কি আছে কা’বাগৃহের অভ্যন্তরে সুনির্দিষ্ট করে কেউ তার উত্তর দিতে অপারগ। কারণটি যেন এক রহস্যে ঘেরা। তবে ইন্টারনেটের বদৌলতে আমরা দেখতে ও জানতে পারি যে, সেখানে রয়েছে তিনটি দণ্ডায়মান মূর্তি যা ঘরটির ছাদ (সিলিং) পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই তিনটি মূর্তিই কি আল-লাত, আল-মানাত ও আল-উজা যার বর্ণনা রয়েছে কোরআনের ৫৩ নম্বর সূরাতে? (সূরা আন-নাজম এর ১৯ ও ২০ দৃষ্টব্য)। কেউ জানে না অবশ্য এর সদুত্তর। কারো প্রবেশের অধিকার নেই সেখানে। তবে শুধুমাত্র সৌদি বাদশাহ ও তার কতিপয় সঙ্গী অত্যন্ত কঠিন রক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে বছরে একবার সেখানে প্রবেশ করেন এর পরিচর্যা ও তদারকিতে।
কতিপয় ইউটিউবার অবশ্য এর গোপন ছবি তুলে হতবাক করেছেন বিশ্বকে। সেইসাথে উন্মোচন করেছেন অনেক জটিল রহস্যের শিরা-উপশিরা। কা’বাগৃহের সুন্দর কালো পর্দার অন্তরালে আজো বিরাজমান তিনটি বিশেষ মূর্তি। অজান্তে তাদেরই এবাদত করতে যুগে যুগে ছুটে আসে আল্লাহর অন্ধ বান্দারা শত শত মাইল অতিক্রম করে হজ্ব নামক গণ-জমায়েতের কাতারে। অতঃপর সাত চক্কর, “হজ্বরে আসওয়াদ” (কালো পাথর) এ চুম্বনের জন্য ধাক্কাধাক্কি এবং সাফা-মারওয়াতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার আশায়।
এই প্রথাটি অবশ্য ইসলাম -পূর্ব মুশরিকদের মধ্যেও প্রচলিত ছিল কিন্তু একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। আজও তা বহাল তবিয়তে রয়েছে বিদ্যমান।
আল্লাহ তায়ালা যিনি মহিমায় পূর্ণ তিনি কেনো ঠাকুর সেজে অবস্থান করবেন কা’বাগৃহের অভ্যন্তরে? কেনোই বা সেখানে প্রাচীন সেই তিনটি মূর্তি হতে হবে তাঁর সঙ্গী? কেনোই বা তিনি হবেন সেই মূর্তিগুলির সঙ্গী? ব্যাপারটি ঘোলাটে বটে!
অন্যদিকে, আল্লাহ যদি সেখানে নাই থাকেন কেনো তবে আমাদের ছুটতে হবে সেদিকে? কেনো আমরা নীরবে অন্বেষণ করতে পারি না আমাদের স্রষ্টার অবয়ব নিজেদের অন্তরের মণিকোঠায়?
স্রষ্টা তো তাঁর সৃষ্টির মাঝেই বিরাজমান। যে অর্থ অপচয়ে আমরা মক্কা-মদিনা ছুটাছুটি করি তার অর্ধেকও যদি খরচ করি দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে যারা সুস্বাদু খাদ্য থেকে বঞ্চিত আর অবহেলিত, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তা লক্ষ্য করবেন। মানুষকে ভালবাসা আল্লাহকে ভালবাসার প্রথম শর্ত। মানুষ তাঁরই আদলে তৈরি। অথচ সেই কাজটি করতে আমাদের যত অবহেলা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা এসব সাধারণ কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অযথাই ছুটে চলি মক্কা-মদিনা মুখি জনস্রোতে। আর কক্ষনো চিন্তা করেও দেখিনা আমরা কোন্ মূর্তির পূজারী।