আমরা অতি মনোযোগসহকারে কোরআন পড়ি বটে, তবে এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি না কখনো। কেনো করি না তার যথাযথ কারণটি অজ্ঞাত সবার কাছে। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের জানা উচিত কি পড়ছি আমরা কোরআনের আয়াতের মূর্ছনায়।
সুমধুর আরবী উচ্চারণে অনেকে মুগ্ধ হলেও আমার মনে হয় না আল্লাহ তায়ালা তাতে সন্তুষ্ট হন। কারণ, আমরা যদি তাঁর আয়াতের অর্থই না বুঝি তাহলে কি লাভ হয় তাতে?
অত্যান্ত মনোযোগসহকারে পড়ছিলাম ৩৩ নং সূরা আল-আহ্যাব, পড়ছিলাম এর বাংলা অনুবাদসকল। বুঝতে চেয়েছিলাম আল্লাহর দিক্ নির্দেশনাসমূহ যা তিনি বলেছেন এই সূরার আয়াতে। কিন্তু হঠাৎ আমার চক্ষু স্থির হলো ৫২ নং আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যায়। এখানে বলা হয়েছে– “এরপর আপনার জন্য আর কোন নারী হালাল নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে আপনার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে স্বতন্ত্র। আল্লাহ সর্ব-বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।”
এরপর আপনার জন্য আর কোন নারী হালাল নয়…..। ধমকের সুরে এ কথাটি বলার প্রয়োজনটি কেনো হয়েছিল? তবে কি মুহাম্মদ (সাঃ) আরো কোন নারীকে হালাল করার পরিকল্পনা করছিলেন? ইতিমধ্যে তিনি তার পুত্রবধু যয়নবকে বিবাহ করে ঘরে তুলেছেন আর তীব্র সমালোচনার ঝড় তুলেছেন আরবের প্রাঙ্গণে। তাছাড়া, সে সময়ে তার নয় জন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তার চোখ পড়েছিলো অন্য নারীর সৌন্দর্যে?
এখানে অতি স্পষ্টকরে বলা হয়েছে- “যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে।” কিন্তু কেনো? মনে খট্কা লাগার মতো কথা বটে। আমার প্রশ্ন হলো- কেনো নবী আরো নারীকে হালাল করে ঘরে তুলতে চেয়েছিলেন?
তার এই নারী অসক্ততার সূত্রপাত কোথায়? তবে কি নবীদের মাঝেও নারী লিপ্সুতার স্রোত বিদ্যমান? আর কোন নবীর বিষয়ে তো এমনটি শোনা যায় না! শুধুমাত্র আরবীয় এই তথাকথিত ও স্বঘোষিত নবীর জীবন বৃত্তান্তে খুঁজে পাওয়া যায় এই নারীলিপ্সুতার চিহ্ন। এ কারণেই, বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, আমাদের দেশের আল্লাহর বান্দারা যারা এই নবী অনুসারী, তারা কেনো এত নারী পিপাসু। তারা যত্রতত্র, যেখানে-সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে নারীদের সৌন্দর্য ভক্ষণে। তাদের কাছে নারীর সম্মান, শ্রদ্ধা ও মমতার বিষয়টি অর্থহীন। এক সরকারী পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ছয়শত নারী ধর্ষিত হয়েছে এদেশের মাটিতে ২০২১ সালে। কোনো সভ্য দেশে এ ঘটনা ঘটলে সংঘাতিক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু আমরা নির্বিকার।
হাদীসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার পুরুষত্বের সক্ষমতা সংক্রান্ত বর্ণনা। হাদীস নং (৪৮৩৫) হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আনাস বিন মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একই রাতে সকল স্ত্রীর সাথে মিলিত হতেন এবং এসময় তার সর্বমোট নয়জন স্ত্রী ছিল (সহীহ বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ৭৩২ দ্রষ্টব্য)।
অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে ঠিক এভাবে। হাদীস নং (২৬১) হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দিবা-রাত্রির কোন এক সময়ে পালাক্রমে তার সকল স্ত্রীর কাছে গমন করতেন। তারা ছিলেন এগারজন। জিজ্ঞেস করা হল, তার এত শক্তি ছিল? হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা বলাবলি করতাম, তাকে ত্রিশজন পুরুষের শক্তি দেওয়া হয়েছে। সাঈদ কাতাদাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, আনাস আমাকে নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন সহীহ বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ৭৬ দ্রষ্টব্য)।
