলেন কিন্তু পরে সাওদা তার নির্দ্ধারিত দিনগুলি আয়েশাকে দিতে মনস্থ করায় তা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখানেই প্রমাণিত হয় স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করা বিষয়ে নবীজির অক্ষমতা। এমনকি তিনি এবিষয়ে নিজ কন্যা ফাতেমার অনুরোধ রক্ষা করতে অক্ষম হন। এমনকি জনসমক্ষে আয়েশার প্রতি নিজের দুর্বলতা তিনি প্রকাশ করেছেন বহুবার আর এ কারণেই বলা যেতে পারে নবী করিম (সাঃ) নিজেও এই আয়াতটি জীবনে কার্যকারী করে যেতে পারেন নাই।
উপসংহারে এটুকু নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে, আজকের কোরআন এর উৎপত্তি ও এর বিস্তৃতির ইতিহাস অত্যান্ত জটিল। যেহেতু ওসমান অন্যান্য কোরআনের পান্ডুলিপিসমূহ পুড়িয়ে ফেলেছেন নিজের কার্যটিকে প্রতিষ্ঠিত করার মানসে, সেহেতু অন্যান্য তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করার অবকাশ আর নাই। এতে করে একটি ব্যাপার অতি পরিস্কার যে, পূর্ণ কোরআন শ’বে কদরের রাতে নাজিল হয় নাই (আংশিক ছাড়া) এবং প্রতিটি কালাম আল্লাহর কাছ থেকে আসে নাই। কারণ, আল্লাহর কালামে কোন সাংঘর্ষিক চিত্র থাকা যেমন অসম্ভব তেমনি তার পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংস্করণ থাকাও অসম্ভব। এটি (কোরআন) অবশ্যই ওসমানের (মানুষের) হাতে তৈরী একটি কিতাব (পুস্তক) যা মোটেও ঐশ্বরিক নয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এতে প্রচুর তথ্যগত ভুল রয়েছে যা আল্লাহর কালামের সাথে অসংগতিপূর্ণ।
উল্লেখ্য যে, ওসমান ছিলেন উমাইয়া বংশের লোক। যার ভাষাগত ভিন্নতা ছিল কুরাইশ গোত্রের সাথে। যদিও তার চেষ্টার ত্রুটি ছিলনা কোরআনকে একই কিতাবী রূপ দেওয়ার। তথাপি এ কথা সত্য যে, তাঁর এই পদক্ষেপের কারণেই আবু বকর ও হযরত আলীর ছেলে তাঁকে নির্বিচারে হত্যা করে এ হেন কাজের প্রতিশোধ নেন। সেই থেকে ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব হযরত আলীর হাতে কিছু কালের জন্য ন্যস্ত হলেও বাস্তবিক তা উমাইয়া বংশের হাতেই চলে যায়। হযরত আলীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া খলীফাত্ব গ্রহণ করেন এবং পরবর্ত্তীতে তার বংশধরদের হাতে কৌশলে তুলে দিয়ে যান ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব। তার গুণধর পুত্র ইয়াজিদ ও তার পরর্ব্ত্তী বংশধরেরা মোট ৭২ বছর ইসলামী ঝান্ডা বহন করেন ও তা কায়েম করেন। এতগুলো বছরে অনেক খাঁটি মুসলিম ইসলাম ছেড়ে চলে যান।
এমন এক সময় ছিল যখন শুক্রবার জুম্মার নামাজের খুৎবায় হযরত আলীকে গালাগালি আর মুয়াবিয়ার প্রশংসা করা ছিল বাধ্যতামূলক। কোরআনকে তখন তারা সরিয়ে রেখে রাজনীতিকে পুঁজি করে টিকে ছিলেন। সেখানে না ছিল সত্যতা না ছিল কোন সমতা। ক্ষমতার লোভেই তারা ইসলামকে কব্জা করেছেন বারংবার।
নবীজির দৌহিত্র ইমান হাসান, হোসেনকে কৌশলে হত্যা করে তাদের ৭২ টি মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুয়াবিয়াপুত্র ইয়াজিদ উল্লাস করেছেন সেই ইসলামের নামে।
আজকেও শতশত বছর পরে সেই একই প্রক্রিয়ায় ইসলাম কামিয়াবী করার প্রচেষ্টায় রয়েছে ইসলামের জঘন্য শত্রুরা। সাধারণ ধর্মভীরু মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে পুঁজি করে আজো তাদের বংশধরেরা আমাদেরকে ইসলামের ট্যাবলেট খাওয়াতে চাচ্ছেন। ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবে পরিচিত হলেও ইসলামের ঝান্ডাবাহী মৌলভীরা তা অশান্তির আগুনে পোড়াচ্ছেন অহরহ। দেখে মনে হয় যেন তারাই ইসলামের চন্ডীদাস আর আমরা তাদের ক্রীতদাস।
আজকের ইসলাম ধর্মের পন্ডিতেরা কোরআন হাদীস থেকে চোখ তুলে “ফেক্রা” জাতীয় তথ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন বেশী মাত্রায়। আর কথায় কথায় ইসলাম গেল, ইসলাম গেল, চীৎকারে ইসলামের হেফাজতে কাছা মেরে, মাঠে নামছেন। অহেতুক বিদ্রোহ আর বোমাবাজিতে তাই তাদের উন্মত্ততা সারা বিশ্বে চোখে পড়ার মতো।
আমার বিশ্বাস ও প্রার্থনা যেন আল্লাহ নিজের অফুরন্ত দয়ায় আমাদের হেদায়েত করেন। আমরা যেন বুঝতে পারি আল্লাহ তায়ালার সত্যিকার রূপ। ইসলামের ম্যারপ্যাঁচে আমরা আর হারিয়ে যেতে চাই না। ইসলাম নয়, আমাদের কাম্য হোক আল্লাহর প্রকৃত শান্তির পথ অনুসন্ধান করা। তাই মহান আল্লাহর দরবারে ছুটে আসা প্রতিটি মানুষ যেন উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয় আল্লাহর মহত্ব ও উদারতা। লা ইলাহা ইল্লালল্লা, তিনি এক এবং অদ্বিতী। তিনিই মহান, তিনিই সর্বজ্ঞানী। আসুন তাঁর কাছে সমর্পিত হই। কোন ইসলাম পূজারী না হই।