কোরআন তেলাওয়াত এর ধরণ নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে বিবাদ ও বিপত্তিঃ
ইসলাম বিশারদদের বিধিসম্মত ক্ষমতা প্রসঙ্গে আল্লামা সূয়ুতি বলেন যে, নবীজির খুব ঘনিষ্ট সাহাবীরা অনেকগুলো আয়াতের বিষয়ে অসম্মত হয়েছিলেন এবং তারা অধ্যায়ের বিন্যাস এর বিষয়েও অসম্মত হয়েছিলেন (ইতকান ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৬ ও ১৮৯ দ্রষ্টব্য)। এতে তিনি বলেন যে, অনেক মনীষীরা অধ্যায়ের বিন্যাস এর বিষয়ে সাহাবীদের মতামতের উপর নির্ভর করেছেন এবং এতে তারা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন বা অসম্মত হয়েছেন। সূয়ুতি স্বীকার করেন যে, হযরত আলী ও হযরত মাসুদ উভয়েই নিজেদের কপি সংরক্ষিত করেছিলেন। উবে ইবন কাবও তার নিজের কপি সংরক্ষিত করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাদের বিবাদ ছিল আয়াত নিয়ে। “পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে” অর্থাৎ “বিসমিল্লাহ্” হির রহমানুর রাহিম” আয়াতটি নিয়েও ঘনিষ্ট সাহাবীদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। কেউ কেউ বলেছেন এটা কোরআনের আয়াত নয়। হযরত ইবন আব্বাস বলেছেন যে, তারা কোরআনের ১১৪টি আয়াত বাতিল করে দিয়েছেন। জামাকসারী, যিনি কাশ-শাফ এর রচনাকারী এই কথা তার পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন (কাশ-শাফ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪-২৬ দ্রষ্টব্য) এবং বলেছেন যারা এই আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে তাদের মধ্যে ইবন মাসুদ ছাড়াও রয়েছে আবু হানিফা, মালিক এবং মদিনা, বসরাও সিরিয়ার তেলাওয়াতকারীগণ।
ইমাম মালিক বলতেন, এইসব আয়াতগুলি উচ্চারণ করে বা নীরবে পড়া যাবেনা কারণ তা কোরআনের অংশ নয়। শেখ কিশ এ ব্যাপারে জামকসারীর সাথে একমত পোষণ করেন যে, এই পার্থক্য নিয়ে ইসলাম বিশারদদের মধ্যে ভীষণ বিবাদ ছিল। কুরতুবী এবং ইবন আরাবীর মতো বিখ্যাত মনীষীরাও মালিকের মতো একই মত প্রকাশ করেছেন, এটা কোরআনের আয়াত নয় (Legal Opinion, Part 9, Page 41-47 দ্রষ্টব্য)। বলাবাহুল্য, শেখ কিশ ছিলেন একজন মিসরীয় ইসলাম বিশারদ।
আল ইতকান পুস্তকে আল্লামা সূয়ুতি বলেন যে, ইবন আব্বাস একদা হযরত ওসমান (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছেন কি কারণে আপনি সূরা আনফাল ও সূরা তাওবাহ্ কে পৃথক না করে একসঙ্গে মিশিয়েছেন, করুণাময় মহান আল্লাহর নামে যিনি দয়াবান আয়াতটি নিয়ে? জবাবে হযরত ওসমান বলেছেন, এই আয়াতটি আল্লাহর নবীর উপর নাজিল করা হয়েছিল। “আনফাল” এর আয়াতটি মদিনায় নাযিলকৃত সূরাদের মধ্যেকার একটি সূরা যা সূরা তাওবার শেষ দিকে ছিল। সেই কারণে আমি মনে করেছি এটা তারই একটা অংশ। এরপর আল্লাহর নবী মারা গিয়েছেন আমাদেরকে তা দেখিয়ে দেবার আগেই। তাই আমি এই দু’টিকে একত্রিত করেছি পৃথক না করে। এভাবে ওসমান ইবন আব্বাসের কাছে স্বীকার করেছেন যে, কোরআনের সংকলন হয়েছে তার নিজের ব্যক্তিগত বিবেচনাবোধের নির্ভরতায়। এখানেই ওসমানের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে। সূয়ুতি তার ইতকান পুস্তকের ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫ তে বলেছেন যে, এর কারণে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিবাদের ঝড় উঠেছিল। কারণ এইসব আয়াত একটি (হরফে) বচনে নয় সাতটি (হরফে) বচনে প্রকাশ হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হতে পারে সাতটি বচন মানে কি? এ বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা প্রয়োজন।
আরও জানুন: কোরআন আবির্ভাবের ইতিহাস (১ম খণ্ড) |
Pingback: কোরআন আবির্ভাবের ইতিহাস (৮ম খণ্ড) | all about Him