মাত্র ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে আয়েশাকে একান্ন বছর বয়সে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখা ও পরে (আয়েশার) নয় বছরের মাথায় তাকে স্ত্রীরূপে বাসর ঘরে আবদ্ধ হতে বাধ্য করে কি এক নির্লজ্জভাবে জায়েজ করা হলো তার বৃত্তান্ত হয়েতো সবারই জানা। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে এটি এক শিশু নির্যাতন ও অমানুষিক আচরণের অন্তভুর্ক্ত। এটিও তার নারীলিপ্সুতার এক বিকৃত রূপ। চুয়ান্ন বছর বয়সে নয় বছরের বালিকাকে বিয়ে নামক প্রহসনে জড়িয়েছেন এই কথিত নবী।
মারিয়া কিবতিয়া নামক হাফ্সা-র সাহায্যকারীকে ধর্ষণ করেও তিনি নবীত্বের নাম রক্ষা করেছেন। সূরা তাহ্রীম এ রয়েছে এর বিশদ বর্ণনা। অত্যান্ত কৌশলে, যদিও তা গোপন রাখা হয়েছে বঙ্গানুবাদে তবুও তাফসীর কারকেরা ব্যাপারটি কিন্ঞ্চিত ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছেন। হাফ্সা-কে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি তারই বিছানায় তুলে ভক্ষণ করেছেন মারিয়াকে। ফলশ্রুতিতে মারিয়ার ওরসে জন্ম নেয় শিশু ইব্রাহীম। ব্যাপারটি হাফ্সা-র কাছে হাতে-নাতে ধরা পড়ে গেলে হুজুর মহাশয় তাকে শত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন। তা সত্ত্বেও, হাফ্সা তার অতি ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও নবীর কনিষ্ঠ স্ত্রী আয়েশাকে জানিয়ে দেয় আসল ঘটনাটি। তখন থেকেই তার স্ত্রীদের মাঝে সূচনা হয় বিদ্রোহের অনল।
এছাড়া, তার পোষ্যপুত্র বধু “যয়নব” কে বিবাহ করার বিষয়টি হয়তো সবারই জানা। এমন কাজটি এক গর্হিত অপরাধ সভ্য জগতে। পালকপুত্র ও আসল পুত্র দু’টিই সমান মর্যাদার, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ও সামাজিক আচারে। কিন্তু নবীজি যখন তার পুত্রবধু যয়নবের রূপে কাতর হয়ে পড়লেন তাকে কিন্ঞ্চিৎ বিবস্রবস্থায় দেখে, তখন তার কাছে সামাজিক মর্যাদা বা পুত্রের প্রতি ভালবাসা দু’টোই বিলোপ পেয়েছিল তার পৌরুষত্বের নিলর্জ্জ আচরণে। অতএব, ছেলেকে বাধ্য করা বিবাহ বিচ্ছিন্নতায় এবং সেইসাথে নিজের ঘরণী করে ঘরে তোলার নেয়ামতটি জাহির করলেন ইসলামের ইতিহাসে। অবশ্য আল্লাহর কাঁধে বন্দুক রেখে তা শিকার স্বম্ভব হয়েছে। মাশাআল্লাহ! একেই বল “কথিত নবী।” কথায় বলে- “মানুষে করলে হয় ফষ্টিনষ্টি আর কৃষ্ণ করলে হয় লীলা।”
আয়েশা ঠিকই বলেছেন- আপনার আল্লাহ সবকিছুই করেন আপনার কল্যাণে। “আমি দেখতে পাচ্ছি, আপনার প্রতিপালক আপনাকে খুশী করার জন্য আপনার মর্জি মুতাবিক (হুকুম নাযিল করার ক্ষেত্রে) জলদি করেছেন” (সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নং ৪৭৪১, পৃষ্ঠা ৭১৯ দ্রষ্টব্য)। কথাটি তিনি (আয়েশা) অবশ্য বলেছিলেন যখন ‘খাওলা বিনতে হাকীম’ নবীজির খালা নিজেকে নবীজের কাছে বিবাহের জন্য আত্নসমর্পণ করেছিলেন।
সূরা আহ্যাব এর মতো অজস্র ঘটনা আছে কোরআনের পাতায় পাতায়। আর সেটাই আমরা পড়ে যাই গজলের ভঙ্গিতে আর বয়ান করি ভিন্নভাবে।
দুঃখের বিষয়, এসব কর্মকান্ডের বর্ণনা আরবীতে বয়ান করে আমরা ইসলামের হাকীকতের শিক্ষা দিচ্ছি দেশবাসীকে। কোনো তাফসীকারক কি ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করে এর সত্য ব্যাখ্যা করতে পারবেন জন-সম্মুখে? না পারবেন না। শুধু পারবেন সত্যটি আড়াল করার অভিপ্রায়ে অপ্রাসঙ্গিক ফতোয়ার অবতারণা করতে। তাই বলছিলাম, কোরআন পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন কি আছে এর পাতায় পাতায়। পড়ুন, জানুন আর প্রত্যাখান করুন ইসলামের শয়তানী দানবকে।