শিরোনামটি দেখে হয়তো আপনি চম্কে উঠবেন। ভাববেন এ কেমন কথা! আমার এত নামাজ রোজার কি হবে তাহলে? আমিতো হজ্জ্বে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছি। তবুও কেনো আমার জন্য কোন পথ খোলা নেই বেহেশ্তে প্রবেশের।
আরে ভাইজান, আল্লাহ তো আর আপনার কথায় উঠেন-বসেন না। তাঁর একটি নির্দ্ধারিত পথ রয়েছে, নীতি রয়েছে অনুসরণ করবার, তাঁকে যত্রতত্র বেচা-কেনা করা যায় না। আজকাল যারা তাহেরীর গানে গানে আন্দোলিত হন কিংবা আল্লামা সাঈদীকে দেখেন চাঁদের কোনায়, তারাও কি যেতে পারবেন বেহেশ্তের কাছাকাছি? মোটেও না।
কারণ, কোরআনের কোথাও স্পষ্ট করে বলা হয় নাই বেহেশ্তে ঢোকার অনুমতি কারা পাবেন। সি.এন.জি নামক ছোট্ট যানটির পেছেনে লেখা “নামায বেহেশ্তের চাবি” কথাটিতে যদি থেকে থাকে আপনার নির্ভরতা তাহলে জানবেন যে, সেটি কোরআনের কোন আয়াত বা উক্তি নয়। এটি শুধু কতিপয় হুজুরের কেরামতিজনিত উক্তি।
আসুন না দেখি কোরআন কি বলে এ ব্যাপারে। সূরা আল-বাক্বারাহ ৬২ নং আয়াতে বলা হয়েছে ঠিক এভাবে-
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلنَّصَـٰرَىٰ وَٱلصَّـٰبِـِٔينَ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (62)
বাংলা অনুবাদঃ “নিঃসন্দেহে যারা বিশ্বাস করে এবং যারা ইয়াহুদী আর খ্রীষ্টান ও সাবিঈন- তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের প্রতি পালকের কাছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”
একই কথার পুনরাবৃত্তি রয়েছে সূরা আল-মায়িদাহ্ এর ৫: ৬৯ আয়াতে।
যদি উল্লেখিত আয়াতগুলি আপনি ভালভাবে পড়ে থাকেন তাহলে তা স্পষ্টত প্রকাশ করে যে, ইয়াহুদী অর্থাৎ বণী ইসরাইলদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবেনা। কারণ, এটি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে পাওয়া পুরস্কার। নিঃসন্দেহে বণী ইসরাইল জাতি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আর ভুলে গেলে চলবে না তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর বা উত্তরসূরী। ইব্রাহীম (আঃ), মুসা (আঃ) সহ সব নবীদের অবির্ভাব ঘটেছে এই বণী ইসরাইল থেকে। তাই আমরা যখন মৌলভীদের প্ররোচনায় তাদের (ইসরাইল জাতি) অকথ্য ভাষায় গালাগালি করি, তখন তা আমাদের জীবনেই রোপিত হয় অভিশাপের মত একে একে।
দ্বিতীয়তঃ যাদের কথা বলা হয়েছে তারা হলো খ্রীষ্টান বা যীশু খ্রীষ্টের উম্মত বা অনুসারী তাদেরও কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবেনা। এটা অনস্বীকার্য যে, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের (তা সে একদিনের হোক বা বহুদিনের) আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রয়েছে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না, আর যদি বলা হয় সৎকাজ বিষয়ে তাহলে বলতে হবে তাতে তাদের আর কোন জুরি নেই। সারা বিশ্বের দুর্যোগ ও দূর্ঘটনায় কারা প্রথম হস্ত প্রসারিত করে সাহায্যের ঝুড়ি নিয়ে তা আমাদের সবারই জানা। তাদের ভালবাসা আর দয়ার বন্যায় ভেসে গেছে অনেক দরিদ্র, যুদ্ধ-বিধস্ত জাতি, দেশ। তারা এ কাজটি করে কোন প্রাপ্তিভোগের আশায় নয়, বরং স্বতঃস্ফুর্ত ভালোবাসার আবেগে। এই খ্রীষ্টান জাতিও বস্তুতঃ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর। হযরত ঈসা আল-মাসীহ্ বণী ইসরাইল জাতি থেকেই আগত। এদেরও উৎস সেই বণী ইসরাইল।
তৃতীয়তঃ যাদের কথা এ আয়াতটিতে বলা হয়েছে তারা হলেন সাবিঈন অর্থাৎ যারা এই খ্রীষ্টিয় সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বাস বা ঈমানের ভিত্তিতে। ‘সাবিঈন’ বহুবচন, সাবী এক বচন, অর্থঃ যে নিজ দ্বীন প্রত্যাখান করে অন্য দ্বীন বা ঈসাহী দ্বীন কবুল করে। এই সাবিঈনদেরও কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারাও আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সেটাই তাদের ঈমানের ভিত্তি।
এটাই যদি কোরআনের আয়াত হয়ে থাকে তাহলে কেনো আমরা অহরহ তাদের বক্রদৃষ্টি দিয়ে দেখি আর কৌতুক মশ্করা করি তাদের বিরুদ্ধে? করি এ কারণে যে, আমরা জানি না আমাদের অস্তিত্ত্বটি কোথায়। আমাদের কথা অর্থাৎ ইসলাম অনুসারীদের মাল-মশলা এখানে উধাও কেনো সে ব্যাপারে ইসলামী পান্ডিত্বের বয়ান কেউ শোনেনি কখনো। এই আয়াতে অন্য সবার কথা উল্লেখ থাকলেও আল্লাহর খাস বান্দাদের (ইসলাম অনুসারীদের) কথা উল্লেখ নাই। কিন্তু কেনো? তারা কি তুলসী পাতায় ধোয়া জীব?
অনেকেই হয়তো বলবেন মুহাম্মদের অনুসারীদের বেহেশ্ত নিশ্চিত। তাদের বিষয়ে কোন বাধা নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আপনি জানেন কোরআনে এমন কোন গ্যারান্টি নেই কোথাও? আরে ভাই আপনি-আমি তো দূরের কথা। আমাদের হুজুরের কি অবস্থা হবে তাওতো তিনি নিজেই জানেন না। আসুন শোনা যাক তার মুখ থেকে নিজের বিষয়ে যা তিনি বয়ান করেছেন আমাদের জন্য।
কোরআনের ৭২ নং সূরা হলো “আল-জিন্ন।” এই সূরার ২১ ও ২২ আয়াতটি লক্ষ্য করুন। বলা হয়েছে-
قُلْ إِنِّى لَآ أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا (21) قُلْ إِنِّى لَن يُجِيرَنِى مِنَ ٱللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلْتَحَدًا (22)
বাংলা অনুবাদঃ “বলুনঃ আমি তোমাদের কোন ক্ষতিসাধনেরও ক্ষমতা রাখিনা এবং কোন হিত সাধনেরও না। বলুনঃ আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাকে কেউই রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতিরেকে আমি কোন আশ্রয়ও পাব না।”
এটাই যদি হয়ে থাকে কোরআনের বর্ণনা তাহলে কোন্ ভরসায় আপনি চেয়ে আছেন উর্দ্ধপানে? ভেবেছেন নবীজির কাঁধে ভর করে পার হয়ে যাবেন ফুল সেরাতের পুল? তাহলে অপেক্ষা করুন তার সাথে নিজের শাস্তির অদ্যোপান্ত অবলোকন করার। তিনি নিজেই জানেন না তার কি হবে বিচার দিনে।
বস্তুতঃ উল্লেখিত সম্প্রদায়সমূহের সবাই চলেছেন বেহেশ্তের পথে। কারণ, তাদের হয়ে তাদের পক্ষে ঈসা-আল-মাসীহ্ প্রায়চিত্ত্ব করেছেন নিজেকে ক্রুশীয় মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। সেই কারণে আল্লাহ পাক তাদের সব অবাধ্যতা ও পাপসমূহ মুছে দিয়েছেন। আর প্রস্তুত করেছেন বেহেশ্তের উম্মুক্ত দরজা। আর তাঁকে (ঈসাকে) অগ্রাহ্য করণের দায়ে মুহাম্মদীয় অনুসারীদের জন্য অবারিত রেখেছেন “জান্নাতুল জাহান্নামের” দরজা যেখানে সবাই নিমজ্জিত হবে একে একে।
তবে একটি পথ আজো উন্মুক্ত আমাদের সবার জন্যে যতদিন জীবন রয়েছে দেহে। আমরা আমাদের বিবেচনায় সঠিক পথটি বেছে নিতে পারি জীবনের শেষ প্রান্তে যাবার পূর্বেই।
আমরা অবশ্যই বেছে নিতে পারি জীবনের (অনন্ত জীবন) পথ যা শুধু ঈসা আল-মাসীহে্র প্রতি ঈমান ও আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে, আর পেতে পারি আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা ও পুরস্কার। অন্যদিকে, এ আহ্বানকে উপেক্ষা করে প্রস্তুত হতে পারি জাহান্নামের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার। সিদ্ধান্তটি একান্তই আপনার।